ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম আসলে কী? কেন উদ্বিগ্ন বিশ্ব?

এখন প্রথম বিশ্বের দেশগুলি যদি অর্থের ক্ষমতায় ভ্যাকসিন নিতে শুরু করে আগে তাহলে বাকি দেশগুলির কী হবে? এখানেই উঠে আসছে 'ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম'-এ মতো শব্দ।

এখন প্রথম বিশ্বের দেশগুলি যদি অর্থের ক্ষমতায় ভ্যাকসিন নিতে শুরু করে আগে তাহলে বাকি দেশগুলির কী হবে? এখানেই উঠে আসছে 'ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম'-এ মতো শব্দ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

করোনা এখনও কমেনি। নিমূর্ল হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। সুস্থতার হার বাড়লেও সংক্রমণের রেকর্ড বৃদ্ধি ভীতি ছড়াচ্ছে গোটা বিশ্বে। একমাত্র ভ্যাকসিনই পারে সংক্রমণ আটকাতে, একথা মেনেই চলছে ভ্যাকসিন উৎপাদনের কাজ। কিন্তু করোনা লড়াইয়ের এই মঞ্চে যে শব্দটি এই মুহুর্তে জনপ্রিয় তা হল- ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম।

Advertisment

এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ছ'টি তাবড় ওষুধ প্রস্তুত সংস্থার সঙ্গে কয়েক কোটি বিলিয়ন ডলারের ভ্যাকসিন চুক্তি সেরে ফেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সংস্থারদের তরফে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশের সঙ্গে এমনটাই চুক্তি হয়েছে যে ৮০০ মিলিয়ন ডোজের ভ্যাকসিন পাবে আমেরিকা। অর্থাৎ হিসেব বলছে প্রতিটি আমেরিকাবাসীর জন্য ২টি করে ডোজ বরাদ্দ হয়েছে। চুক্তি থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খুব স্পষ্ট যখনই ভ্যাকসিন উৎপাদনে সাফল্য পাবে সংস্থারা আগে আমেরিকাকে সেই ভ্যাকসিন দিতে বদ্ধপরিকর থাকবে তাঁরা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে পৌঁছবে তার পড়ে।

আরও পড়ুন, করোনা থেকে সুস্থ হলেও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস, ময়নাতদন্তে উঠে এল নয়া তথ্য

Advertisment

শুধু আমেরিকা নয়, ব্রিটেনের তরফেও একাধিক ওষুধ প্রস্তুত সংস্থার সঙ্গে ৩৪০ মিলিয়ন ডোজের ভ্যাকসিন চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ইউরোপের অনেক দেশই এমন চুক্তি করেছে। সম্প্রতি রাশিয়া যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে সেই স্পুটনিক নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি বিশেষ কোনও দেশ। এমনকী চিনের তৈরি করোনা টিকাও প্রভাব ফেলতে পারে ভ্যাকসিন চাহিদায়। বরং সেদিক থেকে অক্সফোর্ড, মডার্ণার মত সংস্থারা অনেকটাই এগিয়ে। এখন প্রথম বিশ্বের দেশগুলি যদি অর্থের ক্ষমতায় ভ্যাকসিন নিতে শুরু করে আগে তাহলে বাকি দেশগুলির কী হবে? এখানেই উঠে আসছে 'ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম'-এ মতো শব্দ।

কেন এই বিষয়টি এতটা ভাবিয়ে তুলছে?

ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে এই আগাম চুক্তি ভ্যাকসিন উপলব্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে যে ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে তা পরিমাণে অল্প। অন্তত বিশ্বের জনসংখ্যার নিরিখে তা কিছুই নয়। এখন সেই সীমিত সংখ্যক টিকাও যদি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল আক্রান্ত দেশে না পাওয়া যায় তবে তা ভাবনার বিষয়।

আরও পড়ুন, মানবদেহেই রয়েছে করোনা প্রতিরোধী টি-সেল! প্রমাণ পেলেন গবেষকরা

এখন মনে হতে পারে বিশ্বের এত এত সংস্থারা তো ভ্যাকসিন তৈরি করছে। তাহলে সমস্যা কোথায় টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে? ধরা যাক, ১০০টি সংস্থা কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করছে। মনে রাখতে হবে এরা কিন্তু কেউই 'সফল হবেই' এমন আশা দেয়নি। যা পরিস্থিতি সেখানে খুব বেশি হলে ১০-১৫টি সংস্থা সাফল্যর সঙ্গে উৎপাদন চালাচ্ছে। এর মধ্যে অনেকের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলেছে ধনী দেশগুলি। তাহলে যে সংখ্যা পড়ে রইল, তা কি যথেষ্ট বাকি দেশের জন্য?

এখন প্রশ্ন হল দেশে তো না হয় ভ্যাকসিন আনা হল, কিন্তু কারা এই ভ্যাকসিন আগে পাবে? কেন আগে পাবেন? বিশেষজ্ঞদের মত, অবশ্যই যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁরাই আগে পাবে এক ভ্যাকসিন। এছাড়া ৬৫ বছরের উপরে যাঁদের বয়স তাঁদের এবং কোমর্বিডিটি রয়েছে- যেমন কার্ডিওভাসকুলার , ক্যানসার, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন।

কোনও দেশের জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদন করা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

দেশের লোকদের বিশ্বাস অর্জন এবং বিশ্বকে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে সব দেশই চাইছে নিজেরা ভ্যাকসিন প্রস্তত করতে। তাই একটা নয়, যত বেশি সংখ্যক সম্ভব ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে চাইছে তারা। আর এখান থেকে এটা স্পষ্ট যে নিজ শক্তি প্রদর্শনের জন্যই কিন্তু তড়িঘড়ি ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছে রাশিয়া এবং চিন। কারণ এখনও সেই সকল ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল হয়নি। কতটা সুরক্ষা দিচ্ছে এই ভ্যাকসিন সে বিষয়ে এখনঅ সন্দেহ রয়েছে বিজ্ঞানীমহলে।

আরও পড়ুন, অক্সফোর্ড-মডার্ণার থেকেও কার্যকারীতা বেশি এই ভ্যাকসিনের! কীভাবে কাজ করছে?

এমন ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজমের ঘটনা কি এই প্রথম?

একশ বছরের মধ্যে করোনার মতো এমন অতিমারী দেখেনি বিশ্ব। কিন্তু H1N1 ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা সোয়াইন ফ্লু-র সময়ে একই ভাবে ভ্যাকসিনের আগাম বুকিং করেছিল ধনী দেশগুলি। এর ফল স্বরূপ আফ্রিকার মতো দেশগুলিতে ভ্যাকসিন পৌঁছয় সময়েরও অনেক পরে।

তবে ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজম নিয়ে চর্চা বৃদ্ধি পেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ কোভিড ভ্যাকসিনের মজুত সংখ্যা থেকে ১০ শতাংশ অন্যান্য দেশের জন্য ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছে। যদিও তাঁরা একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে যে তাঁদের ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা ফুরলে তবেই সেই ছাড় দেবে তারা।

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus COVID-19