Advertisment

Explained: নন্দীগ্রামের ফলের বিরুদ্ধে আদালতে যে আইনে মমতার মামলা, তার বিস্তারিত জানেন কী?

নন্দীগ্রামে হারের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সরব হন মমতা। মামলা নিয়েও চলছে টানাপোড়েনের সাইক্লোন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
How Nandigram poll results are challenged and when courts have set them aside

নন্দীগ্রামে হার। রাজ্যে জিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী স্কোর কার্ড নিয়ে বিতর্ক সপ্তমে।

নন্দীগ্রামে হার। রাজ্যে জিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী স্কোর কার্ড নিয়ে বিতর্ক সপ্তমে। নন্দীগ্রামে হারের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সরব হন মমতা। কলকাতা হাইকোর্টে এই ফলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, রিটার্নিং অফিসার অন্যায় ও বৈষম্যমূলক ভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করেছেন। শুভেন্দু অধিকারীর নির্বাচন বাতিলের আবেদন আদালতে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মামলা নিয়েও চলছে টানাপোড়েনের সাইক্লোন।

Advertisment

আবেদনের গোড়ার কথা কী?

নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের কাজ শেষ হয়ে যায়। মানে হল, রিটার্নিং অফিসার চূড়ান্ত ফলাফল বা ফাইনাল রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে কোনও অভিষোগ থাকলে এর পর ইলেকশন পিটিশন বা নির্বাচন আবেদন করা যায়। কোনও প্রার্থী বা ভোটার এই আবেদন জানাতে পারেন। যে রাজ্যে ওই নির্বাচনী ক্ষেত্র সেখানকার হাইকোর্টে ইলেকশন পিটিশন দাখিল করতে হয়। ফল বেরনোর ৪৫ দিনের মধ্যে এটি করতে হবে। সময়সীমা পেরিয়ে গেলে আদালত আবেদন গ্রহণই করবে না। ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী এই মামলা ৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। কিন্তু দেখা যায়, মামলা অনেক বেশি সময় ধরে চলছে, বছরের পর বছরও কেটে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন- যে যে আসনে অল্প ভোটে হার, সেখানেই পুনর্গণনার আবেদন জানাবে বিজেপি: দিলীপ ঘোষ

কী কারণে কোনও প্রার্থীর নির্বাচন বাতিল হতে পারে?

জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১০০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনও জয়ী প্রার্থী ভোটের দিন ওই কেন্দ্র থেকে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আইনত যোগ্য ছিলেন না, এটা যদি প্রমাণ হয় আদালতে। জয়ী প্রার্থী, তাঁর পোলিং এজেন্ট অথবা জয়ী প্রার্থীর সম্মতিতে যদি কেউ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনও দুর্নীতি বা অন্যায় কাজ করে থাকেন। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৩ নম্বর ধারায় এই দুর্নীতির ( কোরাপ্ট প্র্যাক্টিস ) তালিকাও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঘুষ, চাপ তৈরি করা, ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায়, ভাষার ভিত্তিতে ভোট না দেওয়ার জন্য আবেদন করা। জয়ী প্রার্থীর মনোয়নে যদি কোনও গণ্ডগোল থেকে থাকে, কিংবা ওই কেন্দ্রে অন্য কোনও প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান বিধিবহির্ভূত ভাবে হয়ে থাকে। যদি ভোটগণনার সময় কোনও অন্যায় পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে গণনায় পক্ষপাতিত্ব, কোনও বৈধ ভোটকে বাতিল করে দওয়া। কিংবা অবৈধ ভোটকে বাতিল না করা। সব মিলিয়ে যদি সংবিধান ও জনপ্রতিনিত্ব আইন বা আইনের কোনও নিয়ম ভঙ্গ করা হয়, তা হলে প্রার্থীর নির্বাচন বাতিল হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন- আরও ৪ আসনে ভোটের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের, হাইকোর্টে মামলা

প্রমাণ হলে কী হবে ?

এটা নির্ভর করছে আবেদনকারীর উপর। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সমস্ত জয়ী প্রার্থীর ফলাফল বাতিল করার জন্য আবেদন করা যেতে পারে। আবেদনকারী নিজে যদি প্রার্থী হন, তা হলে নিজেকে জয়ী হিসেবে ঘোষণার জন্য সওয়াল করতে পারেন (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে)। আবার অন্য কোনও প্রার্থীকেও জয়ী হিসেবে ঘোষণার করা হোক, চাইতে পারেন কেউ। যদি দেখা যায় আবেদনকারীর পক্ষেই রায় যাচ্ছে, তা হলে নতুন করে নির্বাচনের নির্দেশ দিতে পারে আদালত।

ইলেকশন পিটিশনে কারও নির্বাচন বাতিল হয়েছে কি?

বহু উদাহরণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ২০৭৫ সালের ১২ জুন। বিরাট একটা বিস্ফোরণ হয় যেন। রায়বরেলি থেকে ইন্দিরা গান্ধির নির্বাচন বাতিল করে দেয় ইলাহবাদ হাইকোর্ট। দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার বিরুদ্ধে নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতার ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ নারায়ণ। ১৯৭১ সালে ইন্দিরার বিরুদ্ধে তিনি ভোটে হারার পর আদালতে গিয়েছিলেন। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৩-এর ৭ অনুযায়ী মামলা হয়েছিল। চার বছর ধরে মামলা চলার পর ইন্দিরার পরাজয়। নির্বাচন বাতিল করে দেওয়া মানে ইন্দিরা আর সাংসদ থাকছেন না। ইলাহবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি জগমোহনলাল সিনহার রায় এখানেই শেষ হয়নি, আদালত জানিয়ে দিয়েছিল ৬ বছর নির্বাচন লড়তে পারবেন না ইন্দিরা গান্ধি। এর পর এই মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি ভি আর কৃষ্ণ আইয়ার বলেন, সাংসদ না থাকলেও, ইন্দিরা প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন। ইলাহবাদ হাইকোর্টের রায়ের ১৩ দিন পর দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রধানমন্ত্রী গান্ধি। ইতিহাস ঝটকায় অন্য দিকে মোড় নেয়। 'শক থেরাপি' দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর ১৯৭৭ সালে রাজ নারায়ণ ফের ইন্দিরার বিরুদ্ধে দাঁড়ান, তবে এবার তাঁকে হারিয়ে দেন তিনি। জেতেন ৫০ হাজারের বেশি ভোটে। নির্বাচনী প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে সংখ্যক ভোটে হারানোর হুঙ্কার দিয়েছিলেন শুভেন্দু।

Read in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tmc bjp Mamata Banerjee Suvendu Adhikari Nandigram Result
Advertisment