Coronavirus Explained: নীলা। চেনেন তাঁকে? না চেনাই স্বাভাবিক। আর এখন সে ইহলোকের মায়াও ত্যাগ করেছে। না নীলা কোনও মানুষ নয়, একটি সিংহী। চেন্নাইয়ের ভান্ডালুর চিড়িয়াখানায় গত সপ্তাহে তার মৃত্যু হয়েছে। সন্দেহ করোনা হয়েছিল তার। তারপর আরও ৯ জন সিংহের করোনা ধরা পড়েছে। ভোপালের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হাই সিকিউরিটি অ্যানিম্যাল ডিজিসেস-এ তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ভয়ে যদি এর মধ্যেই নীল হয়ে যান, তা হলে বলতে হবে, আরও আছে। গত সপ্তাহেই রাঁচির ভগবান বীরসা বায়োলজিকাল পার্কে ১০ বছর বয়সি একটি বাঘের মৃত্যু হয়েছে জ্বরে। যদিও Rapid Antigen Test-এ তার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, ভিসেরা পাঠানো হয়েছে বরেলির ভেটেরিনারি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। আপাতত চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আতঙ্কে কম্পমান। সেখানকার অন্য বন্যদের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন, বাঘ-সিংহরা কি কোভিডের কামড় খেতে পারে?
করোনার জীবাণুতে যে স্পাইক প্রোটিন রয়েছে, সেটাই কিন্তু যত নষ্টের গোড়া। স্পাইক প্রোটিন দেহ কোষের হোস্ট প্রোটিনের মাধ্যমে সংক্রমণের শুভারম্ভ ঘটায়। হোস্ট প্রোটিনকে বলা হয় ACE2 রিসেপ্টার। বিভিন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই তার চরিত্র বিভিন্ন হয়ে থাকে। এর উপরেই নির্ভর করে কোনও প্রাণীর শরীরে কোভিডের সংক্রমণ হবে কি না। বিভিন্ন গবেষণায় সামনে এসেছে, মানুষের ACE2 রিসেপ্টারের সঙ্গে বিড়াল প্রজাতির প্রাণীর ACE2 রিসেপ্টারের একটা হালকা সাদৃশ্য রয়েছে।
আরও পড়ুন বর্ষায় কি বাড়বে মিউকরমাইকোসিসের দাপট? সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা
কী বলছে গবেষণা?
গত বছরের ডিসেম্বরে পিএলওএস কম্পিউটেশনাল বায়োলজি জার্নালে ACE2 রিসেপ্টার ও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়। সেখানে দশটি প্রাণীর ACE2 রিসেপ্টার করোনার স্পাইক প্রোটিনের প্রতি কতটা আকর্ষণ অনুভব করছে, তার চুলচেড়া বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। কম্পিউটার মডেলিং টেস্টের মাধ্যে গোটা কাজটা করেন গবেষকরা। কোষে মাথা গোঁজার পর কত তাড়াতাড়ি ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে, তার সূচক কোডন অ্যাডাপটেশন ইনডেক্স, তারও তুলনা করেন গবেষকরা। সেখানেই মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো তথ্য সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার বিচারে মানুষের পরেই বিড়াল জাতীয় করেকটি প্রাণী যেমন ফেরেট, বিড়াল এবং সিভেট বা গন্ধগোকুলের স্থান। আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শিম্পাঞ্জিদের করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রীতিমতো, নীল-চোখো কালো লেমুরের সংক্রমণ-আশঙ্কা ভালই। মাঝারি আশঙ্কা রয়েছে বিড়ালের, কুকুরের আশঙ্কা কিন্তু সে তুলনায় কম।
আরও পড়ুন ক্রমশ কেন দাম বাড়ছে রান্নার তেলের?
আর বাঘমামা ও সিংহমশায়?
PLOS Computational Biology জার্নালের সেই প্রবন্ধের লেখক তথা বার্সেলোনার সেন্টার ফর জিনোমিক রেগুলেশনের ডিরেক্টর লুইস সেরানো একটি ই-মেলে গত বছর জানিয়েছিলেন, তারা বিড়াল জাতীয় প্রাণীর জিনোম বিশ্লেষণ করেননি, তবে বিড়ালেরা করোনা সংক্রমিত হয়েছে যখন, তখন তার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকা প্রাণীকুল যেমন বাঘ-সিংহও সংক্রমিত হতে পারে করোনায়।
গত অগস্টে ইটালির বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ছ'টি বিড়াল ও একটি বাঘের অন্ত্রনালীর টিস্যু বিশ্লেষণ করেও তাদের সংক্রমণ-সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন। তবে, তারা জানাচ্ছেন, বাঘের থেকে তার মাসি বিড়ালের করোনা আশঙ্কা কিন্তু বেশি অনেকটাই।
শেষে বলি, ২০২০-র এপ্রিলে নিউইয়র্কের ব্রোনক্স চিড়িয়াখানায় চার বছরের মালয়েশীয় বাঘ নাদিয়ার কোভিড ধরা পড়ে। মনে করা হচ্ছে, চিড়িয়াখানার এক কর্মীর থেকেই বাঘটি সংক্রমিত হয়েছিল। আর বার্সেলোনার চিড়িয়াখানায় চারটি সিংহ কোভিড পজিটিভ হয় গত ডিসেম্বরে।
তালিকাটা কি আরও বাড়বে?
তবে আপাতত জলের মতো স্পষ্ট, বাঘ-সিংহকে মানুষ যমের মতো ভয় পেলেও, করোনা কিন্তু তাদের কেয়ার-ই করে না।
অনুবাদ নীলার্ণব চক্রবর্তী
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন