Coronavirus (COVID-19) India updates: আগামী রবিবার করোনাভাইরাস মহামারীর মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনতা কার্ফুর জেরে প্রায় ৩,৭০০ টি যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করতে চলেছে ভারতীয় রেল। ইতিমধ্যে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আজ, শুক্রবার, বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৬, মৃতের সংখ্যা চার। আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৩ জন।
শুক্রবার করোনাভাইরাসের প্রতিরোধ সংক্রান্ত আলোচনা করতে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী। ওদিকে তাঁদের প্রাত্যহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আধিকারিকরা জানান, রবিবারের জনতা কার্ফুর ফলে দেশে ব্যাহত হবে রোগের বিস্তার, যেহেতু সংক্রমণ শৃঙ্খল ভেঙে দেওয়া হবে।
পাশাপাশি রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে এক ৭০ বছরের ইতালীয় পর্যটকের মৃত্যুকে করোনা জনিত মৃত্যু বলে মানতে অস্বীকার করেন আধিকারিকরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়ালের বক্তব্য, "জয়পুরে মৃত ইতালীয় ছিলেন একজন ৭০ বছর বয়সী চেন স্মোকার। দুবার তাঁর করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে। অন্য একটি হাসপাতালে তাঁর অন্যান্য রোগের চিকিৎসা চলাকালীন হৃদরোগে মৃত্যু হয় তাঁর। একে কীভাবে COVID-19 জনিত বলা যেতে পারে?"
রবিবার কার্যত অচল রেল
জনতা কার্ফুর জেরে রবিবার একাধিক ট্রেন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে রেলের তরফে জানানো হল। রবিবার দূরপাল্লার ১,৩০০ টি ট্রেন ও ২,৪০০ টি প্য়াসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। অন্য়দিকে, জনতা কার্ফু চলাকালীন কোনও যাত্রী স্টেশনে থাকতে চাইলে তাঁর জন্য় থাকার ব্য়বস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে আইআরসিটিসি। উল্লেখ্য়, রবিবার সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জনতা কার্ফু পালনের কথা বলেছেন মোদী।
অন্য়দিকে, করোনা মোকাবিলায় রেল স্টেশনে অনির্দিষ্টকালের জন্য় বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ফুড প্লাজা, রিফ্রেশমেন্ট রুম, কিচেন। রবিবার থেকে ক্য়াটারিং পরিষেবাও বন্ধ রাখা হচ্ছে। শুধুমাত্র স্ন্য়াকস, চা, কফি পরিবেশন করা হবে বলে জানা যাচ্ছে।
বাংলায় করোনা আক্রান্ত আরও এক
কলকাতায় শুক্রবার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল দুই। শহরের দ্বিতীয় করোনা আক্রান্ত বছর বাইশের তরুণ বালিগঞ্জের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। বর্তমানে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি রয়েছেন তিনি। গত ১৩ মার্চ লন্ডন থেকে কলকাতায় ফেরেন ওই তরুণ। এরপর থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত ছিলেন তথাকথিত হোম কোয়ারেন্টাইনে। পরে ওই তরুণের জ্বর হওয়ায় ১৭ মার্চ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সূত্রের খবর, কলকাতার তরুণের দুই সহপাঠীও কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যথাক্রমে চণ্ডীগড় ও ছত্তিসগড়ের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এর আগে গত মঙ্গলবার কলকাতায় প্রথম করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছিল। ওই তরুণও লন্ডন থেকেই শহরে ফিরেছিলেন। টালিগঞ্জের বাসিন্দা ওই তরুণও বর্তমানে বেলেঘাটা আইডি-তে ভর্তি। তাঁর মা রাজ্য সরকারের এক উচ্চপদস্থ আমলা। হাসাপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। পরিবারের অন্য যাঁরা কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন, তাঁদের শরীরেও মারণ ভাইরাসের জীবাণু নেই।
স্বেচ্ছা কোয়ারান্টাইনে বিজেপির বসুন্ধরা রাজে, পুত্র দুষ্মন্ত, তৃণমূলের ডেরেক ও'ব্রায়েন
করোনা-আক্রান্ত বলিউড গায়িকা কণিকা কাপুরের সঙ্গে একই পার্টিতে উপস্থিত থাকার ফলে আপাতত স্বেচ্ছা কোয়ারান্টাইনে রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে এবং তাঁর পুত্র তথা বিজেপি সাংসদ দুষ্মন্ত সিং। এবং একটি সংসদীয় বৈঠকে দুষ্মন্তের পাশে বসার কারণে স্বেচ্ছা কোয়ারান্টাইনে গেলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন।
5.30 pm.
Friday, March 20.
Home.
New Delhi.
My statement on video.Am on self-isolation and following all protocol, as I was sitting right next to MP Dushyant for two hours at a #Parliament meeting on March 18. #COVID19 pic.twitter.com/vX01w9o1D8
— Citizen Derek | নাগরিক ডেরেক (@derekobrienmp) March 20, 2020
কণিকাই করোনা-আক্রান্ত প্রথম বলিউড সেলিব্রিটি। 'বেবি ডল'-এর গায়িকা কিছুদিন আগেই লন্ডন থেকে ফিরেছেন। ইনস্টাগ্রামে নিজেই তাঁর আক্রান্ত হওয়ার খবর শেয়ার করেন ৪১ বছরের কণিকা। তিনি লেখেন, "বিগত চারদিন ধরে আমার জ্বরের লক্ষণ ছিল। পরীক্ষা করানোর পর বোঝা যায় আমি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত। আমার পরিবার এবং আমি পুরোপুরি কোয়ারান্টাইনে রয়েছি। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে চলেছি।"
তিনি আরও লেখেন, "দশদিন আগে ভারতে ফেরার পর বিমানবন্দরে রুটিন পদ্ধতিতেই স্ক্যান করা হয়। চারদিন আগেই লক্ষণ দেখা গিয়েছে। এই পর্যায়ে, আমি অনুরোধ করব প্রত্যেকে যেন স্বেচ্ছা আইসোলেশনে যান এবং লক্ষণ দেখা গেলে পরীক্ষা করান। আমি ঠিক আছি, কেবল জ্বর ও সামান্য উচ্চ তাপমাত্রা রয়েছে। দায়িত্বশীল নাগরিকের প্রত্যেকে নিয়ম মানা প্রয়োজন।"
মুম্বই, পুণেতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ অফিস-কাছারি
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে শুক্রবার জানান যে মুম্বই ও পুণে সমেত মহারাষ্ট্রের সমস্ত বড় শহরে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে অফিস-কাছারি। এই অচলাবস্থার আওতায় আসবে মুম্বই ও তার সংলগ্ন মহানগর অঞ্চল, পুণে, পিম্পরি-চিঞ্চওয়াড় এবং নাগপুর। ঠাকরে আরও বলেন যে সমস্ত সরকারি অফিসে স্রেফ ২৫ শতাংশ কর্মীই হাজিরা দেবেন।
তিনি জানান, চালু থাকবে সমস্ত জরুরি পরিষেবা, যেমন খাদ্য, দুধ, এবং ওষুধ। খোলা থাকবে ব্যাঙ্কও। এবং এই মুহূর্তে মুম্বইয়ের গণপরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার কথা নাকচ করে দেন ঠাকরে।
এ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের শিকার হয়েছেন ৫২ জন, এবং এই সপ্তাহে মুম্বইয়ে মৃত্যু হয়েছে একজন Covid-19 রোগীর। আক্রান্তদের অধিকাংশই বিদেশ সফর করেছিলেন, জানান ঠাকরে।
এখনও করোনা-মুক্ত আসাম, কেরালায় আক্রান্ত ৩৮
একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে আসামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, রাজ্যে এ পর্যন্ত ৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তবে মেলে নি করোনার জীবাণু। আগামীকাল থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত জরুরি পরিষেবা বাদে আসামের সমস্ত সরকারি অফিসে রোটেশনের ভিত্তিতে কাজ করবেন ৫০ শতাংশ কর্মচারী, জানান শর্মা। তিনি আরও জানান, রবিবার থেকে আসামে আগত সমস্ত বিমান এবং ট্রেন যাত্রীর হাতে করা হবে ১৪ দিনের 'হোম কোয়ারান্টাইন' স্ট্যাম্প।
ওদিকে শুক্রবার কেরালায় ১২ জন নতুন করে আক্রান্ত হওয়ায় সেরাজ্যে এক ধাক্কায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী ভিএস সুনীল কুমার জানান, এরনাকুলম জেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচজন বিদেশি, যাঁরা সকলেই ৬০ থেকে ৮৫ বছর বয়সী। এর আগে এঁদের দলেরই করোনা-আক্রান্ত এক ৫৭ বছরের সদস্য মুন্নারের কোয়ারান্টাইন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে চলে যান কোচি বিমানবন্দরে।
মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়েছেন, ওই পাঁচজন ছাড়াও কাসারাগোড়ে ছ'জন, এবং পালাক্কড়ে একজন আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে।
ইরানে আটক ১৬ জন কাশ্মীরী তীর্থযাত্রী আক্রান্ত
ইরানের ভারতীয় দূতাবাস শুক্রবার আরও একটি তালিকা প্রকাশ করে জানায়, ইরানে আটক ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের মধ্যে আক্রনাত হয়েছেন আরও ২৬ জন। এঁদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন কাশ্মীরের বাসিন্দা। উল্লেখ্য, বর্তমানে ইরানি শহর কোম-এ আটকে পড়েছেন ৮০০ জনের বেশি ভারতীয় তীর্থযাত্রী, যাঁদের অধিকাংশই লাদাখের বাসিন্দা।
এদিকে শুক্রবার জনসাধারণের উদ্বেগ দূরীকরণে হোয়াটসঅ্যাপে 'MyGov' নামক একটি হেল্পডেস্ক চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন জানিয়েছেন, এখনও 'কমিউনিটি ট্রান্সমিশন'-এর স্তরে পৌঁছয় নি Covid-19, এবং এই সংক্রান্ত সমস্ত গবেষণার উপর নজর রাখছে সরকার।