India Coronavirus (Covid-19) Cases: মঙ্গলবার, ১৬ জুন, দেশে অকস্মাৎ করোনায় মৃতের সংখ্যা ছাড়ায় ২,০০০, যা তার আগের দিনের তুলনায় (যেদিনও মৃতের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি ছিল) প্রায় পাঁচগুণ বেশি। অবশ্যই একদিনের খতিয়ান নয় এটি, বরং এক সুবৃহৎ তথ্য সমন্বয় কার্যক্রম বা 'ডেটা ম্যাচিং এক্সারসাইজ'-এর ফলাফল। এই সমন্বয়ের কারণে প্রকাশ্যে এসেছে এতদিন পর্যন্ত নথিভুক্ত না হওয়া অসংখ্য মৃত্যু।
স্রেফ মুম্বই থেকেই এসেছে প্রায় এক হাজার মৃত্যুর খবর, যেগুলির কথা এযাবৎ জানা যায় নি। দেশে করোনা মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষে থাকা মহারাষ্ট্র থেকে ১,৪০০-র বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে, তবে মঙ্গলবার মারা গিয়েছেন ৮১ জন, বাকিগুলি আগের অ-নথিভুক্ত মৃত্যু। মহারাষ্ট্রে বর্তমানে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫,৫৩৭, যেখানে তালিকার শীর্ষে মুম্বই (৩,১৬৭), তারপর থাণে (৬৪১) এবং পুণে (৫৮৮)।
মঙ্গলবার ৪৩৭ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে দিল্লি, যার ফলে রাজধানীতে মৃতের সংখ্যা বর্তমানে ১,৮৩৭। দিল্লি প্রশাসন জানিয়েছে যে 'ডেথ অডিট কমিটি' দ্বারা চিহ্নিত সমস্ত করোনা-সংক্রান্ত মৃত্যুর হিসেব মিলিয়ে নির্দিষ্ট হয়েছে এই সংখ্যা।
তামিলনাড়ুতেও বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। সোমবার এবং মঙ্গলবার সেরাজ্যে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪৪ এবং ৪৯। অথচ এর আগে দৈনিক মৃতের সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ বলা হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: ঘুমের সময় বাড়লেও সুনিদ্রা হয়নি লকডাউনে
তবে এও মনে রাখা প্রয়োজন যে গত দু'দিনের প্রয়াসের ফলে যেমন মৃতের সংখ্যায় দৃশ্যমান অসঙ্গতি দূর করা গিয়েছে, এখনও বিভিন্ন রাজ্যের তথ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা কাটে নি। করোনা-পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হলেই তাকে সরাসরি করোনা-জনিত বলতে অনিচ্ছুক একাধিক রাজ্য, যার ফলে বসছে ডেথ অডিট কমিটি, যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে মৃত্যুর প্রধান কারণ করোনাভাইরাসই, নাকি পুরনো কোনও পার্শ্বরোগ। এক এক সময় মৃত্যু নথিভুক্ত করতে পেরিয়ে যাচ্ছে বেশ কয়েক দিন, এমনকি এক সপ্তাহের বেশি। ডেথ অডিট কমিটিকে ক'টি মৃত্যু খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে, বা কখন, তা জানাচ্ছে না কোনও রাজ্যই। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা কমিটির বিশেষজ্ঞদের পক্ষেও বড় সহজ কাজ নয়, যার ফলে তাঁদের রায়কে প্রায়শই চ্যালেঞ্জ জানানো হচ্ছে।
গত দু'দিনে যত মৃত্যু প্রকাশ্যে এসেছে, তার ফলে ভারতে COVID-19 ভাইরাসে মৃত্যুর হার ২.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৪ শতাংশে। তা সত্ত্বেও অনেক দেশের তুলনায় এখনও এই মৃত্যুহার বেশ কম, বিশেষ করে ৫.৩ শতাংশের আন্তর্জাতিক হারের তুলনায় তো যথেষ্ট কম। তবে মুম্বই এবং তিরুবনন্তপুরমের কিছু গবেষক বলছেন, মৃত্যুহার গণনার যে প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হচ্ছে, তা বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন নয়, ফলে COVID-19 ভাইরাসে বাস্তবে মৃতের হার আরও অনেকটাই বেশি হতে পারে।
এই মৃত্যুহার, যাকে 'কেস ফেটালিটি রেশিও' (case fatality ratio বা CFR) বলা হয়, তা গণনা করা হয় মোট মৃতের সংখ্যা দিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যাকে ভাগ করে একশো দিয়ে গুণ করে। উদাহরণ, ৩.৪৩ লক্ষ সঙ্ক্রমনেবং ৯,৯৯০ টি মৃত্যুর নিরিখে সোমবার ভারতের CFR ছিল ২.৯১ শতাংশ।
তবে মুম্বইয়ের ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ পপুলেশন সায়েন্সেস (IIPS), যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত একটি সংস্থা, এবং তিরুবনন্তপুরমের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (CDS), যা কেরালা সরকার এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ দ্বারা সমর্থিত, এই দুইয়েরই গবেষকরা বলছেন যে মৃত্যুহার গণনার এই পন্থা ভুল।
আরও পড়ুন: র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কী?
আপাতত রিভিউ-এর জন্য প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে তাঁরা দেখিয়েছেন, আজ যাঁদের মৃত্যু হছে, তাঁদের সংক্রমণ ঘটেছিল কিছুদিন আগে। তাছাড়াও, আজ যদি হঠাৎ সংক্রমণ বন্ধ হয়ে যায়, তবু বর্তমানে চিকিৎসাধীন অথবা সংক্রমিতদের মৃত্যু অব্যাহত থাকবে আগামী কিছুদিন। সুতরাং, তাঁদের বক্তব্য হলো যে মৃত্যুহার নির্ধারণ করতে বর্তমান আক্রান্তের সংখ্যা ব্যবহার না করে আরও পুরনো সংখ্যা ব্যবহার করা উচিত। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণীয় সময়ের ব্যবধান হলো ১৪ দিন, এমনটাই তাঁদের দাবি।
সোজা কথায়, সঠিক মৃত্যুহার পেতে গেলে আজকের মৃতের সংখ্যার হিসেব করা উচিত ১৪ দিনের আগের আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে। সেই মাপকাঠি অনুসরণ করলে ভারতের বর্তমান মৃত্যুহার এক লাফে বেড়ে হয়ে যায় ৫.০৩ শতাংশ। এই গবেষণাপত্রে ১৪ মে পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে, এবং সেই হিসেবে মৃত্যুহার ৩.২৩ শতাংশ থেকে এক ধাক্কায় হয়ে যাচ্ছে ৮.০১ শতাংশ।
IIPS-এর উর্বরতা বিষয়ক বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জয় মোহান্তি বলছেন, "বর্তমান মৃত্যুহার বা কেস ফেটালিটি রেশিও ভিত্তিহীন এই কারণে যে ১৪ দিনের ব্যবধানের তত্ত্ব প্রয়োগ করলে ভারতের মৃত্যুহার বর্তমান হারের প্রায় দ্বিগুণ। তিনি তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে প্রখ্যাত জার্নাল 'ল্যান্সেট'-এ প্রকাশিত একটি গবেষণার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন, যা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের মৃত্যুহার গণনা করে।
এছাড়াও আরেকটি সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে বর্তমান CFR বা মৃত্যুহারকে ভ্রান্ত মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানী এবং মহামারী বিশেষজ্ঞরা বলেন, CFR হলো মোট আক্রান্তের অনুপাতে মৃতের সংখ্যা, স্রেফ টেস্টিং-এর মাধ্যমে আবিষ্কৃত আক্রান্তদের নয়। যেহেতু আক্রান্তদের এক বড় অংশ উপসর্গহীন বলে মনে করা হচ্ছে, এবং সকলের পরীক্ষা হচ্ছে না, মোট সংক্রমিতের সংখ্যা নির্ধারণ করা সহজ নয়, বিশেষ করে যেখানে এখনও রোগ ছড়াচ্ছে। মহামারী-পরবর্তী সময়ে আসল আক্রান্তের সংখ্যা নির্ধারণ করার নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি রয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। কিন্তু শুধুমাত্র পরীক্ষিত পজিটিভ কেস-এর নিরিখে CFR নির্ধারণ করলে মৃত্যুহার অনেকটাই বেশি মনে হবে। বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা, মহামারী পর্ব শেষ হলে দেখা যাবে যে এই হার এক শতাংশেরও অনেক কম।
মঙ্গলবার অতিরিক্ত মাত্রায় মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও নতুন সংক্রমণের মাত্রায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা যায়। এর আগের তিন দিন দেশে দৈনিক ১১ হাজারেরও বেশি নতুন সংক্রমণ আবিষ্কৃত হয়, কিন্তু মঙ্গলবার সেই সংখ্যা ছিল আন্দাজ ১০,৬০০। সংক্রমণ তালিকার শীর্ষে থাকা মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, এবং দিল্লি থেকেও আসে কমতে থাকা নতুন সংক্রমণের খবর।
গত কয়েকদিন যে অঞ্চলে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সংক্রমণ, সেই লাদাখে ফের একবার ১০০-র বেশি সংক্রমণ ধরা পড়েছে। হিমালয় অঞ্চলের এই কেন্দ্রশাসিত এলাকায় বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪৯, যার মধ্যে ৫১৪ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে স্রেফ গত পাঁচদিনে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন