নাটকীয় মোড় নিল আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি ঘিরে প্রতিবাদ। ভারতের সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চল জুড়ে নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে চলতে থাকা বিক্ষোভের মাঝে কিছুদিন আগে প্রদত্ত ভারত রত্ন সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন প্রয়াত কিংবদন্তী অসমিয়া সঙ্গীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার পরিবার।
হাজারিকাকে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান মরণোত্তর প্রদান করে মোদী সরকার। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে রয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, যা আপাতত রাজ্য সভায় বিচারাধীন আছে, কিন্তু চলতি বাজেট অধিবেশনেই যা পাস হওয়ার সম্ভাবনা।
আরও পড়ুন, ভারতরত্ন হচ্ছেন প্রণব, ভূপেন
ভূপেন হাজারিকার আমেরিকা-প্রবাসী পুত্র তেজ হাজারিকা জানিয়েছেন, তিনি তাঁর প্রয়াত পিতার তরফে এই মরণোত্তর সম্মান গ্রহণ করবেন না। সোমবার আসামের এক স্থানীয় টিভি চ্যানেলকে তিনি জানান, যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রেক্ষাপটে আসামের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি ভারত রত্ন প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা ৬৭ বছর বয়সী এই প্রকাশক, লেখক তথা শিক্ষক এই মর্মে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেন নি।
আসামের মুখ্যমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা হৃষিকেশ গোস্বামী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, "ওঁর পরিবার ইতিমধ্যেই এই পুরস্কারকে জনসমক্ষে স্বাগত জানিয়েছেন। ভারত রত্ন প্রত্যাখান করে তেজ হাজারিকা কী বলতে চাইছেন যে, তাঁর বাবা এই সম্মানের যোগ্য নন? উনি কেন আমেরিকায় বসে এই বিল নিয়ে মন্তব্য করছেন?" তেজ হাজারিকার এহেন সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের আশঙ্কায় পদ্মশ্রী ফেরালেন নবীন ভগিনী গীতা মেহতা
উল্লেখ্য, শনিবার আসামের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, "ভূপেন হাজারিকাকে ভারত রত্ন দিতে পেরে আমরা গর্বিত।" পাশাপাশি বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল প্রসঙ্গে মোদী বলেছিলেন, "নাগরিকত্ব বিলের জন্য উত্তর-পূর্বের কোনও সমস্যা হবে না।"
মূলত কবি, সুরকার এবং সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে খ্যাত ভূপেন হাজারিকা অসমিয়া ভাষাতেই লিখলে বা গাইলেও তাঁর সঙ্গীত ছুঁয়েছিল দেশ বিদেশের অগণিত ভক্তের হৃদয়। তাঁর লেখার মূলে সবসময়ই ছিল মানবতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। ১৯৮৭ সালে তিনি পান সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, এবং ১৯৯২ সালে ভূষিত হন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে। ২০১৭ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসামের লোহিত নদের ওপর ভারতের দীর্ঘতম সেতু (৯.১৫ কিমি) উদ্বোধন করে সেটির নামকরণ করেন ভূপেন হাজারিকার নামে।
Read the full story in English