/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/05/gujrat-corona.jpg)
ছবি: জাভেদ রাজা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করতে চলতি মাসের ৬ তারিখে কেন্দ্রের কাছে দিল্লি এবং মুম্বই থেকে বিশেষজ্ঞ পাঠানোর অনুরোধ জানায় গুজরাট। পাশাপাশি সম্পূর্ণ কার্ফু জারি করা হয় রাজ্যের দুই বৃহত্তম শহর আহমেদাবাদ এবং সুরাটে। বন্ধ করে দেওয়া হয় দুধ এবং ওষুধ ব্যতীত সমস্ত পণ্যের সরবরাহ। গত দু'মাস ধরে ক্রমাবনতি হতে থাকা রাজ্যের এই হলো বর্তমান পরিস্থিতি।
গত ১৯ মার্চ প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গুজরাটে, এবং আজ সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে রাষ্ট্রীয় স্তরে মহারাষ্ট্রের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাজ্য। মৃত্যুর হারের তালিকাতেও পশ্চিমবঙ্গের পরেই গুজরাট, এবং উদ্বেগজনক ভাবে, মৃতদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সীরা রয়েছেন যথেষ্ট বেশি মাত্রায়। আরও চিন্তার কথা, মৃতদের মধ্যে স্রেফ এক শতাংশের বিদেশ থেকে সংক্রমণের যোগ রয়েছে, যদিও প্রবাসী গুজরাটিরা সংখ্যায় বিপুল।
কেন্দ্রের জারি করা ৬ মে'র এক বিবৃতিতে গুজরাট এবং পশ্চিমবঙ্গকে উদ্বেগের কারণ বলা হয়েছে, এবং গুজরাট প্রশাসন এখনও সন্তোষজনক উত্তর খুঁজছে: 'রোগীরা হাসপাতালে দেরিতে আসছেন' থেকে শুরু করে 'ভাইরাসের অন্য প্রজাতি' হয়ে 'তবলিঘি জামাত' পর্যন্ত, যদিও দিল্লিতে বিতর্কিত এই সংগঠনের সমাবেশ থেকে যে ১৩০ জন গুজরাটে ফেরেন, তাঁদের মধ্যে স্রেফ ১৪ জন করোনা পজিটিভ ঘোষিত হন, এবং মাত্র একজনের মৃত্যু হয়। মোটকথা, কোনও উত্তরই এখন পর্যন্ত ধোপে টেকে নি।
অন্যদিকে, করোনা মোকাবিলায় স্বচ্ছতার অভাবের জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। গত ৫ মে রাজ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর (৪৯টি) খবর জানায় বাংলা। কিন্তু বিজেপি-শাসিত গুজরাটে আপাতত মৃতদের বয়স অথবা পার্শ্বরোগ বা 'কোমরবিডিটি' সংক্রান্ত তথ্য আর প্রকাশ করা হচ্ছে না। পাশাপাশি আহমেদাবাদে এখন অধিষ্ঠিত হয়েছেন একদল নতুন আধিকারিক - নেতৃত্বে 'স্ট্যাচু অফ ইউনিটি' প্রকল্পের মূল কাণ্ডারি, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব রাজীব গুপ্তা।
বাংলায় করোনার আঁকাবাঁকা গতিপথ
কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের কাহিনী কারও অজানা নয়, কিন্তু করোনা যুদ্ধেও যে তার প্রতিচ্ছবি দেখা যাবে, এমনটা হয়তো ভাবেন নি অনেকেই। কিন্তু বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধেই যাচ্ছে পরিসংখ্যান: ৯.৭৫ শতাংশ (রাজ্যের হিসেব) হোক বা ১৩.২ শতাংশ (কেন্দ্রের হিসেব), দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার পশ্চিমবঙ্গেই।
গোড়া থেকেই সমস্যা ছিল। গত ১৮ মার্চ প্রথম যাঁর সংক্রমণ ধরা পড়ে, তিনি রাজ্য সরকারের এক আধিকারিকের পুত্র, যিনি লন্ডন থেকে ফিরে করোনা পজিটিভ হওয়া সত্ত্বেও দুদিন ধরে শহরময় চষে বেড়ান, যদিও অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। এর সাতদিন পর আসে প্রথম মৃত্যুর খবর, দমদমের এক ৫৭ বছর বয়সী বাসিন্দার।
কয়েকদিনের মধ্যেই রাজ্যে গঠিত হয়ে যায় 'ডেথ অডিট কমিটি', যা কিনা দেশের প্রথম। এই কমিটির কাজ হলো করোনায় মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা, এবং তারপর সার্টিফিকেট দেওয়া। এর ফলে অভিযোগ উঠল পরিসংখ্যান বিকৃতির। এর ঠিক একমাস পর বোঝা গেল ব্যবধানের বহর, যখন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা প্রথমবার পরিসংখ্যান ঘোষণা করলেন, যাতে দেখা গেল, ৫৭ জন "Covid-19 আক্রান্তের" মৃত্যু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু "সরাসরি Covid-19 এর কারণে" স্রেফ ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেই মনে করছে রাজ্য।
আরও পড়ুন: কাজ করছে মমতা সরকার, বিজেপির ‘অপপ্রচারের’ বিরুদ্ধে কোমর বাঁধছে তৃণমূল
উল্লেখ্য, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই তফাৎ এখন করতে শুরু করেছে একাধিক রাজ্য - করোনায় জর্জরিত মুম্বই সহ - যদিও কেন্দ্রের চাপে অডিট কমিটিকে কার্যত বাতিল করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্বয়ং। গত ২৯ এপ্রিল সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের নিজেদেরকে সংশোধন করে নিতে হবে, কারণ আমরা ভুল করে থাকি। আমি বিশেষজ্ঞ নই, কাজেই সবটা জানি না।" অডিট কমিটি নিয়ে তাঁর বক্তব্য, "এই কমিটি আমি তৈরি করিনি…কারা সদস্য তাও জানি না। মুখ্যসচিব দেখছেন বিষয়টা।"
যথানিয়মে ৪ মে মুখ্যসচিব বলেন যে "নিখোঁজ ডেটা" খুঁজে পেয়েছে প্রশাসন, এবং স্বীকার করে নেন যে সংখ্যায় গলদ রয়েছে। এর ফলে দ্রুতগতিতে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে বাংলায়। ৭ মে পর্যন্ত সেই সংখ্যা ছিল ১,৫৪৮, এবং মৃত্যুর সংখ্যা ১৫১। পাশাপাশি ফের স্বাস্থ্য বুলেটিনের ধরন বদলে আগের মতোই মোট আক্রান্তের সংখ্যা জানাচ্ছে রাজ্য, স্রেফ "সক্রিয় পজিটিভ কেস" নয়।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/05/gujrat-corona1.jpg)
বাংলায় পরীক্ষার হাল
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে ২১ এপ্রিল দুটি আন্তঃ-মন্ত্রক কেন্দ্রীয় দল (IMCT) রাজ্যে পাঠানো হয়, এখানকার Covid-19 যুদ্ধের তদারকি করতে। প্রায় রাতারাতি রাজ্যে বদলে যায় লড়াইয়ের গতিপথ, দিনে ৪০০-৫০০ পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় আড়াই হাজারে। রাজ্যের দাবি, এর আগে পরীক্ষার পরিমাণ বাড়ানো যায় নি, কারণ টেস্টিং কিট সরবরাহ করে নি কেন্দ্র। এবং এখনও র্যান্ডম টেস্ট শুরু হয় নি। রাজ্যের এক আধিকারিকের বক্তব্য, "প্রথমে যথেষ্ট পরিমাণে কিট পাঠায় নি কেন্দ্র, এখন আমরা বাজার থেকে কিনেছি।"
তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য ডাঃ শান্তনু সেন বলছেন, "আমরা কখনও তথ্য গোপন করার চেষ্টা করি নি। কেন্দ্র যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল না... এখন রাজ্যগুলোর ওপর দোষ চাপাচ্ছে।"
তবে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (NICED) এর অধিকর্তা শান্তা দত্ত এর আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছিলেন, "যথেষ্ট পরিমাণ কিটস আছে আমাদের... পরীক্ষার জন্য আরও নমুনা পাঠানো হোক আমাদের কাছে।"
কেন্দ্রীয় দলগুলি তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর ৬ মে রাজ্য সরকারকে লেখা একটি চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে Covid-19 এর মোকাবিলায় জনসংখ্যার তুলনায় পরীক্ষার হার অত্যন্ত কম..."
আরও পড়ুন: ’ঈদের আগে বাড়ি ফিরবে বলেছিল, কিন্তু সব শেষ’
"যথাসময়ে পদক্ষেপ নেয় নি রাজ্য", এই অভিযোগ আরও যাঁরা করছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছে কিছু ডাক্তারদের সংগঠন, যারা দাবি করেছে যে রাজ্যে সুরক্ষা সরঞ্জাম অর্থাৎ 'প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট'-এর তীব্র সঙ্কট রয়েছে। সংক্রমিতদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি হলেন স্বাস্থ্যকর্মী। অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস-এর সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, "প্রস্তুতির সময় দিয়েছিল লকডাউন। কিন্তু সরকার কিচ্ছু করে নি।"
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/05/bengal-corona.jpg)
বাংলায় মৃতদের প্রোফাইল
তথ্য প্রকাশ করার আপাত অনিচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে মৃত্যুর ক্ষেত্রেও, সে বয়সই হোক বা পার্শ্বরোগের বিশদ বিবরণ। কেন্দ্রীয় দলগুলির প্রকাশ্য মন্তব্যের তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যসচিব সিনহা বলেন, "মৃতদের অধিকাংশই বয়স্ক। সুতরাং আমাদের পরামর্শ হলো, বয়স্করা বাড়িতে থাকুন..." পরে তিনি ডেথ সার্টিফিকেটে সঙ্গতি আনতে বিধান দেন এক অভিন্ন ফরম্যাটের, যেখানে "মৃত্যুর তাৎক্ষণিক কারণ, পূর্ববর্তী কারণ এবং অন্তর্নিহিত কারণ" উল্লেখ করা হবে।
বাতিল হয়ে যাওয়ার আগে তাদের প্রথম রিপোর্টে ডেথ অডিট কমিটি একাধিক 'কোমরবিডিটি'-র উল্লেখ করে, যেমন কার্ডিওমায়োপ্যাথি-র সঙ্গে ক্রনিক কিডনির অসুখ, কিডনি ফেলিওর, এবং হৃদরোগ ও হাইপারটেনশন।
বিশদ বিবরণের অভাবের উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত এক ৭০ বছরের মহিলার কথা। তাঁর পুত্রের বক্তব্য অনুযায়ী, ২৪ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি, এবং পরের দিন সকালে পুত্র তাঁকে নিয়ে যান একটি বেসরকারি হাসপাতালে, যেখানে তাঁকে ভর্তি করতে অস্বীকার করা হয়, এবং এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। মহিলার পুত্র জানিয়েছেন, এনআরএস এবং এসএসকেএম, দুই হাসপাতালই তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ার পর বাড়ি চলে আসেন তাঁরা। পুত্র আরও বলছেন, "তার পরের দিন (২৬ এপ্রিল), মায়ের অক্সিজেন লেভেল পড়ে যায়। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পাই নি। বন্ধুদের সাহায্যে মাকে এনআরএস-এ নিয়ে আসি।" প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বলেন এমআর বাঙ্গুরে যেতে, যেহেতু এনআরএস-এ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই।
"বাঙ্গুরে গেলাম। কিন্তু অন-ডিউটি ডাক্তার বললেন তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় ওষুধও নেই, সরঞ্জামও নেই। উল্টে আবার আমাদের এনআরএস-এই ফিরতে বললেন," বলছেন মহিলার পুত্র। এবার তাঁর মাকে এনআরএস-এর একটি আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়, যেখানে তিনি নিজেই মাকে কোলে তুলে নিয়ে যান বলে তাঁর দাবি। সন্ধ্যাবেলা মাকে দেখতে এসে তিনি জানতে পারেন যে তাঁর মা আর নেই, এবং তাঁর Covid-19 পরীক্ষা করা হবে। এরপর ২৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য দফতর থেকে তাঁর কাছে ফোন আসে যে তাঁর মায়ের পরীক্ষার ফল পজিটিভ, সুতরাং গোটা পরিবারকেই ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে, করোনা পরীক্ষাও করাতে হবে। তবে তাঁর দাবি, "সরকারের তরফে কেউ আসেন নি আমাদের স্যাম্পেল নিতে।" এখানেই শেষ নয়, ২ মে কলকাতা পুরসভার তরফে ফোন আসে যে তাঁর মায়ের দেহ দাহ করা হয়েছে ২৯ এপ্রিল। এখানেও শেষ নয়। তিনি বলছেন, ৬ মে তাঁর কাছে ফের স্বাস্থ্য দফতরের ফোন আসে, "আপনার মা এখন কেমন আছেন?"
এনআরএস হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট তরুণকুমার পাঠক বলছেন, "কোনও রোগীর মৃত্যু হলে আমরা কিছু করতে পারি না। তাঁর পরিবার স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। কিন্তু পরিবারের তরফে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ এলে আমরা বিষয়টা দেখতে পারি।"
কী পদক্ষেপ বাংলায়
কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণকারী দলের আসার পর থেকে Covid-19 এর লড়াইয়ে শুধু যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে তাই নয়, কন্টেইনমেন্ট জোনগুলিতে আরও কড়া হাতে বলবৎ করা হচ্ছে লকডাউনও। রাজ্য সরকারের দাবি, ৭ এপ্রিল থেকে ৩ মে'র মধ্যে গুরুতর শ্বাশপ্রশ্বাস জনিত রোগ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় রোগের উপস্থিতি নির্ধারণ করতে ৫.৫৭ কোটি গৃহস্থালির সমীক্ষা করা হয়েছে, যা থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে যথাক্রমে ৮৭২ এবং ৯১,৫১৫ জনকে।
গুজরাটের বেহাল দশার কারণ
গুজরাটে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হয় বিমানবন্দরে যাত্রীদের স্ক্রিনিং, এবং প্রথম পজিটিভ কেস ধরা পড়ে ১৯ মার্চ। ততদিনে দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ রাজ্য করোনা কবলিত, এবং সংক্রমিতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে।
প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে সৌদি আরবের উমরাহ শহর থেকে ফেরত আসা রাজকোটের এক ৩২ বছরের বাসিন্দার। তিনি দ্রুত সেরে উঠলেও আহমেদাবাদের প্রথম করোনা রোগী, নিউ ইয়র্ক থেকে মৃদু উপসর্গ নিয়ে ১৪ মার্চ দেশে ফিরে আসা এক ২১ বছরের তরুণীকে টানা ৩২ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। ডাক্তাররা বলেন, ওই তরুণীর হাঁপানি থাকার কারণেই সম্ভবত এই দীর্ঘ হাসপাতাল বাস।
প্রথম দুটি কেসের পরেই উত্তরোত্তর চড়তে থাকে সংক্রমণ রেখা। রাজ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা ১০০ পেরোতে লাগে ১৭ দিন, কিন্তু স্রেফ ৯ এপ্রিলেই সংক্রমিত হন ৯০ জন - যাঁদের মধ্যে ৫৭ জন আহমেদাবাদের বাসিন্দা। প্রথম মৃত্যু হয় সুরাটের এক ৬২ বছরের ব্যবসায়ীর, রাজ্যে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার তিনদিনের মধ্যেই।
আরও পড়ুন: কোভিড রোগীদের ডিসচার্জের সংশোধিত নীতিতে কী বলা হয়েছে
আধিকারিকরা স্বীকার করে নিয়েছেন যে প্রথম থেকেই সতর্ক থাকলেও পরীক্ষা শুরু করতে দেরি করেছে গুজরাট। দীর্ঘ সময় ধরে পুণের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজি এবং মুম্বইয়ের কস্তুরবা গান্ধী হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হতে থাকে অধিকাংশ নমুনা। মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্তও দৈনিক পরীক্ষার গড় সংখ্যা ছিল স্রেফ ১৫, যা মাসের শেষে দাঁড়ায় ২০০-র কাছাকাছি। এপ্রিলের শেষে দিল্লিতে যেখানে প্রতি ১০ লক্ষ মানুষ পিছু ১,৪৯২ জনের পরীক্ষা হচ্ছিল, বা তামিলনাড়ুতে ৯৩০ জনের, তখন গুজরাটে পরীক্ষা হচ্ছিল ৭২১ জনের।
সেইসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি বলেন, "কিছু রাজ্য, যেখানে সংক্রমণের মাত্রা কম, সেগুলিকে আগে ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়। আমরাও যদি আরও আগে ছাড়পত্র পেতাম, তবে পরিস্থিতি হয়তো নিয়ন্ত্রণে থাকত।"
গুজরাটে বর্তমানে ২৪টি ল্যাবরেটরিতে করোনা পরীক্ষা করা হয়। পুল টেস্টিং শুরু হওয়ার পর থেকে দিনে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি স্যাম্পেল পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে রাজ্যের মোট সংক্রমিত এবং মৃতের ৭০ শতাংশই যে শহরের বাসিন্দা (৭,০১৩ টি সংক্রমণের মধ্যে ৪,৯৯১ টি; ৪২৫টি মৃত্যুর মধ্যে ৩২১টি) সেই আহমেদাবাদে কিন্তু দৈনিক পরীক্ষার হার স্রেফ ২১ শতাংশ। বস্তুত, আহমেদাবাদ পুরসভা এলাকায় ২৩ এপ্রিলের পর কমে যায় পরীক্ষার হার, ২৪ ঘণ্টায় ২,৪০০ নমুনার তুলনায় ১ মে মাত্র ১,৩০০ টি, এবং ৫ মে আরও কমে ১,০৭২ টি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/05/gujrat-corona2.jpg)
পুরসভার এক শীর্ষকর্তার ব্যাখ্যা, "আমরা যখন ২,৪০০-র বেশি পরীক্ষা করছিলাম, আমাদের হাসপাতালগুলিতে সমস্ত করোনা পজিটিভ রোগীদের জন্য জায়গা ছিল। প্রতিদিন কমতে থেকেছে সেই জায়গা, কাজেই এখন যথেষ্ট গ্যাপ দিয়ে পরীক্ষা করতে হচ্ছে, যাতে ওই সময়ের মধ্যে আমরা জায়গা বাড়িয়ে নিতে পারি।" ওই কর্তার মতে দ্বিতীয় কারণ হলো, বাড়তে থাকা সংক্রমণের ফলে নতুন নমুনা পরীক্ষা কমতে বাধ্য। "রোগীকে ডিসচার্জ করার আগে অন্তত তিনবার পরীক্ষা করাতে হয়, যার ফলে কমে যায় আমাদের আরও বেশি নতুন নমুনা পরীক্ষা করার ক্ষমতা।"
রাজ্যের ক্রমবর্ধমান মৃত্যুহারের প্রেক্ষিতে এই যুক্তি হজম করা শক্ত। প্রতি ১,০০০ টি সংক্রমণ পিছু ৫৯টি মৃত্যু হচ্ছে গুজরাটে, যা কিনা রাষ্ট্রীয় গড়ের চেয়ে অনেক বেশি (১,০০০ পিছু ৩৩), এমনকি মহারাষ্ট্রের (১,০০০ পিছু ৩৮) চেয়েও বেশি।
এর বিপরীতে দেশে করোনা সংক্রমণের তালিকায় শীর্ষে মহারাষ্ট্র, যেখানে সংক্রমণ এবং মৃত্যু যত বেড়েছে, তত বেড়েছে পরীক্ষার হারও।
গুজরাটে মৃতদের বয়স
আহমেদাবাদের 'হটস্পট' দানি লিমদা এলাকার ১৬ বছরের এক কিশোরীর মৃত্যু হয় ১৬ এপ্রিল। Covid-19 বুলেটিনে কোনও পার্শ্বরোগের উল্লেখ না থাকলেও আহমেদাবাদ সিভিল হসপিটালের ভারপ্রাপ্ত সুপারিন্টেনডেন্ট ডাঃ জয়প্রকাশ ভি মোদী আমাদের জানান যে ওই কিশোরীর লুপাস নামক অটোইমিউন রোগ ছিল।
তার পরের দিনের মৃতদের মধ্যে ছিল আহমেদাবাদের আরেক হটস্পট বেহরামপুরার এক ১৭ বছরের কিশোরী। আবারও একবার সরকারিভাবে মৃত্যুর কারণ Covid-19 (কোনও কোমরবিডিটি ছাড়াই)। মৃতার মা, যিনি তাঁর আরও দুই সন্তান সমেত কোয়ারান্টিনে রয়েছেন, আমাদের বলেন যে তাঁর মেয়ের মানসিক সমস্যা ছাড়া আর কোনও রোগ ছিল না। "২২ এপ্রিল সারারাত ঘুমোয় নি। বলতেও পারছিল না কিছু, আমি বুঝতে পারছিলাম না কী সমস্যা হচ্ছে। পরের দিন খুব জ্বর আসে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়," বলেন ওই কিশোরীর মা, যিনি মেয়েকে নিয়ে যান পুরসভা-চালিত সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল হাসপাতালে।
আরও পড়ুন: করোনা হিসেব- নতুন সংক্রমণের সংখ্যা কমছে
চিকিৎসকরা তাঁকে জানান, মৃগী অর্থাৎ এপিলেপসির ওষুধ খাচ্ছে তাঁর মেয়ে। "কিন্তু আর কিছু বলেন নি কোনও ডাক্তার। আমি কখনও ওর মৃগীরোগের কোনও লক্ষণ দেখি নি," বলছেন শোকার্ত মা, যিনি মেয়ের অন্ত্যেষ্টির সময়ও উপস্থিত থাকতে পারেন নি। ওদিকে পুরসভার ডেপুটি কমিশনার ওমপ্রকাশ মাচরা, যিনি প্যাটেল হাসপাতালের দায়িত্বে রয়েছেন, আমাদের জানান, "মেয়েটির আগে থাকতেই কিছু অসুখ ছিল, জন্মের পর থেকেই ওষুধও খাচ্ছিল।"
তবে এরপর থেকে ব্যাখ্যার স্রোত ক্রমে ক্ষীণতর হয়ে এসেছে। এপ্রিল মাসের শেষে দেখা যায়, রাজ্যে ২১৪ জনের মধ্যে ৪০ জনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কোনও পূর্ববর্তী অসুখ দর্শানো যাচ্ছে না। এবং ৬ মে পর্যন্ত সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৯ জনে (যখন মোট মৃতের সংখ্যা ৩৯৬)। এবং মৃতদের প্রায় ১০ শতাংশের বয়স একচল্লিশের কম।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অতুল প্যাটেল, যিনি করোনা যুদ্ধে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাজ করছেন, গত সপ্তাহে বলেন, "এমনিতেই গুজরাটে হাই ব্লাড প্রেশার (হাইপারটেনশন) এবং ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা খুব বেশি। করোনাভাইরাসের প্রভাবে দ্রুত অবনতি হতে থাকে এইসব রোগীর স্বাস্থ্যের। অনেকে রোগীই বড় দেরি করে ফেলেন হাসপাতালে আসতে, যখন ফুসফুস প্রায় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, এবং আমরা দেখি, ঘণ্টা ছয়েকের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন তাঁরা।"
দেরিতে জানানো
মৃতদের মধ্যে রয়েছেন বেহরামপুরার পুরসভার সদস্য বদরুদ্দিন শেখ (৬৭), যাঁর মৃত্যু হয় ২৬ এপ্রিল, করোনা ধরা পড়ার ১২ দিনের দিন। তাঁরই সতীর্থ, জামালপুরা-খাড়িয়ার ৫৩ বছর বয়সী কংগ্রেস বিধায়ক ইমরান খেড়াওয়ালাকে হাসপাতাল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় ২৭ এপ্রিল।
মনে করা হচ্ছে, দুজনেই বেরহামপুরা, জামালপুর, এবং দরিয়াপুরের মতো আহমেদাবাদের সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত এলাকায় করোনা সচেতনতা প্রচার, এবং সেখানকার বাসিন্দাদের উপসর্গ দেখা দিলে তা জানানোর অনুরোধ করতে গিয়ে, আক্রান্ত হন। পুরসভায় ৭ মে পর্যন্ত নথিভুক্ত ৪,৬৪৯ টি কেসের মধ্যে ৩৪ শতাংশই এসেছে জামালপুর, শাহপুর, দরিয়াপুর, এবং খাড়িয়ার মতো এলাকা থেকে। শহরের ১০টি রেড জোনের মধ্যে পড়ছে এই চারটি ওয়ার্ডই।
আরও পড়ুন: কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন- করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির সন্ধানপ্রক্রিয়া
খেড়াওয়ালার বিশ্বাস, সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত এলাকায় সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থাই দেরিতে করোনা পরীক্ষা করানোর কারণ। অধিকাংশ এলাকাই বস্তি, যেখানে ২০০২ সহ অন্যান্য দাঙ্গার পর ক্রমশ বসবাস করতে এসেছেন মুসলমান বাসিন্দারা। পুরসভার এক আধিকারিক স্বীকার করেছেন, এসব এলাকায় বড় একটা উপস্থিতি নেই পুরসভার, তা সে সাফাইয়ের কাজ হোক বা স্বাস্থ্য।
তবলিঘি জামাত যোগ, যা নিয়ে ক্রমাগত বিবৃতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী রুপানি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী নীতিন প্যাটেল এবং প্রায় প্রত্যেক বিজেপি শীর্ষনেতা, এই অনাস্থা বাড়াতে সাহায্য করেছে। খেড়াওয়ালা বলেন, "আমি সম্প্রদায়ের সকলকেই বলেছি, বিন্দুমাত্র উপসর্গ দেখা দিলেই ডাক্তারের কাছে যেতে। কিন্তু জ্বর বা কাশি হলে পটাপট ওষুধ খেয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। তাঁদের বিশ্বাস, হাসপাতালে গেলে আর ফেরা যাবে না।"
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/05/gujrat-corona3.jpg)
ইন্দোর, যেখানে এর আগে মৃত্যুহার হটস্পটগুলির মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ, একইভাবে সংখ্যালঘু এলাকায় সচেতনতা প্রচার করে সাফল্য পেয়েছে, যেখান থেকে অনেক সংক্রমণের ঘটনা ঘটছিল। বর্তমানে ইন্দোরের মৃত্যুহার ১৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশেরও কম। মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে ভরসা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে উপসর্গ-বিহীন সংক্রমণের ক্ষেত্রে হোম কোয়ারান্টিনের নিয়ম বদলে দেয় প্রশাসন। মহারাষ্ট্রে সচেতনতা প্রচারে শুরু হয়েছে উর্দু ভাষার ব্যবহার।
পুরসভার ডেপুটি কমিশনার মাচরা উদাহরণ দিচ্ছেন জামালপুরের এক ৩৫ বছরের বাসিন্দার, যাঁর মৃত্যু হয় ২৯ এপ্রিল। "কোনও কোমরবিডিটি ছিল না, কিন্তু উপসর্গ দেখা দেওয়ার ছ'দিন পর পরীক্ষা করান ওই রোগী," বলছেন মাচরা। ততদিনে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে মাচরা এও বলছেন যে অধিকাংশই মৃতেরই পূর্বরোগের ইতিহাস ছিল, যা হয়তো তাঁরা নিজেরাও ভর্তি হওয়ার আগে জানতেন না।
শাহ-এ-আলম এলাকার এক ৬৬ বছরের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মচারী জ্বর, বুকে ব্যথা, এবং কাশি হওয়ার তিনদিন পর্যন্ত কোনও ডাক্তার দেখান নি। তাঁর হাইপারটেনশন এবং ডায়াবেটিস থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসের উপসর্গ সম্পর্কে স্থানীয় ডাক্তারকেও কিছু জানান নি তাঁর ৩৯ বছর বয়সী পুত্র। ২৯ এপ্রিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হয় ওই প্রৌঢ়ের। পুত্র পরে বলেন তাঁর বাবা মনোযোগ দিয়ে করোনা সংক্রান্ত খবর শুনতেন বা পড়তেন, সুতরাং উপসর্গ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল তাঁর, কিন্তু "ডাক্তারের কাছে যান নি পরিবারের সমস্যা হবে ভেবে"।
খেড়াওয়ালা বলেন, "আমি নিজের পরীক্ষা করাই কর্তৃপক্ষের ওপর ভরসা বাড়াতে... (কিন্তু) যা পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, এতে লাভ হবে না। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা।"
বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক ভূষণ ভটের কাছে যেমন স্পষ্ট যুক্তি রয়েছে, কেন কন্টেইনমেন্ট জোনের মধ্যে অবস্থিত হিন্দু-অধ্যুষিত খাড়িয়া এলাকায় আন্দাজ ৪৪০টি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ৭ মে পর্যন্ত। "আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে খাড়িয়া থেকে ঢোকা-বেরোনো বন্ধ না করা," বলছেন ভট।
মাচরার বক্তব্য, নিম্ন-আয়ের মানুষও পরীক্ষা করাতে আসতে চান না, কোয়ারান্টিনে থাকতে হলে উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে, এই ভয়ে। বিশেষ করে যদি উপসর্গ-বিহীন হন, তবে তাঁদের বোঝানো কঠিন, বলছেন তিনি।
আরও পড়ুন: সার্স মহামারীর থেকে শিখেছিল পূর্ব এশিয়া; করোনার থেকে কী শিখবে ভারত?
তাঁর বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা যায় আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালে ভর্তি খোকরা এলাকার বাসিন্দাদের কথায়। নটবরভাই দাভি (৪৫) আমাদের বলেন, "আমরা সবজি বেচি, আমাদের স্রেফ এলোপাথাড়ি তুলে নিয়ে এসেছে। এই অন্যায় কেন? আমাদের মধ্যে ২৪ জন নাকি পজিটিভ, অথচ আমাদের জ্বর পর্যন্ত নেই।"
সবজি বিক্রেতারা আঙুল তুলছেন ক্রেতাদের দিকে "যাদের গাড়ি আছে কাজেই তারা কোনোদিনও পজিটিভ হবে না", কিন্তু পুরসভা এই বিক্রেতাদের 'সুপার স্প্রেডার' আখ্যা দিয়েছে। সেইমতো প্রায় ১৪ হাজার বিক্রেতাকে পরীক্ষা করে 'হেলথ কার্ড' দেওয়া হবে।
দিল্লির এইমস-এর অধিকর্তা ডাঃ রণদীপ গুলেরিয়া, যিনি কেন্দ্র থেকে রাজ্যে আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একজন, শনিবার আহমেদাবাদের কিছু হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তিনিও রাজ্যে ব্যাপক সংখ্যক মৃত্যুর কারণ হিসেবে সামাজিক কলঙ্ককেই তুলে ধরেন। "এখনও ভয় রয়েছে," ডাঃ গুলেরিয়া বলেন। তাঁর বক্তব্য, মৃদু উপসর্গ থাকলেও রক্তে বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে অক্সিজেনের মাত্রা (যাকে পরিভাষায় বলা হয় 'হ্যাপি হাইপক্সিয়া')।
এবার কিছু মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ ট্রাস্ট নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলিকে পরিণত করেছে Covid-19 কেন্দ্রে। এই ধরনের প্রথম কেন্দ্র হলো হজ হাউজ, যা বিপুল সাড়া পেয়েছে, কারণ রমজানের মাসে অনেকেই এগুলিকে আরও গ্রহণযোগ্য মনে করছেন।
রোগের চরিত্র
আহমেদাবাদের ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডাঃ রাজেশ মিশ্র বলছেন, রোগ হিসেবে Covid-19 আগেভাগে নির্ণয় করা কঠিন। সরাসরি ফুসফুসের ওপর আঘাত হানতে পারে এই রোগ, উচ্চ শ্বাসনালীতে কোনোরকম চিহ্ন না রেখেই। "তথ্য বলছে, টেস্টের ফল নেগেটিভ আসতে পারে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই। সেই কারণেই কেউ সন্দেহভাজন হলে তৃতীয় বা চতুর্থবার তাঁর পরীক্ষার ফল পজিটিভ হতে পারে।"
ডাঃ মিশ্রর মতে, রক্তে অক্সিজেনের অভাব শনাক্ত করতে কিছু নির্দিষ্ট সূত্রের প্রয়োজন। "সেই অনুযায়ী ওষুধ দিতে পারা যাবে... এটা শুরুতেই করতে পারলে রোগীর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।" এই মর্মে একটি 'ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল', যার পোশাকি নাম 'WHO Solidarity' ট্রায়াল, যার মূলে রয়েছে কিছু মিশ্র ওষুধ এবং সাধারণ ওষুধের তুলনামূলক কার্যকারিতা সংক্রান্ত গবেষণা, আপাতত চলছে শহরের বিজে মেডিক্যাল কলেজে।
স্টারলিং হাসপাতালের ডাঃ অতুল প্যাটেল বলেছেন যে গুজরাটে সম্ভবত করোনাভাইরাসের তীব্রতর 'এল-স্ট্রেইন' (L-strain)-এর প্রবেশ ঘটেছে, যেমন ঘটেছিল চিনে, অপেক্ষাকৃত মৃদু 'এস-স্ট্রেইন' (S-strain)-এর নয়। তবে এ বিষয়ে একমত নন বিশেষজ্ঞরা। খোদ আইসিএমআর, এবং বিজে মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ এম এম ভেগাড়, উভয়েই বলেছেন যে এই তত্ত্বের সমর্থনে এখনও কোনও প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন: টেস্ট বেশি হচ্ছে তামিলনাড়ুতে, হিসেবে অনেক পিছিয়ে বাংলা
গুজরাটের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের মুখ্যসচিব জয়ন্তী রবি বলছেন, প্রায় ৮০ শতাংশ করোনাভাইরাস সংক্রমণ উপসর্গ-বিহীন, এবং ১৫ শতাংশের মৃদু উপসর্গ থাকার ফলে আপাতত সরকারের নজর "সেই পাঁচ শতাংশ রোগীর ওপর, যাঁরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি হন"। তাঁর কথায়, "রাজ্যের প্রায় ৬ কোটি জনসংখ্যার প্রত্যেককে পরীক্ষা করা তো সম্ভব নয়, কিন্তু আসল কথা হলো যথাযথ নজরদারি। সংক্রমণ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা।" পাশাপাশি "বাড়তে থাকা 'হার্ড ইমিউনিটি'-র" কথাও বলেন তিনি।
আহমেদাবাদ পুরসভার এক আধিকারিক বলছেন, মৃতের সংখ্যার চেয়েও যা তাঁদের বেশি ভাবাচ্ছে, তা হলো "প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু"। তাঁর বক্তব্য, "শহরের জনসংখ্যা ৮০ লক্ষ, সুতরাং যদি এক শতাংশের বা ৮০ হাজারেরও কম গুরুতর সংক্রমণ হয়, আমরা সামাল দিতে পারব না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই সমস্যা সর্বত্র। অতএব বিকল্প হলো রোগের গতিপথে বাধা খাড়া করা, যাতে পালা করে আক্রান্ত হন মানুষ।"
এই কারণেই আপাতত রোগের মৃদু উপসর্গ থাকলে হোম আইসোলেশনের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
কেন কার্ফু
আহমেদাবাদ এবং সুরাটে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করার পাশাপাশি কন্টেইনমেন্ট জোনে বিএসএফ এবং সিআইএসএফ-এর বাহিনী মোতায়েন করেছে রাজ্য। তাদের নিয়ে কেন্দ্র নাখুশ, এই জল্পনার মাঝেই রাজ্য প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আন্তঃ-মন্ত্রক কেন্দ্রীয় দল আহমেদাবাদ এবং সুরাট পরিদর্শন করে "সন্তোষ" প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, "প্রশাসনিক সক্রিয়তা এবং শুরু থেকেই ব্যাপক হারে পরীক্ষার ফলে রোগী চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সাফল্যে সন্তোষ জানিয়েছে দল।"
শনিবার বিপুল পরিসরে সাফাই এবং জীবাণুনাশ অভিযান শুরু করে আহমেদাবাদ, যাতে কাজে লাগানো হচ্ছে দমকলের গাড়ি, ড্রোন, এবং অন্যান্য সরঞ্জাম। এবং ইতিমধ্যেই আশার আলো দেখতে পাচ্ছে গুজরাট: ৫ মে'র তথ্য অনুযায়ী, সংক্রমণ দ্বিগুণ হতে এখন লাগছে ১২.৬ দিন, যেখানে এর আগে লাগছিল মাত্র ছ'দিন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন