ট্রেনে কাটা পড়ে গবাদি পশুর মৃত্যু রুখতে এবার অভিনব পরিকল্পনা নিচ্ছে রেলমন্ত্রক। রেলট্র্যাকের ধার বরাবর ফেন্সিং বা বেড়া দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল। আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে এই তৎপরতা নেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ফেন্সিং বা বেড়াই উত্তর প্রদেশে প্রয়াগরাজ-ভিত্তিক উত্তর মধ্য রেলওয়ের অধীনে বসানোর ভাবনা রেলের। কারণ, বছরের অধিকাংশ সময়ে এই রুটেই ট্রেনে কাটা পড়ে সবচেয়ে বেশি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে রেলট্র্যাকে কমপক্ষে ২ হাজার ৬৫০টি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। ট্রেনে কাটা পড়ে এই মৃত্যু মিছিল এড়াতে প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ রুটেই আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে ফেন্সিং তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলমন্ত্রক। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো জানিয়েছেন, রেল ট্র্যাকের ধারে আগামী ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হবে।
রেলমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, রেলট্র্যাকে গবাদি পশু এসে পড়ায় অক্টোবর মাসের প্রথম ৯ দিনে কমপক্ষে ২০০ টি ট্রেনের পরিষেবা ব্যাহত হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল নতুন চালু হওয়া সেমি-হাই-স্পিড বন্দে ভারত এক্সপ্রেসও। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত রেলট্র্যাকে গবাদি পশু ঢুকে পড়ায় প্রায় ৪ হাজার ট্রেনের পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো বলেন, “রেলট্র্যাক বরাবর বেড়া দেওয়া নিয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ চলছে। আমরা দুটি আলদা ডিজাইন দেখেছি। একটির অনুমোদন হয়েছে। যেটি একটি মজবুত প্রাচীর। নকশাটি তৈরি হয়ে গেলে আগামী ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে আমরা রেলপথের ১ হাজার কিলোমিটার জুড়ে এই ধরনের বেড়া তৈরির পরিকল্পনা করছি।"
আরও পড়ুন- ‘আকাশ ছুঁয়ে’ গড়লেন ইতিহাস! প্রথম মহিলা সেনা স্কাইডাইভারের স্বীকৃতি পেলেন ল্যান্স নায়েক মঞ্জু
তিনি আরও জানিয়েছেন, রেল লাইনের পাশে এই ফেন্সিং দেওয়া হলে এটা শুধুই গবাদি পশুদেরই রক্ষা করবে না, এর ফলে আশেপাশের এলাকার মানুষজনও সুরক্ষিত থাকবেন। তথ্য বলছে, ২০১২১-২২ সালে গোটা দেশে ট্রেনে কাটা পড়ে ২৬ হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছিল। রেলওয়ে নিরাপত্তা কমিশনারের নির্দেশ অনুযায়ী একটি ট্রেন ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে গেলে ট্র্যাকের ধারে পাঁচিল বা ফেস্নিং তৈরি করা আবশ্যক।
দিল্লি-হাওড়া এবং দিল্লি-মুম্বই করিডোরগুলিতে প্রতি ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ট্র্যাকের ধারে ফেন্সিং দেওয়াটা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই রয়েছে।
আরও পড়ুন- ‘সরকার ফেলার বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’! ইডি সমন প্রসঙ্গে মন্তব্য হেমন্ত সোরেনের
তবে রেল লাইনের ধারে কিসের ফেন্সিং বা বেড়া দেওয়া হবে সেটাই এখন মন্ত্রকের কর্তারা ভেবে দেখছেন। কারণ এর আগে রেল লাইনের ধারে বেড়া দেওয়ার অভিজ্ঞতা রেলের ক্ষেত্রে খুব একটা সুখকর ছিল না। কারণ, লোহার তৈরি ওই বেড়া বহু জায়গাতেই চুরি হয়ে গিয়েছিল। এমনকী বেশ কিছু এলাকায় রেলের ফেন্সিং ভাঙচুর করতেও দেখা গিয়েছে।
দেশের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে বাসিন্দারা রেল লাইনের ধার বরাবর বেড়া বা ফেন্সিং দেওয়ার বিষয়টি একেবারেই পছন্দ করেন না। কারণ, তাঁদের একটি বড় অংশ রেললাইন পেরিয়েই যাতায়াত করেন। এর আগে দিল্লি-আগ্রা রুটে রেলট্র্যাকে ব্যবহৃত কংক্রিটের স্লিপার বার দিয়ে তৈরি প্রসারিত জায়গায় বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতাও রেলের জন্য মোটেই সুখকর ছিল না।