Advertisment

আদর্শ নির্বাচন বিধি ঠিক কাকে বলে?

নির্ঘণ্ট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশে চালু হয়ে গেছে আদর্শ নির্বাচন বিধি। যা ভোটপর্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপর আরোপ করবে বিবিধ বিধিনিষেধ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
election commission

রবিবার বিকেল পাঁচটায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা ঘোষণা করেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দেশের ১০ লক্ষেরও বেশি বুথে ৫৪৩ টি লোকসভা কেন্দ্রের ভোট-নির্ঘন্ট। একই সঙ্গে ঘোষিত হলো অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমে বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ।

Advertisment

নির্ঘন্ট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশে চালু হয়ে গেছে 'মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট' বা আদর্শ নির্বাচন বিধি। যা ভোটপর্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপর আরোপ করবে বিবিধ বিধিনিষেধ। ভোটপর্ব চলাকালীন কোন নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করতে পারবে না রাজ্যের বা কেন্দ্রের কোনও ক্ষমতাসীন সরকার।

আদর্শ নির্বাচন বিধি কী?

অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা, যাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং তাদের প্রার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। এর আওতায় থাকে নির্বাচনী সভা এবং প্রচার সংক্রান্ত বিধিনিষেধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দলের ভোট-ইশতেহার, শাসক দলের আচরণ থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্মপদ্ধতির নীতিনিয়ম।

কখন থেকে চালু হচ্ছে আদর্শ নির্বাচন বিধি?

প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো-র তথ্য অনুযায়ী, এই বিধি প্রথম চালু হয়েছিল ১৯৬০-এর কেরালা বিধানসভা নির্বাচনের সময়।যা অনুসৃত হয়েছিল ১৯৬২-র সাধারণ নির্বাচনেও।নির্বাচন কমিশন ১৯৭৯-এ যোগ করে শাসক দল সংক্রান্ত বিধিনিষেধ, যাতে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে বাড়তি সুবিধে না পায়।

আদর্শ নির্বাচন বিধি চালু হয়ে যায় নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘন্ট প্রকাশের পর থেকেই, এবং বলবৎ থাকে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ, রবিবার বিকেলে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই চালু হয়ে গেছে এই বিধি।

আর পড়ুন, উপত্যকায় খবরের কাগজের হরফহীন প্রতিবাদ, কাঠগড়ায় ‘সরকারি বৈষম্য’

কী কী নিয়ম বলবৎ হয় এই আচরণবিধিতে?

মূলত আটটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয় এই বিধি। প্রার্থীদের সাধারণ আচরণ, মিটিং, মিছিল, নির্বাচনের দিনটি, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক, শাসক দলের আচরণ এবং বিভিন্ন দলের নির্বাচনী ইস্তেহার।

বিধি অনুযায়ী, রাজ্যে বা কেন্দ্রে শাসক দল নির্বাচনী প্রচারে সরকারি ক্ষমতা এবং প্রশাসনযন্ত্রের কোন অপব্যবহার করতে পারবে না। কোন নতুন সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা বা নীতি প্রণয়ন করা যাবে না বিধি বলবৎ হওয়ার পর থেকে। সরকারি খরচে কোন বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না কোনও গণমাধ্যমে।

রাজ্য বা কেন্দ্রের মন্ত্রীরা সরকারি কাজের সঙ্গে কোনওভাবেই নির্বাচনী প্রচারকে মেশাতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করতে পারবেন না সরকারি গাড়ি।

নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সমান সুবিধে দিতে হবে প্রশাসনকে। সে নির্বাচনী সভার মাঠই হোক বা হেলিপ্যাড ব্যবহারের অনুমতি।

বিধি চালু হওয়ার পর থেকে সরকার অস্থায়ী ভিত্তিতে নতুন কোনো কর্মীকে নিয়োগ করতে পারবে না।

রাজনৈতিক দলগুলি একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রচারে জাতপাত নিয়ে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হতে পারে, এমন কিছু বলতে পারবে না। মন্দির-মসজিদ-চার্চ বা অন্য কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রচারের কাজে লাগানো যাবে না।

প্রচারপর্বে ভোটারদের ঘুষ দেওয়া বা ভীতিপ্রদর্শন নিষিদ্ধ।ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘন্টা আগে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে বন্ধ করে দিতে হবে যাবতীয় নির্বাচনী প্রচার। কমিশনের পরিভাষায় যাকে বলে 'ইলেকশন সাইলেন্স'।

কতটা আইনি বৈধতা আছে নির্বাচন আচরণবিধির?

এই বিধি নির্বাচন কমিশন অবাধ এবং নিরপেক্ষ ভোটদান সুনিশ্চিত করতে চালু করেছিল, এবং সেটা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় এবং সম্মতিক্রমেই। সে অর্থে কোন আইনগত ভিত্তিভূমি নেই এই বিধির। মানা বা না-মানা বস্তুত ঐচ্ছিকই।

ব্যক্তিবিশেষের তরফে বা কোন রাজনৈতিক দলের তরফে যদি কারোর বিরুদ্ধে আদর্শ নির্বাচন বিধির লঙ্ঘনের অভিযোগ জমা পড়ে কমিশনের কাছে, ব্যাখ্যা চায় কমিশন। অভিযোগ খণ্ডন করে বা সত্যতা স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হয় বিধি ভঙ্গকারীকে। অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে নির্বাচন কমিশন লিখিতভাবে তিরস্কার করে থাকে অভিযুক্তকে। অনেকের মতে, যা নেহাতই লঘু দণ্ড মাত্র।

আরও পড়ুন,লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট আজ বিকেল ৫ টায়

আদর্শ নির্বাচনবিধি 'লঙ্ঘনের' পূর্ব নজির

২০১৭-র গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি এবং কংগ্ৰেস একে অপরের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ এনেছিল। বিজেপির অভিযোগ ছিল, নির্বাচন প্রক্রিয়ার ৪৮ ঘন্টা আগে সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে রাহুল গান্ধী বিধি ভেঙেছেন। কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ ছিল, নির্বাচনের দিন নিজের ভোটদানের পর মোদী আহমেদাবাদে 'রোড শো'-তে অংশ নিয়েছেন।

গোয়া বিধানসভার নির্বাচনের সময় অরবিন্দ কেজরিওয়ালও নির্বাচন কমিশনের তোপের মুখে পড়েছিলেন। কেজরিওয়াল বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেছিলেন, "ভোটাররা টাকা নিন কংগ্রেস বা বিজেপি-র থেকে, কিন্তু ভোটটা আম আদমি পার্টিকে দিন।" ভৎসর্না করেছিল কমিশন।

Read the full story in English

election commission Explained General Election 2019
Advertisment