ভারতের সরকারি অবস্থান হল, এখনও কোনও কমিউনিটি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। মোট ১০ হাজারের বেশি জনকে যথেচ্ছভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে যাঁদের ভ্রমণ বা সংস্রবের ইতিহাস নেই।
ভারতের সরকারি অবস্থান হল, এখনও কোনও কমিউনিটি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। মোট ১০ হাজারের বেশি জনকে যথেচ্ছভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে যাঁদের ভ্রমণ বা সংস্রবের ইতিহাস নেই।
গত কয়েক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশ আতঙ্কে ভুগছে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি সংক্রমণ নিয়ে। কমিউনিটি সংক্রমণ কী, এই পর্যায়ে অতিমারী কোন অবস্থাতেই বা রয়েছে!
Advertisment
করোনাভাইরাস- অতিমারীর পর্যায়গুলি কী কী?
কোনও রোগের অতিমারীর প্রথম পর্যায় হল, একটি মহামারীর ঘটনাচক্রে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া। একটি সংক্রমণ যদি হাতে গোনা কয়েকটি দেশে ছড়ায়, তবে তাকে অতিমারী বলে গণ্য করা হয় না। চিনের বাইরে প্রথম কোভিড-১৯ রোগীর কথা জানা গিয়েছিল থাইল্যান্ডে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাইরাসে স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হতে থাকে। স্থানীয় সংক্রমণ মানে হল কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সংক্রমণ ছড়ানো ও সেই ভাইরাসের পরবর্তী কোনও ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণ স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়।
তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ হল কমিউনিটি সংক্রমণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য অনুসারে কমিউনিটি সংক্রমণের সংক্রমণের শৃঙ্খলের মাধ্যমে নিশ্চিত রোগীদের সংখ্যা নিরূপণ করা যায় না বা শ্বাসের নমুনা পরীক্ষায় নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। সহজ ভাষায়, ভাইরাস এখন কমিউনিটির মধ্যে ছড়াবে, এবং যাঁদের সংক্রমিত স্থানে ভ্রমণের ইতিহাস নেই বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শেও আসেননি, তাঁরাও সংক্রমিত হতে থাকবেন। এ ঘরনের সংক্রমণ যখন শুরু হবে, তখন সম্পূর্ণ লক ডাউনের প্রয়োজন, কারণ এই সময়ে প্রতিটি মানুষই সংক্রমণ ছড়াতে পারেন।
কমিউনিটি ট্রান্সমিশন সাধারণত স্থানীয় ভাবে ঘটে থাকে এবং একটি রাজ্য তার রেকর্ড রাখতে পারে। যেমন, ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ডে কমিউনিটি সংক্রমণ ঘটেছে।
প্রতিটি অতিমারীর চতুর্থ পর্যায়ও রয়েছে। এ পর্যায়ে কোনও কোনও দেশে তা এনডেমিকের আকার ধারণ করে। ভারতে যে সব এনডেমিক, অর্থাৎ বছরের যে কোনও সময়ে প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে এমন রোগের মধ্যে রয়েছে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গি।
কোনও প্রাদুর্ভাবকে এ ভাবে পর্যায়ভুক্ত করলে কি সুবিধে হয়?
অতিমারীর এই পর্যায় সারা পৃথিবীতেই মান্য। তার কারণ হল, আজকের গোলোকায়িত পৃথিবীতে নির্দিষ্ট বাগধারা থাকলে সমস্ত দেশগুলির প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়।
পর্যায়ভাগের ফলে সমস্ত দেশ নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করতে পারে।
যেমন ভারত শুরুতেই চিনে ভ্রমণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। পরে ইউরোপিয় দেশ থেকে সংক্রমণ আমদানি শুরু হবার পর, সে দেশের বিমান ও ভিসার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এখন ভারতে সব দেশ থেকেই আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, কারণ মোট ১৭৭টি দেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনাও ঘটছে, যে কারণে অনেকে সরকারি কোয়ারান্টিনে রয়েছেন, রয়েছেন বাড়ির কোয়ারান্টিনে বা কমিউনিটির নজরদারিতে। ভারতের সরকারি অবস্থান হল, এখনও কোনও কমিউনিটি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। মোট ১০ হাজারের বেশি জনকে যথেচ্ছভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে যাঁদের ভ্রমণ বা সংস্রবের ইতিহাস নেই। তাঁদের কেউই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হননি।
এই পর্যায়গুলি কি স্বয়ংসম্পূর্ণ?
বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা সাধারণভাবে নিখুঁতই হয়ে থাকে, তবে এ ব্যাপারে কাণ্ডজ্ঞানও প্রয়োজনীয়। যেমন অতিমারীর পর্যায় বদল এক দিনে ঘটতে পারে, কিন্তু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা থেকে এ ঘোষণা করা উচিত নয়।
সে কারণেই কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রক আগ্রায় কমিউনিটি সংক্রমণের ব্যাপারে বিবৃতি দিলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন এটা কমিউনিটি স্তরে স্থানীয় সংক্রমণ। অচিহ্নিত উৎস থেকে আরও বেশি প্রকোপের ঘটনা না দেখা দিলে তাঁরা একে পরবর্তী পর্যায় বলে ঘোষণায় নারাজ।
গ্রহের প্রায় সব দেশেই এই অতিমারী ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় সর্বত্রই হয় এ রোগ আমদানি হয়েছে নয়ত স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেছে। কমিউনিটি সংক্রমণ যেখানে ঘটেছে তার মধ্যে রয়েছে চিন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান। চিনের হুবেইতে সংক্রমণ যখন সাঘাতিক পর্যায়ে তখন সেখানে লক ডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। ইতালিতেও এখন সে বিধি কার্যকর করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বিনা খরচে পরীক্ষা ও চিকিৎসার ফলে সেখানে সংক্রমণ কমে এসেছে।
কীভাবে প্রতিরোধ করা হচ্ছে, তার উপর দাঁড়িয়েই রোগ ছড়িয়েছে বিভিন্ন দেশে। চিনে প্রথম ঘটনা নভেম্বরে ঘটেছে, এ খবর যদি সত্যি হয়, তাহলে তারা প্রায় এক মাস পরে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে, যা ইতিমধ্যেই সারা বিশ্বের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ততদিনে কমিউনিটি পর্যায়ের সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে ইতালি কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে দেয়।
ভারতে কতদিনের মধ্যে কমিউনিটি পর্যায়ের সংক্রমণ শুরু হতে পারে?
কেউ জানে না। স্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগের সচিব তথা আইসিএমআর-এর ডিজি ডক্টর বলরাম ভার্গব বলেছেন কমিউনিটি সংক্রমণ অবশ্যম্ভাবী, অন্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইতিমধ্যেই হয়ত তা শুরু হয়ে গিয়েছে।
ইনস্টিট্যুট অফ জিনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির ডিরেক্টর ডক্টর অনুরাগ আগরওয়াল বলেছেন," ভারতে এখনও অবধি আমরা প্রত্যেক রোগির নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা পেয়েছি, ফলে কমিউনিটি সংক্রমণের কথা বলা যাচ্ছে না। তবে এখনও অনেক পথ বাকি।"