ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি কোভিড-১৯-এর প্রভাব সম্পর্কে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তির চাহিদা ও কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণ বিষয়ে এই পরিস্থিতিকে শতাব্দীর সংকট বলে অভিহিত করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে লকডাউন চালু থাকায় সড়ক ও বিমান পরিবহণ বন্ধ থাকায় শক্তির চাহিদা অনেকটাই কমেছে। এ ছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরবন্দি থাকায় গার্হস্থ্য ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও বাণিজ্যিক চাহিদা কমেছে।
এই রিপোর্ট অনুসারে, যেসব দেশে পুরো লকডাউন চলছে, সেখানে শক্তির চাহিদা সপ্তাহপ্রতি ২৫ শতাংশ কমেছে, এবং যেখানে আংশিক লকডাউন চলছে, সেখানে এই চাহিদা কমেছে সপ্তাহে ১৮ শতাংশ। এতে উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই, আর্থিক কাজকর্ম ফের শুরু হলেই নিঃসরণের পরিমাণ ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে, যদি না সরকার শক্তির উৎস সম্পর্কে সচেতন সিদ্ধান্ত নেয়।
সংখ্যার হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ কেন উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে?
কোভিড ১৯ ও শক্তিক্ষেত্র: আন্তর্জাতিক রিপোর্ট কী বলছে
এই রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে এ বছর তেলের আন্তর্জাতিক চাহিদা গড়ে ৯ শতাংশ কমবে, যা তেলের খরচের পরিমাণ ২০১২ সালের সমান হতে পারে। লকডাউনের ফলে সড়ক পরিবহণ কমেছে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ, এবং ২০১৯-এর এই সময়কালের তুলনায় আন্তর্জাতিক স্তরে এই হ্রাসের পরিমাণ ৫০ শতাংশ।
২০২০ মার্চের শেষে উড়ান পরিবহণ সারা বিশ্বে ৬০ শতাংশ কমেছে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন মনে করছে ২০২০-র দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে, ২০১৯-এর তুলনায় বিমান চলাচল ৬৫ শতাংশ কমবে, যার প্রভাব পড়বে বিমানের তেল ও কেরোসিনের চাহিদার উপর।
কয়লার চাহিদা ৮ শতাংশ কমতে পারে, তার কারণ সব মিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা এ বছর ৫ শতাংশ কমবে। প্রতি মাসের পূর্ণ লকডাউনের জেরে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ২০ শতাংশ কমছে যা বার্ষিক হিসেবে ১.৫ শতাংশ।
অর্থনীতির হিসেবে, কয়লার চাহিদা আমেরিকায় ২৫ শতাংশ, ইউরোপিয় ইউনিয়নে ২০ শতাংশ, এবং কোরিয়া ও জাপানে ৫ শতাংশ করে কমতে পারে। আগামী কয়েক মাসে কয়লার চাহিদা কীরকম হবে, তা নির্ভর করছে চিনের মত বৃহৎ উপভোক্তা দেশ সংকট কতটা কাটিয়ে ওঠে তার উপর। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মত দক্ষিণ এশিয় দেশগুলি দ্রুত সুস্থতার দিকে গেলে কয়লার চাহিদা বাড়তেও পারে।
ভাইরাস কার্ভে লকডাউনের প্রভাব
গ্যাসের চাহিদাও ২০২০-র প্রথম ত্রৈমাসিকের থেকে কমেছে। তবে অপ্রচলিত শক্তির চাহিদা বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে তা চালানোর খরচ কম।
অতিমারীর দ্বিতীয় পর্যায়ে আন্তর্জাতিক লকডাউনের দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন, অপ্রচলিত শক্তির চাহিদা বাড়বে। ২০২০-তে এই পরিমাণ ১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বার সম্ভাবনা।
কোভিড ১৯-এর ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণে কী প্রভাব পড়েছে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ ২০২০ সালের মত আর কমেনি। ২০২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাসের পরিমাণ শক্তির চাহিদা যত হ্রাস পেয়েছে তার তুনাতেও কম। এ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ২০১৯-এর এই সময়কালের তুলনায় কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ৫ শতাংশ কমেছে। ৭ শতাংশ কমেছে কয়লা জনিত নিঃসরণে, ৪.৫ শতাংশ কমেছে তেলের ক্ষেত্রে ও ২.৩ শতাংশ কমেছে প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে।
ষেসব এলাকায় রোগের পরিমাণ সর্বোচ্চ সেখানে নিঃসরণের পরিমাণ সবচেয়ে কম। যেমন চিনে ও ইউরোপে এই পরিমাণ ৮ শতাংশ, আমেরিকায় ৯ শতাংশ।
সব মিলিয়ে ২০১৯ সালের তুলনায় এ বছর নিঃসরণের পরিমাণ ৮ শতাংশ কমতে পারে, যা ২০১০ সালের তুলনায় সর্বনিম্ন, যা ২০১০ সালের পর সর্বাধিক এবং ২০০৯ সালের আর্থিক মন্দার সময়ে যা হয়েছিল তার ৬ গুণ বেশি।
ভারতের শক্তিক্ষেত্রে কোভিড ১৯-এর প্রভাব
ভারতে লক ডাউনের জেরে শক্তির চাহিদা ৩০ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ প্রতি অতিরিক্ত লকডাউন সপ্তাহে চাহিদা কমেছে ০.৬ শতাংশ।
২০২০ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে, ২০১৯ সালের ওই সময়ের তুলনায় চাহিদা বৃদ্ধি ঘটেছিল ০.৩ শতাংশ। এই প্রথম ভারতের শক্তি চাহিদার পতন ঘটল।
একই সঙ্গে ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির হার যেভাবে কমছে তাতে কয়লার চাহিদাতেও ধস নামবে। চিন ও ভারত যথাক্রমে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও তৃতীয় সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী এবং দু দেশের কয়লার ব্যবহার এই জ্বালানির আন্তর্জাতিক চাহিদা অনেকটাই স্থির করে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন