এ সপ্তাহের গোড়ায় সরকারের মুখ্য বিজ্ঞানসম্পর্কীয় উপদেষ্টামণ্ডলী কীভাবে বাড়িতে মাস্ক তৈরি করতে হয় সে নিয়ে এক অ্যাডভাইজরি প্রকাশ করেছেন এবং সকলকেই এই মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছেন। বিশেষ করে যাঁরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকেন। এই প্রথম সরকারিভাবে সকলকে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হল- এমনকি যাঁরা সংক্রমিত নন বা সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসেননি, তাঁদেরও।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রক আগে বলেছিল যে সকলের মাস্ক পরবার প্রয়োজন নেই। সে নির্দেশ এখনও তুলে নেওয়া হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশও হচ্ছে অসংক্রমিত ব্যক্তি যদি কোনও রোগীর দেখভাল করেন, তাহলেই তাঁকে মাস্ক পরতে হবে। মার্কিন সংস্থা সিডিসি-ও তেমনটাই সুপারিশ করেছে, যদিও তা এখন পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।
করোনা-সঙ্কট: বাইরে থেকে ফিরে কি অবশ্যই জামাকাপড় কাচা উচিত?
মাস্কের সুবিধা কী ?
মাস্কে নাক মুখ ঢেকে রাখলে ভাইরাসের শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে। সার্স কোভ ২ ভাইরাস, যা কোভিড ১৯-এর জন্য দায়ী, তা বাতাসে ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়, যেমন সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই ভাইরাস তিন থেকে চার ঘণ্টা বাতাসে থাকতে পারে। প্লাস্টিক, স্টিল বা তামার উপরে এর আয়ু হয় বেশ কয়েকঘণ্টা এবং কেউ যদি সেগুলি স্পর্শ করবার পর নাক বা মুখে হাত দেন, তাহলে তাঁর সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এই পরিস্থিতিতে মাস্ক জরুরি হয়ে উঠতে পারে।
উপসর্গহীন ব্যক্তিতেও এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। যেমন প্রকাশ্য স্থানে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তি কাছাকাছি রয়েছেন কিনা তা অনিশ্চিত।
তাহলে সকলের মাস্ক পরবার প্রয়োজন নেই বলে যে সুপারিশ, তার ব্যাখ্যা কী?
এর মূল কারণ ছিল যাতে স্বাস্থ্যকর্মীরা, যাঁদের সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা বেশি, তাঁদের জন্য প্রফেশনাল মাস্ক যেন কম না পড়ে। সারা বিশ্বেই প্রফেশনাল মাস্কের চাহিদা ছিল তুঙ্গে, ফলে জোগান কমে যাচ্ছিল।
যখন এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তখনও পর্যন্ত এ ভাইরাস দীর্ঘক্ষণ বাতাসে টিকে থাকতে পারে কিনা, তা নিয়ে নিশ্চয়তা ছিল না। মার্চ মাসে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, এ ভাইরাস তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বাতাসে কার্যকর থাকে। তার আগে পর্যন্ত, রোগী, তাঁর পরিবারের লোকজন, এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য মাস্ক পরবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরবার ব্যাপারে নিরুৎসাহ করা হয়েছিল। সাম্প্রতিকতম গবেষণা গোটা বিষয়টিকে ফের পর্যালোচনা করতে বাধ্য করছে।
আদ্যিকালের বিসিজি ভ্যাকসিনই করোনার প্রতিষেধক, দাবি নিউ ইয়র্কের গবেষকদের
প্রফেশনাল মাস্ক কতটা কার্যকরী?
যে মাস্কের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিল তা হল এন ৯৫। এমন নামকরণের কারণ হল এই মাস্ক বাতাসের ৯৫ শতাংশ পার্টিকেল, যা আকারে ০.৩ মাইক্রন (১ মাইক্রন হল এক মিটারে এক মিলিয়নের এক ভাগ) বা তার চেয়ে বেশি, তাকে রোধ করতে পারে। একটি সার্স কোভ ২ ভাইরাস সাধারণত আকারে ০.২ মাইক্রন বা তার চেয়ে বড় হয়, ফলে তা সহজে এন ৯৫ মাস্কের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু টাটা ইনস্টিট্যুট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের গবেষক অর্ণব ভট্টাচার্য বলছেন, এই ভাইরাস যেহেতু ড্রপলেটের সঙ্গে সন্নিবদ্ধ থাকে, ফলে তা আকারে বড় হয়। তাঁর কথায়, যা ছড়াচ্ছে, তা হল ড্রপলেট, যা আকারে কয়েক মাইক্রন। কোনও ড্রপলেটই ০.৩ মাইক্রনের চেয়ে ছোট হবার সম্ভাবনা কম। ফলে এন ৯৫ মাস্ক ভাইরাস প্রবেশের প্রতিরোধক।
তিনি বলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা সাধারণভাবে যে সার্জিকাল মাস্ক পরেন, তার চেয়ে এই মাস্ক বেশি কার্যকর।
হাতে বানানো মাস্কের কী হবে?
হাতে তৈরি মাস্ক প্রফেশনাল মাস্কের মত কার্যকর না হলেও কোনও মাস্ক না পরার চেয়ে এ মাস্ক পরা ভাল। সুতির কাপড়ের তৈরি সাধারণ মাস্ক বড় পার্টিকল প্রতিরোধ করতে পারে এবং তা বারবার ধুয়ে ব্যবহার করাও যায়।
তাহলে সাম্প্রতিকতম সুপারিশ কী?
সাম্প্রতিকতম সুপারিশে সবাইকে বাড়িতে তৈরি মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যদিও তা যথেষ্ট নয় বলেই দেখা যাচ্ছে। সরকারি সুপারিশে হু-কে উদ্ধৃত করা হয়েছে। মাস্ক যদি বারবার সাবান ও জল বা অ্যালকোহল বেসড স্যানিটাইজারে হাত ধুয়ে ব্যবহার করা যায়, কেবল তাহলেই কার্যকর থাকবে। সংক্রমণ ছড়াতে মাস্ক পরিষ্কার রাখতেও বলা হয়েছে এবং ভারতের যেসব জায়গা ঘনবসতিপূর্ণ, সেখানকার মানুষকে বেশি করে ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ রুখতে মদ্যপান কতটা কার্যকর?
বাড়িতে তৈরি দ্বিস্তরীয় মাস্ক সার্জিক্যাল মাস্কের মতই নভেল করোনাভাইরাসের চেয়েও ক্ষুদ্রতর কণাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই ম্যানুয়ালে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও হু-য়ের সাধারণ নির্দেশিকা অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে প্রকাশ্য স্থানে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করার সুপারিশ সিডিসির তরফ থেকে আসতে চলেছে বলে খবর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন