তুমুল অশান্তির আবহেই শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভায় পাস হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এদিন রাজ্যসভায় ক্যাব পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। উল্লেখ্য, গত সোমবার লোকসভায় পাস হয় এই বিল। এদিকে, ক্যাবের তীব্র বিরোধিতা করে এদিন রাজ্যসভায় সোচ্চার হয় বিরোধীরা। অন্যদিকে, ক্যাব বিরোধী আন্দোলনে রীতিমতো জ্বলছে আসাম, ত্রিপুরার মতো উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি। পরিস্থিতি সামলাতে সে রাজ্যে সেনা পাঠানো হয়েছে।
সংসদের উচ্চকক্ষে বিলটি পাস হতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে বলেন, 'এটি একটি ঐতিহাসিক দিন'।
A landmark day for India and our nation’s ethos of compassion and brotherhood!
Glad that the #CAB2019 has been passed in the #RajyaSabha. Gratitude to all the MPs who voted in favour of the Bill.
This Bill will alleviate the suffering of many who faced persecution for years.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 11, 2019
এদিন বিল নিয়ে আলোচনার শুরুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২০ শতাংশ ধর্মীয় সংখ্যালঘুর হার কমেছে। হতে পারে তাঁরা নিহত বা ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এদেশে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের অবস্থা ভয়াবহ। ক্যাবের ফলে এই ধরনের লক্ষাধিক মানুষের সুবিধা হবে।' তাঁর আশ্বাস, 'এই বিলের ফলে ভারতীয় মুসলমানদের শঙ্কার কোনও কারণ নেই।'
রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ আনন্দ শর্মা বলেন, 'এই বিল দেশের সংবিধানের ভিত্তির উপর আঘাত। যে বিল আপনারা পেশ করেছেন তা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের উপর আক্রমণ। বিল সংবিধান ও গণতন্ত্র বিরোধী। নৈতিকতার বিচারে এই বিল মেনে নেওয়া যায় না।'
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় রাজ্যসভায় সরব হন তৃণমূলের ডেরেক ও'ব্রায়েন। ক্যাবকে 'বাঙালি ও সংবিধান বিরোধী' বলে মন্তব্য করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে ক্যাব ও এনআরসি লাগু করতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি। জেডিইউ, বিজেডি ক্যাবের সপক্ষে লোকসভায় ভোট দিয়েছে। এদিন রাজ্যসভায় তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেন এই তৃণমূল সাংসদ।
রাজ্যসভায় কি এই বিলের পক্ষে প্রয়োজনীয় বিধায়কের সমর্থন মিলবে? প্রাথমিকভাবে এই বিষয়টি নিয়েই শাসক বিরোধী শিবির বিশেষ চিন্তিত ছিল। কারণ, রাজ্যসভায় ক্যাব পাস করানো শাসক বিজেপির কাছে সম্মানের লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এবার সেই লড়াইতে সম্মানের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়া গেল বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে, বুধবার সকালেই বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেখানে তিনি বলেন, 'এই বিল যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দেশের ইতিহাসে এটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।' ক্যাব নিয়ে 'বিরোধীরা পাকিস্তানের সুরে কথা বলছে' বলেও তোপ দাগেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, রাজ্যসভার মোট আসন ২৪৫ হলেও বর্তমানে সাংসদ রয়েছেন ২৪০ জন। ফলে, ক্যাব পাসে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১২১টি ভোট। রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ-সংখ্যা ৮৩। এনডিও ও অন্যান্য দলের সমর্থন মিলিয়ে এই বিলের পক্ষে সাংসদ আছেন ১২৮ জনের সমর্থন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই সংখ্যাটি বিল পাসের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যার থেকে মাত্র সাত জন বেশি। অন্যদিকে, বিরোধীদের পক্ষে রয়েছে ১০৯টি ভোট। ফলে, সমীকরণের একটু উনিশ বিশ হলে খেলা ঘুরে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভাতেও পাস হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব)।
আরও পড়ুন: “নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর ছক”
লোকসভায় ৩৩৪-১০৬ ভোটের ব্যবধানে পাস হয়েছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯। কিন্তু, রাজ্যসভায় শাসক ও বিরোধী শিবিরের ব্যবধান কম থাকায় ভোটাভুটি নিয়ে উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মতো। এরই মাঝে বুধবার দুপুরে রাজ্যসভায় ক্যাব পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
তবে, লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯-এর পক্ষে ভোট দিলেও রাজ্যসভায় ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করেছে শিবসেনা। যা চিন্তা বাড়িয়েছিল পদ্ম শিবিরের। সেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন, তামিল অভিবাসীদের বিষয়টি বিলে অর্ন্তভুক্ত না করলে তাঁর দলের তিন সাংসদ রাজ্যসভায় বিলের পক্ষে ভোট দেবেন না। অন্যদিকে, শরিক জেডিইউতেও বিল ঘিরে কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। নীতীশের দল লোকসভায় ক্যাবের পক্ষে ছিল। কিন্তু, সহ-সভাপতি প্রশান্ত কিশোর গতকালই দলের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করেন। পরে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হয় পবন বর্মার তরফেও। ফলে, জেডিইউ রাজ্যসভায় ক্যাব সমর্থন করবে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিল বিজেপি।
আরও পড়ুন: মার্কিন কমিশনের প্রতিক্রিয়া সঠিক নয়, শাহের উপর নিষেধাজ্ঞার জবাব দিল ভারত
অন্যদিকে, শিরোমণি আকালি দল, এআইএডিএমকে, বিজু জনতা দল, ওয়াইএসআর কংগ্রেস নাগরিকত্ব বিলের পক্ষেই ভোট দেবে বলে স্থির ছিল। মনে করা হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত একই পথের পথিক হতে পারে জেডিইউ। এদিকে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম, ডিএমকে ও সমাজবাদী পার্টির সদস্যরা যে বিলের বিপক্ষে রাজ্যসভায় ভোট দেবেন তা নিশ্চিতই ছিল। টিআরএস লোকসভায় বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়। কিন্তু, রাজ্যসভায় তাদের অবস্থান স্পষ্ট ছিল না।
এদিন সকালে রাহুল গান্ধী টুইটে ক্যাবের বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি লিখেছেন, 'এই বিল উত্তর পূর্বাঞ্চলকে জাতিগত ভাবে বিশুদ্ধ করার চেষ্টা। উত্তর পূর্বাঞ্চলের উপর অপরাধমূলক আক্রমণ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের পাশেই রয়েছি।'
The CAB is a attempt by Modi-Shah Govt to ethnically cleanse the North East. It is a criminal attack on the North East, their way of life and the idea of India.
I stand in solidarity with the people of the North East and am at their service.https://t.co/XLDNAOzRuZ
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) December 11, 2019
এদিকে, লোকসভায় ক্যাব পাস ঘিরে উত্তাল উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি। এদিন আসাম ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বের নানা জায়গায় বনধ চলছে। ত্রিপুরায় বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবাও। জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এই পরিস্থিতেতেই রাজ্যসভায় পাস হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।
Read the full story in English