আফগানিস্তান থেকে ফেরা দাদা জগজিৎকে জড়িয়ে ধরে আবেগপ্রবণ অমরজিৎ। বিমানবন্দরে দাদাকে দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি বোন। তিনি বললেন, “এক বছর ধরে ওঁর জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। আমরা সবসময় একসঙ্গেই ছিলাম। এবার আর দাদাকে ছাড়ব না। ওখানে ওঁর অনেক কষ্ট হয়েছে। এবার আমি দাদা এবং তাঁর সন্তানদেরও এখানে চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করব।” আফগানিস্তানের জালালাবাদে একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরের মালিক জগজিৎ। ছেলেদের নিয়ে আরও কমপক্ষে ২৮ আফগান শিখের সঙ্গে বুধবারই আফগানিস্তান থেকে তাঁরা ভারতে এসেছেন।
শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটি ও ভারত সরকারের সমন্বয়ে আফগানিস্তান থেকে এই শিখদের আনা হয়েছে। গত জুন মাসে কাবুলের একটি গুরুদ্বারে হামলা চায়াল জঙ্গিরা। তারপর থেকে আফগান মুলুকে শিখদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ চরমে ওঠে। জুন মাসে গুরদ্বারে জঙ্গি হামলায় দু'জন নিহত হয়েছিলেন। শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটির কর্তারা জানিয়ছেন, সম্প্রতি ৬৫-৭০ জনকে আফগানিস্তান থেকে আনা হয়েছে। আরও অনেককে ফেরানোর তোড়জোড় চলছে। তাঁদের ভিসার আবেদনগুলি মঞ্জুর হয়ে গেলেই বিমানের ব্যবস্থা করে তাঁদের ভারতে ফিরিয়ে আনা হবে।
আরও পড়ুন- উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ভাইরাসের দাপট, ২০ হাজার ছুঁইছুঁই দেশের দৈনিক সংক্রমণ
এদিকে, দাদাকে কাছে পেয়ে চোখের জল আর বাগ মানছে না বোনের। অমরজিৎ আরও বলেন, "দু'বছর আগে আফগানিস্তানে গ্রেনেড হামলার সময় জগজিৎ গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তিনি এখন শুনতে বা বলতে পারেন না। আমিও আফগানিস্তানে ছিলাম। তবে সেই সময়ে আমি পালিয়ে আসতে পেরেছিলাম। কিন্তু তারপর থেকেই বড্ড অসহায় বোধ করছিলাম। তালিবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর সেখানকার পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। অনেক চেষ্টা করেও দাদাকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। তবে এখন যে তিনি এখানে চলে এসেছেন, তাতে আমি ভীষণ খুশি।" আফগানিস্তান থেকে বুধবার ভারতে এসেছেন সদ্য বিবাহিত মনজিৎ ও গুরমিতও। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রাণ বাঁচাতে রাতারাতি সবকিছু ছেড়ে তাঁরা চলে এসেছেন।
আরও পড়ুন- স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে নাশকতার ছক, দিল্লি পুলিশকে বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ
আফগান মুলুক থেকে প্রাণের দায়ে ভারতে চলে এসেছেন কমলজিৎ। তিনি আফগানিস্তানে একটি ভেষজ ওষুধের দোকান চালাতেন। তিনি বলেন, “সবকিছু এখন ঝাপসা লাগছে। আফগানিস্তানে থাকা কঠিন ছিল। আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে দোকানে যেতে দিচ্ছিলেন না। কারণ তাঁরা হামলার ভয় পেয়েছিলেন। আমরা আমাদের দোকান ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছি। গত কয়েকদিন তুমুল আতঙ্কে কেটেছিল।”
দিল্লি বিমানবন্দরে অনেককেই তাঁদের আত্মীয়দের স্বাগত জানাতে দেখা গিয়েছে। এই পরিবারগুলির অনেক সদস্যই কিছুদিন আগেই আফগানিস্তান থেকে ভারতে চলে এসেছিলেন।