বৃদ্ধির হারে মন্দা দেখা যাচ্ছে আগের বছর থেকেই। তারই মধ্যে দেশের প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রী পেশ করলেন পূর্ণাঙ্গ বাজেট। কেমন ভাবে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করলেন নির্মলা সীতারমণ, দেখে নিন।
বৃদ্ধির হারে মন্দা দেখা যাচ্ছে আগের বছর থেকেই। তারই মধ্যে দেশের প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রী পেশ করলেন পূর্ণাঙ্গ বাজেট। কেমন ভাবে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করলেন নির্মলা সীতারমণ, দেখে নিন।
শুক্রবার প্রথম বাজেট পেশ করার ক্ষেত্রে নিরাপদ পথই বেছে নিলেন দেশের নয়া অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। ভারতীয় অর্থনীতিতে বৃদ্ধির হারের মন্দাভাবের ও একইসঙ্গে বিশেষত কল্যাণমূলক ক্ষেত্রে প্রত্যাশার চাপ ছিল তাঁর কাছে। এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যালান্স করা তাঁর পক্ষে কঠিনই ছিল।
Advertisment
শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী নতুন কোন বৃহৎ খরচের কথা ঘোষণা করা থেকে বিরত থেকে সরকারের ওপর চাপ বাড়াননি। তার বদলে তিনি লগ্নির বিষয়টিকে সহজ করার পথ বেছে নিয়েছেন। এর ফলে একদিকে যেমন বৃহৎ অর্থনীতির দিকটিতে যেমন তিনি নজর দিতে পেরেছেন, একই সঙ্গে লগ্নিকারীদের উৎসাহও জুগিয়েছেন।
এ বাজেটে সবচেয়ে বড় আশঙ্কার দিকটি হল আর্থিক ঘাটতির দিক, যা প্রতিফলিত হয়েছে এবছর সরকারের ঋণের পরিমাণ থেকে। আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে বেসরকারি ক্ষেত্রের আর্থিক সম্পদ ব্যবহার মন্দীভূত হয়ে পড়ে।
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করা হয়েছিল তাতে জাতীয় গড় উৎপাদনের ৩.৪ শতাংশ আর্থিক ঘাটতির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। বিস্ময়কর ভাবে এ বার অর্থমন্ত্রী সে লক্ষ্যমাত্রা ৩.৩ শতাংশ করার কথা ঘোষণা করেছেন। এর পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী একটি দীর্ঘদিনের বিতর্কিত ভাবনার কথাও ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন সরকার বাইরের বাজার থেকে বাইরের মুদ্রাতেই ঋণের একটি অংশ তুলবে।
এর ফলে একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে যে ভারতীয় অর্থনীতিতে এর ফলে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওঠাপড়ার আঁচ পড়বে। তা সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, দেশের বাজারে গভর্নমেন্ট সিকিউরিটির চাহিদায় এর সুফল পাওয়া যাবে।
সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, এসব সিদ্ধান্তের ফলে সরকারকে ঋণ দেওয়ার জন্য দেশের যে সম্পদ তার ওপর চাপ পড়বে এবং এর ফলে লগ্নির ব্যাপারে বেসরকারি ক্ষেত্রকে উৎসাহ দান করবে।
ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধি গত আর্থিক বর্ষ থেকেই গতি হারিয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে গড় জাতীয় উৎপাদনের বৃদ্ধির হার ছিল ৭.২ শতাংশ, ২০১৮-১৯ সালে তা দাঁড়ায় ৬.৮ শতাংশতে। এ বছর এক নজরে বাজেট নথিতে গড় জাতীয় উৎপাদনে বৃদ্ধির হার ১২ শতাংশ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। চলতি বছরে ৩.৫ থেকে ৪ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির কথা ধরে নিয়ে বলা যায় ২০১৯-২০ তে বৃদ্ধির হার হতে পারে ৮ থেকে ৮.৫ শতাংশ। ২০২৫ সালে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন প্রতিবছর ৮ শতাংশ বৃদ্ধি।
কিন্তু সংশয় কাটছে না। বাজেট নথির সঙ্গে যে ম্যাক্রোইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে তাতে পরিষ্কার ভাবে এ বছরের ন্যূনতম জাতীয় গড় উৎপাদন ১১ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রকৃত জিডিপির হার কমে দাঁড়াবে ৭ থেকে ৭.৭৫ শতাংশে। এদিকে অন্তর্বর্তী বাজেটে ন্যূনতম জাতীয় গড় উৎপাদনে বৃদ্ধির হার ১১.৫ শতাংশ বলে অনুমান করা হয়েছিল।
অন্তর্বর্তী বাজেট এবং ক্যাগের দফতর থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে কর রাজস্ব নিয়ে চাপ থাকছেই। এ বছর সম্ভবত দাতীয় গড় আয়ে বৃদ্ধির হার কম হওয়ার কারণেই, কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৬.৪৯ লক্ষ কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী বাজেটে এই পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ১৭.০৫ লক্ষ কোটি টাকা, যার তুলনায় এ বারের বাজেটের পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণভাবেই কম। জিএসটি সংগ্রহের পরিমাণও এবারের বাজেটে যা দেখানো হয়েছে তা গত আর্থিক বর্ষের বাজেটের পরিমাণের তুলনায় কম।
কল্যাণমূলক কাজে ভাটা
প্রধানমন্ত্রী কিসান, প্রধানমন্ত্রী আশা বা আযুষ্মান ভারতের মত খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টাই করেননি অর্থমন্ত্রী। তার বদলে, গ্রামীণ ও নাগরিকক্ষেত্রে পরিকাঠামোয় বিনিয়োগের দিকে নজর দিয়েছেন তিনি।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট ভাষণে একটি বড় খরচ দেখানো হয়েছে সরকারি ব্যাঙ্কগুলির রিক্যাপিটালাইজেশনে। ধরা হয়েছে মোট ৭০ হাজার কোটি টাকা। একদিক থেকে দেখতে গেলে এর ফলে এই ব্যাঙ্কগুলির ঋণদানের ক্ষমতা বাড়বে, যার ফলে অর্থনীতি গতি পাবে। তবে সমালোচকরা বলবেন, এই ব্যাঙ্কগুলির পরিচালনা ক্ষেত্রে সংস্কার না করে এই পদক্ষেপ গ্রহণ শেষ পর্যন্ত করদাতাদের অর্থ নয়ছয়ই করা হবে।
আরেকটি বড় শঙ্কার বিষয় হল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে সরকারের এ বছর পাওয়া ডিভিডেন্ডের মাত্রা। মনে করা হচ্ছে ২০১৮-১৯ সালে ৫৪, ৮১৭ কোটি টাকার ডিভিডেন্ডের তুলনায় এই পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গিয়ে দাঁড়াবে ১.০৬ লক্ষ কোটি টাকায়।
বিলগ্নিতে উৎসাহ
এ বারের বাজেটের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল এ বছর বিলগ্নির লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাপক বৃদ্ধি। এ বছর এ লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা।