সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে যে ২৪ মার্চ লকডাউনের সময় থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিগুণত্বের হারের সময়বৃদ্ধি ঘটেছে। লকডাউনের আগের সপ্তাহে ভারতে সংক্রমণ দ্বিগুণ হচ্ছিল ৩.৪ দিনে। ২৭ এপ্রিলে যে সপ্তাহ শেষ হল, সে সময়ে এই হিসেব ১০.৭৭ দিন বলে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে।
কেন এ বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ
দ্বিগুণত্বের সময়ের ধারণাটা আর্থিক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া, কোনও লগ্নি কতদিনে দ্বিগুণ হল সে জন্য হিসেব করা হয়ে থাকে। এরকম অতিমারীর ক্ষেত্রে দ্বিগুণত্বের হার একদিনের অর্থ হল, শূন্যতম দিনে যদি ১০০ সংক্রমণ হয়, প্রথম দিনে ২০০ সংক্রমণ ঘটবে, দ্বিতীয় দিনে ৪০০ ও তৃতীয় দিনে ৮০০ সংক্রমণ ঘটবে, এবং এভাবেই হিসেব চলবে।
দ্বিগুণত্বের হার তিন দিন মানে, শূন্যতম দিনে যদি ১০০ সংক্রমণ হয় তাহলে তৃতীয় দিনে ২০০ সংক্রমণ হবে। দ্বিহুণত্বের হার আগে থেকে জানা যায় না। এর হিসেব কষতে হয় প্রতিদিনের নতুন সংক্রমণ থেকে, এবং সে কারণেই তা প্রতিদিন বদলায়।
কখনও কখনও সংক্রমণ সংখ্যায় বড়সড় উত্থান বা পতন রোগ ছড়ানো নিয়ে এ ব্যাপারে ভুল ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। সে কারণে দ্বিগুণত্বের হার প্রায়শই পাঁচদিন, সাতদিন বা ১০ দিনের মত অপেক্ষাকৃত বেশি পরিসরে সময় নিয়ে করা হয়ে থাকে। সরকার এ ক্ষেত্রে সাতদিনের চলমান গড় হিসেব করছে। এখানে আমরা পাঁচদিনের চলমান গড়ের হিসেব করেছি।
প্রবণতা
পাঁচদিনের গড় এবং ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত পরিসংখ্যান ধরে আমরা দেখিয়েছি যে জাতীয় পর্যায়ে ২৩ মার্চ, লকডাউনের ঠিক আগে পর্যন্ত দ্বিগুণত্বের হার ছিল ৩.২১ দিন, এর পর প্রথম পর্যায়ের লক-ডাউন শেষ হওয়ার দিন, অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচদিনের পর্যায়ে সেই সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৮২ দিন এবং ২৭ এপ্রিলে সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০.৭৭ দিন।
জাতীয় পর্যায়ের হিসেবে রাজ্যওয়ারি হিসেব ঢাকা পড়ে যায়। ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত যেসব রাজ্যে সংক্রমণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার সবচেয়ে দ্রুত পশ্চিমবঙ্গে, এখানে দ্বিগুণত্বের হার মাত্র ৭.১৩ দিন। এর পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট ৭.৯ ও ৮.৩ দিন। দ্বিগুণত্বের হার সবচেয়ে শ্লথ তেলেঙ্গানায়, ৫৮ দিন।
লকডাউনের ফলে শীর্ষ ১২ রাজ্যে সংক্রমণ দ্বিগুণত্বের হার কমেছে
পশ্চিমবঙ্গে ২০ থেকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে সংক্রমণ হার বেড়েছে ৯৩ শতাংশ
জাতীয় পর্যায়ের হিসেব অনেক সময়েই রাজ্যওয়ারি হিসেবকে ঢেকে দেয়
পশ্চিমবঙ্গে ২০ থেকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রায় ৯৩ শতাংশ, দৈনিক বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের বেশি। মহারাষ্ট্র ও গুজরাটে এই পর্যায়ে এই হার ৮৫ ও ৯৩ শতাংশ যথাক্রমে।
কেরালায়, যেখানে জানুয়ারির শেষে প্রথম তিনটি সংক্রমণের ঘটনা সামনে আসে, সেখানে লকডাউনের আগে গ্বিগুণত্বের হিসেব ছিল ৩ দিন এবং এখন তা ৩৭.১৭ দিন। এ রাজ্য রোগ আটকানোর ব্যাপারে যে কৌশল নিয়েছে তা সারা পৃথিবীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। তেলেঙ্গানার দ্বিগুণত্বের হার কম হলেও কেরালায় সংক্রমণ সংখ্যাও কম হওয়ায় তা অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ।
লকডাউনের ফলে মোট ১২টি সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষ রাজ্যে দ্বিগুণত্বের হার বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বাকি ১২ টি এরকম রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমেছে। মহারাষ্ট্রে প্রথমবার এরকম ঘটেছে, এপ্রিলের শুরুতে যা ছিল ১৭ শতাংশ এখন সেখানে দৈনিক বৃদ্ধির হার ৮.৭৪ শতাংশ।
ফাঁকফোকর
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের গাইডলাইনে কেবলমাত্র উপসর্গযুক্ত, যাণদের ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে এবং যাঁরা সংক্রমিতদের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের টেস্ট করার কথা বলা হয়েছে। তবে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা উপসর্গবিহীন, ফলে অচিহ্নিতকরণের সম্ভাবনা বহু ক্ষেত্রে থেকেই যাচ্ছে।
পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট ডক্টর কে শ্রীনাথ রেড্ডি বলেছেন, “এরকম মনে হতেই পারে যে যদি আরও বেশি টেস্ট হত তাহলে আরও সংক্রমণের ঘটনা সামনে আসত এবং দ্বিগুণত্বের হার কমত। সেরকম যখন হচ্ছে না, তাহলে মনে করা যেতেই পারে রোগবৃদ্ধি কমছে। এই পরিসংখ্যানকে ফুসফুসে জটিল সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে যাঁরা রয়েছেন এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মত রোগ সম্পর্কিত গণ নজরদারি পরিসংখ্যানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে যাতে একটি ত্রিমাত্রিক চিত্র ধরা পড়ে।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন