সেই ১৯৩৪ সাল থেকে অযোধ্যার বাবরি মসজিদে শুক্রবার ছাড়া প্রার্থনা করতেন না মুসলিমরা, এই বক্তব্যের জবাবে অযোধ্যা মামলার এক আবেদনকারী মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টকে জানালেন, তার কারণ, এছাড়া প্রার্থনা করার অনুমতি পান নি তাঁরা।
আবেদনকারী এম সিদ্দিকের তরফে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ-সদস্যের সংবিধান বেঞ্চকে সিদ্দিকের উকিল রাজীব ধাওয়ান জানান, "হিন্দুরা বলেন, ১৯৩৪ সালের পর কোনও মুসলিম সেখানে প্রার্থনা করেন নি...এবং এই যুক্তি দিয়ে নিজেদের বক্তব্য সমর্থন করছেন...এর কারণ হলো আপনারা প্রার্থনা করতে দেন নি। তার ওপর বলছেন নিয়ন্ত্রণের কথা।"
বিচারপতি গগৈ ছাড়াও বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি এস এ বোবড়ে, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস এ নাজির। তাঁদের সামনে শুনানি চলছে অযোধ্যার বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমির ত্রিমুখী বিভাজন নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১০ সালে দেওয়া এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: অযোধ্যা জমি মামলার আবেদনকারীর উপর হামলা
ধাওয়ানকে বিচারপতি বোবড়ের প্রশ্ন, "...কোনও মুসলিম কি সেখানে গিয়ে প্রার্থনা করতে না পেরে কোনও পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এই বলে যে, 'আমাকে প্রার্থনা করতে দেওয়া হচ্ছে না'?"
জবাবে ধাওয়ান বলেন যে একটি রিপোর্ট জমা করেছিলেন ওয়াকফ ইন্সপেক্টর, যা থেকে বোঝা যায় যে মসজিদের ভিতরের প্রাঙ্গণে শুধুমাত্র শুক্রবার প্রার্থনা করতেন মুসলিমরা। তাঁর আরও বক্তব্য, মসজিদের চাবি ছিল মুসলিমদের কাছেই, কিন্তু পুলিশ শুক্রবার ছাড়া মসজিদ খোলার অনুমতি দিত না, যার ফলে সেদিন মসজিদ খুলে ঝাড়ামোছা করে প্রার্থনা হতো।
বেঞ্চ এও জানতে চায়, যে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছিলেন যে মুসলিমদের প্রার্থনা করতে দেওয়া হচ্ছে না, তাঁকে সওয়াল করা হয়েছে কিনা। উত্তরে ধাওয়ান বলেন, "আমরা কেবলমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যের সত্যতা সম্পর্কে আগ্রহী।"
বাবরি মসজিদের কেন্দ্রস্থিত গম্বুজের নীচে ১৯৪৯ সালের ২২ এবং ২৩ ডিসেম্বর কিছু হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি রেখে দেওয়া হয়, সেকথার পুনরাবৃত্তি করে ধাওয়ান বলেন, "পরবর্তী ঘটনাবলী" একটি "পরিকল্পিত, গোপন হামলার" দিকে ইঙ্গিত করেছে। তাঁর কথায়, মন্দিরের সমর্থকরা বলেন, মূর্তিগুলি নিজেরাই "আবির্ভূত" হয়, যাকে বলা হয় "স্বয়ম্ভূ"। "বাবরির ভেতর মূর্তির আবির্ভাব কোনও মিরাকল নয়। এটি একটি পরিকল্পিত, গোপন হামলা," বলেন ধাওয়ান। ফৈজাবাদের তৎকালীন জেলাশাসক কে কে নায়ারের বিরুদ্ধে "চক্রান্তের" অভিযোগ তুলে ধাওয়ান বলেন, পরবর্তীকালে বিজেপির পূর্বসূরি ভারতীয় জনসংঘের হয়ে লোকসভা নির্বাচন লড়েন নায়ার।
আরও পড়ুন: অযোধ্যা মামলার আইনজীবীকে হুমকি, নোটিস জারি দুজনের বিরুদ্ধে
ধাওয়ান আদালতে আরও বলেন যে, মন্দিরের সমর্থকরা স্রেফ রামের তথাকথিত জন্মস্থান নয়, গোটা এলাকাটির ওপর দাবি জানাচ্ছেন "স্বয়ম্ভূ" যুক্তির ভিত্তিতে। সেই যুক্তি যদি আদালতে গ্রাহ্য হয়, তবে মুসলিমদের ভাগে কিছুই থাকে না।
এই প্রেক্ষিতে বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের প্রশ্ন, "কোনও স্থান যদি বিচারাধীন ব্যক্তির রূপ নেয়, কারণ সেই স্থানে কোনও দেবতার জন্ম অথবা বিবাহ হয়েছিল, তবে কি সেই স্থান-সংলগ্ন জায়গাও সেই স্থানেরই অংশ হয়ে যাবে না?" উত্তরে ধাওয়ান বলেন, "সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে সেখানে মুসলিমরা প্রার্থনা করছিলেন না।"
অন্যদিকে, রাজীব ধাওয়ানেরই আবেদনের ভিত্তিতে মঙ্গলবার চেন্নাইয়ের বাসিন্দা অশীতিপর প্রফেসর এন শানমুগমের নামে নোটিশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। শানমুগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ধাওয়ানকে মুসলিমদের হয়ে কেস লড়ার কারণে হুমকি দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগপত্রের সঙ্গে আরও এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজও জুড়ে দেন ধাওয়ান।