নিজের সদ্যোজাত কন্যা মারা গেছে কিছুক্ষণ আগে। সমাধিস্থলের মাটি খুঁড়ে মেয়েকে সমাধিস্থ করার আয়োজন করছেন শিশুটির বাবা। তিন ফুট মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো কাপড়ে জড়ানো একটি ব্যাগ। পরবর্তীতে যা ঘটল তাতে রুদ্ধশ্বাস, হাড়হিম অবস্থা সকলের। ব্যাগ খুলতেই ভিতর থেকে ভেসে এলো কান্নার সুর। ভিতরে পাওয়া গেল একটি মাটির হাড়ি, তার মধ্যে শুয়ে একটি শিশুকন্যা। কেঁদে চলেছে অবিরাম।
এমন হাড়হিম করা ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের বরেলিতে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে এই শিশুটিকে উদ্ধার করেছিলেন হিতেশ কুমার সিরোহী নামের এক ব্যবসায়ী। নিজের সদ্যোজাত মৃত কন্যাকে সমাধিস্থ করতে গিয়ে সেখান থেকেই উদ্ধার করেন অপর নবজাতিকাকে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হিতেশের স্ত্রী বৈশালী বরেলিতে সাব ইনস্পেক্টর পদে কর্মরত। বুধবার তাঁর প্রসবযন্ত্রণা শুরু হলে তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সেখানেই সাত মাসের প্রিম্যাচিওর কন্যার জন্ম দেন বৈশালী। কিন্তু জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায় সদ্যোজাত কন্যাটি। এরপরই সন্ধ্যায় মৃত কন্যাকে সমাধিস্থ করতে এসে গর্ত খুঁড়তেই মাটির তিন ফুট গভীরে পাওয়া যায় একটি মাটির হাঁড়ি, যার মধ্যে একটি শিশুকন্যা শুয়ে আছে। তৎক্ষণাৎ তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন হিতেশ।
আরও পড়ুন, মৃত সদ্যজাতকে সমাধিস্থ করতে গিয়ে উদ্ধার জীবিত শিশুকন্যা
শিশু চিকিৎসক ডাক্তার রবি খান্না জানান, এখনও শিশুটির পরিবারের কোনও খোঁজ পাওয়া না গেলেও, ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে সে। তিনি বলেন, "আর কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর যদি তাকে পাওয়া যেত, ডিহাইড্রেশন মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারত।"
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শিশুটির ওজন ছিল ১.২ কেজি, ইতিমধ্যেই ৬৫ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হয়েছে তার। তবে রক্তে কমেছে প্লেটলেটের সংখ্যা। এমনকি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশনও ধরা পড়েছে। যদিও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে শিশুটিকে। ডা: খান্না বলেন, "শিশুটির প্রশ্বাস এখন অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে। আমরা সবরকম চেষ্টা করছি তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে।"
আরও পড়ুন- ‘অচৈতন্য ধাক্কা’! ট্রেনে কাটা পড়া থেকে বাঁচলেন মহিলা
স্থানীয় সূত্রে খবর, জন্মের ৪-৫ দিনের মধ্যেই জীবিত শিশুটিকে সমাধিস্থ করা হয়। প্রাথমিকভাবে উদ্ধারকৃত শিশুকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরবর্তীতে তাকে ডা: খান্নার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সুপার (সিটি) অভিনন্দন সিং বলেন, "শিশুটিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যকে আমরা অস্বীকার করছি না। শিশুটির মা-বাবার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। মনে করা হচ্ছে, শিশুটির মা নিজে একজন সিঙ্গল মাদার। সেই কারণেই হয়তো কবর দিয়ে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ (হত্যার চেষ্টা) এবং ৩১৭ (১২ বছরের কম বয়সী শিশুকে পরিত্যাগ করা) ধারার অধীনে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে।"
Read the full story in English