Ratan Tata: বুধবার গভীর রাতে প্রয়াত হয়েছেন শিল্পপতি রতন টাটা। মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। এর আগে সোমবারই বার্ধক্যজনিত সমস্যার কারণে মুম্বইয়ের হাসপাতালে গিয়ে তিনি রুটিন চেক-আপ করিয়ে এসেছিলেন। সেই সময় সোশ্য়াল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। লিখেছিলেন, তিনি ভালো আছেন। গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। শিল্পক্ষেত্রে এবং সমাজে তাঁর অসামান্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০০ সালে পেয়েছিলেন পদ্মভূষণ। ২০০৮ সালে পেয়েছিলেন পদ্মবিভূষণ।
Advertisment
জন্ম ও শিক্ষা তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯৩৭ সালে, শিল্পজগতের আইকন টাটা পরিবারে। আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে আর্কিটেকচার ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিগ্রি পাশ করেন। হার্ভার্ড থেকে পাশ করেন অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের ডিগ্রি। আইবিএমের চাকরির অফার ছেড়ে দিয়ে ১৯৬২ সালে টাটা গোষ্ঠীর টেলকো সংস্থায় চাকরিতে যোগ দেন। এরপর টাটা গোষ্ঠীর নানা সংস্থায় কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে ন্যাশনাল রেডিয়ো অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বা নেলকোর ডিরেক্টর হন। ১৯৯১ সালে, জেআরডি টাটার হাত থেকে টাটা সন্স এবং টাটা ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন।
রতন টাটার আমলে ব্যবসা বেড়েছে ভারতের সর্বত্র টাটা ব্র্যান্ডের পণ্য বা পরিষেবা রয়েছে। নুন থেকে মোটরগাড়ি, সব ক্ষেত্রেই রয়েছে টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসা। রতন টাটার আমলে আবার টেটলি, কোরাস, জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার, ব্রুনার মন্ড, জেনারেল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্ট, ডেইউয়ের মত একের পর এক সংস্থা অধিগ্রহণ করেছে টাটা গ্রুপ। বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে রয়েছে টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসা। হোটেল, রাসায়নিক সংস্থা, কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক, শক্তি সংস্থা, চিকিৎসা পরিষেবা- সবেতেই টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসা প্রসারিত হয়েছে। পাশাপাশি, পরিবহণ ক্ষেত্রেও টাটার বিভিন্ন গাড়ি দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে।
নতুন শিল্প সংস্থায় বিনিয়োগ লেন্সকার্ট, পেটিএম, ওলা ইলেকট্রিক মোবিলিটি এবং আপস্টক্সের মত ৫০টিরও বেশি স্টার্টআপ সংস্থাকে রতন টাটা আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। টাটা সন্সের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টার, বম্বে হাউসে পথকুকুরদের দেখভালের ব্যবস্থা করেছিলেন। এমনকী, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পথকুকুরদের তাজ হোটেলেও আশ্রয় দিতে তিনি দ্বিধাবোধ করতেন না। মুম্বইয়ে কুকুর এবং পোষ্যদের জন্য তিনি হাসপাতাল বানিয়ে দিয়েছেন।
সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান ভারতের অন্যতম বড় দাতব্য সংস্থা টাটা ট্রাস্ট ফাউন্ডেশন। শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, গ্রামোন্নয়ন– সব ক্ষেত্রে এই সংস্থা সাহায্য করে থাকে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এবং বিভিন্ন আইআইএম ক্যাম্পাসেও টাটা ট্রাস্ট অর্থ দান করেছে।
কোভিডের সময় ব্যক্তিগতভাবে রতন টাটা ৫০০ কোটি টাকা দান করেছিলেন। মুম্বই জঙ্গি হামলার পর, হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনে সাহায্যের জন্য তৈরি করেছিলেন, 'তাজ পাবলিক সার্ভিস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট'।
প্রতিক্রিয়ায় রাজনীতিবিদরা বুঝিয়েছেন কতটা ক্ষতি
সিঙ্গুরের বিতর্ক অতীত বুঝিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, 'টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন ভারতীয় শিল্পের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা নেতা। তিনি শিল্প-সহ নানা ক্ষেত্রে উৎসাহ দিতেন। পাশাপাশি ছিলেন পরোপকারী।'
Saddened by the demise of Ratan Tata, Chairman Emeritus of the Tata Sons.
The former Chairman of Tata Group had been a foremost leader of Indian industries and a public-spirited philanthropist. His demise will be an irreparable loss for Indian business world and society.
আর, যাঁর হাত ধরে টাটা তাঁর ন্যানো শিল্পকে গুজরাটের সানন্দে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই নরেন্দ্র মোদী সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, 'রতন টাটা ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ। ভারতীয় সুপ্রাচীন শিল্পকে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। সঙ্গে, সংস্থার বোর্ডরুমের বাইরেও তিনি বিরাট অবদান রেখেছেন।'
Shri Ratan Tata Ji was a visionary business leader, a compassionate soul and an extraordinary human being. He provided stable leadership to one of India’s oldest and most prestigious business houses. At the same time, his contribution went far beyond the boardroom. He endeared… pic.twitter.com/p5NPcpBbBD
রাজনাথ সিং লিখেছেন, 'রতন টাটা ছিলেন ভারতীয় শিল্পের টাইটান। আমাদের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং শিল্পে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি পরিচিত। তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং ভক্তদের প্রতি রইল আমার গভীর সমবেদনা।'