Advertisment

কোভিড-১৯ আঘাত হানতে পারে ঘ্রাণশক্তিতেও?

ইএনটি সহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছুদিন ধরেই ঘ্রাণশক্তিহ্রাস বা হীনতাকে উপসর্গের তালিকায় যুক্ত করতে বলছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Corona Nasal

এর আগে বিভিন্ন দেশ থেকে ঘ্রাণশক্তি হ্রাসের ব্যাপারে রিপোর্ট এসেছে

এ সপ্তাহের গোড়ায় মার্কিন সংস্থা সিডিসি কোভিড ১৯-এর উপসর্গে ঘ্রাণ বা স্বাদের হানির প্রসঙ্গ যুক্ত করেছে। বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে ঘ্রাণশক্তিহানি পরিচিত উপসর্গ হলেও শ্রবণশক্তি বা দৃষ্টিশক্তিহ্রাসের মত তত সাধারণও নয়, এবং রোগীরা এ ব্যাপারে জ্বর বা গায়ে ব্যথার পরে উপলব্ধি করে থাকেন।

Advertisment

 সিডিসি কী বলেছে?

তাদের বক্তব্য, “কোভিড ১৯-এর ব্যাপক উপসর্গ রয়েছে তা মৃদু থেকে মারাত্মক অসুস্থতা হতে পারে। ভাইরাস সংক্রমণের ২-১৪ দিন পর উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ ধরনের উপসর্গের সঙ্গে কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে তা কোভিড ১৯ হতে পারে।”

“ভ্যাকসিন তৈরির আগে আন্তর্জাতিক স্তরে লভ্যতার চুক্তি হওয়া উচিত”

এরই সঙ্গে তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে, জ্বর, ঠান্ডা বোধ, ঠান্ডায় কাঁপুনি, পেশিতে ব্যথা, মাথাব্যথা, গলা ব্যথা এবং স্বাদ বা ঘ্রাণশক্তির নতুন করে হ্রাস পাওয়া। এর মধ্যে দুই বা তার বেশি উপসর্গ থাকলে ওই ব্যক্তির কোভিড-১৯ হতে পারে বলে জানাচ্ছে সিডিসি।

 ঘ্রাণশক্তি হ্রাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

ইএনটি সহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছুদিন ধরেই একে উপসর্গের তালিকায় যুক্ত করতে বলছেন।

কাঁপুনি ম্যালেরিয়ার মত আরও বেশ কিছু সংক্রমণের উপসর্গ, পেশীতে ব্যথা বা গায়ে ব্যথা সাধারণ সর্দিজ্বরের সঙ্গে যুক্ত। এসব কারণে স্বাস্থ্য বিশারদরা বারবার বলছেন উপসর্গ দেখে কোভিড-১৯ ও সাধারণ সর্দিজ্বরের মধ্যে তফাৎ করা যাচ্ছে না।

ঘ্রাণশক্তি হ্রাস তুলনায় কম পরিলক্ষিত হওয়া উপসর্গ। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ও কাশি, জ্বর, শ্বাসের সমস্যা, পেশির ব্যথা, গলায় ব্যথা, ডায়েরিয়া, মাথা ব্যথা ও ক্লান্তিবোধরে সঙ্গে কারণহীন ঘ্রাণশক্তি ও স্বাদের হ্রাসপ্রাপ্তির কথা উল্লেখ করেছে।

এর বহু উপসর্গই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার উপসর্গ তালিকায় রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোভিড-১৯-এর সবচেয়ে পরিচিত উপসর্গ হল জ্বর, শুকনো কাশি, এবং ক্লান্তিবোধ। কোনও কোনও রোগীর ব্যথা, নাক বন্ধ হওয়া, গলায় ব্যথা ও ডায়েরিয়া হতে পারে। এগুলি সামান্য উপসর্গ এবং ক্রমে শুরু হয়।

পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত্যু নিয়ে সংশয় ও উদ্বেগের কারণ বাড়ছে

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রক হুয়ের উপসর্গ তালিকা গ্রহণ করেছে।

মানুষের ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হয় কেন?

 খুব ঠান্ডা লাগলে নাক বন্ধ হয়ে যায়। মেয়ো ক্লিনিক বলছে “ঠান্ডায় নাক বন্ধ হয়ে গেলে আংশিক অস্থায়ী ঘ্রাণশক্তি হ্রাস সাধারণ ব্যাপার। ৬০ বছর বয়সের পর ঘ্রাণশক্তি কমে আসা অস্বাভাবিক নয়।”

ঘ্রাণশক্তি স্বাদেরই একটি অংশ, ফলে খাদ্যে অরুচির সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। সে কারণেই ঠান্ডা লাগলে আমরা খাবারে স্বাদ পাই না।

২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডসের গবেষকদের জার্নাল অফ কেমিক্যাল সেন্সেস-এ লেখা হয়েছিল, ঘ্রাণশক্তি হ্রাস ৩ থেকে ২০ শতাংশ জনগণের মধ্যে দেখা দিতে পারে। এর সঙ্গে বয়সবৃদ্ধি, কর্নিক নাকের রোগ, মাথায় ব্যাপক ট্রমা, ঊর্ধ্বশ্বাসনালী সংক্রমণ ইত্যাদি বহু রকমের বিষয় রয়েছে।

পার্কিনসনস, অ্যালঝেইমার্সের মত অন্যান্য রোগেও এই উপসর্গ দেখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা স্থায়ী রূপ নেয়।

এই প্রথম কি ঘ্রাণশক্তি হ্রাসের  সঙ্গে কোভিড-১৯ যুক্ত হল?

না। এর আগে বিভিন্ন দেশ থেকে ঘ্রাণশক্তি হ্রাসের ব্যাপারে রিপোর্ট এসেছে। ENT UK নামে পেশাদারদের এক সংগঠন বলেছে “দক্ষিণ কোরিয়া, চিন এবং ইতালি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোভিড ১৯ রোগীর ঘ্রাণশক্তিহ্রাস বা হীনতা দেখা গিয়েছে। জার্মানিতে প্রতি তিনজন নিশ্চিত সংক্রমিতদের মধ্যে দুজনে এই লক্ষণ দেখা গিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া, যেখানে ব্যাপক পরিমাণ টেস্টিং হয়েছে, সেখানে ৩০ শতাংশ রোগীর মধ্যে এই উপসর্গ লক্ষিত হয়েছে।”

মোবাইল ফোন থেকে করোনা সংক্রমণ- ইঙ্গিত দিচ্ছে গবেষণা

ENT UK-র তরফ থেকে এমনও জানানো হয়েছে বেশ কিছু রোগীর মধ্যে ঘ্রাণশক্তিহ্রাস ছাড়া আর কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি। ব্রিটিশ রাইনোলজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ক্লেয়ার হপকিনস এবং ENT UK-র প্রেসিডেন্ট নির্মল কুমার জানিয়েছেন, “ইরানে হঠাৎই কেবলমাত্র ঘ্রাণশক্তিহ্রাসের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে এবং আমেরিকা, ফ্রান্স ও উত্তর ইতালিতেও এরকম দেখা যাচ্ছে। ৪০-এর নিচের চারজন রোগীকে এই সপ্তাহেই দেখেছি যাঁদের ঘ্রাণশক্তিবিলোপ ছাড়া অন্য কোনও উপসর্গ নেই- যা সাধারণত মাসে একটা করে পেয়ে থাকি। মনে হয় এঁরা কোনও না কোনও ভাবে গোপনে কোভিড-১৯ বহন করছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এঁরা কেউই আইসোলেশনে নেই।”

ভারতেও কি রোগীদের মধ্যে ঘ্রাণশক্তিহ্রাসের রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে?

কিছু ক্ষেত্রে গিয়েছে। সম্প্রতি একটি ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে যেথানে লুটিয়েন দিল্লির এক ডাক্তার পজিটিভ হওয়ার পর কোয়ারান্টিনে থাকাকালীন জানিয়েছেন, তিনি কয়েকদিন কাশি ও গায়ে ব্যথা অনুভব করার পর খেয়াল করেন, তিনি পারফিউম বা ধূপকাঠির গন্ধ পাচ্ছেন না। এর পরেই তিনি নিজের ও তাঁর স্ত্রীর টেস্ট করানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

COVID-19
Advertisment