মেঘালয় রাজ্য বিজেপি সহ-সভাপতি বার্নার্ড মারাক ওরফে রিম্পুর ফার্ম হাউস থেকে মিলল বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক সহ কিছু অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। মেঘালয় পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে বিজেপি নেতার ফার্ম হাউসে এদিন অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক সামগ্রী। তার মধ্যে রয়েছে ৩৫ টি জেলটিন স্টিক, ১০০টি ডেটোনেটর, সহ বিপুল পরিমান বিস্ফোরক।
মঙ্গলবার সন্ধে ৭.১৫ মিনিট নাগাদ হাপুর জেলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মেঘালয়ের সহ-সভাপতিকে যোগী রাজ্যের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। উত্তরপ্রদেশে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন রিম্পু। মেঘালয়ে তাঁর খামারবাড়ির আড়ালে যৌনপল্লি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এর আগে মেঘালয় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করে। সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির পুলিশকে রিম্পুর সম্পর্কে অবগত করা হয়। উত্তরপ্রদেশে ওঁর খোঁজ মেলে। পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ সিং জানিয়েছেন, আমরা সূত্র মারফত জানতে পারি, তিনি হাপুরের দিকে যাচ্ছেন। আমরা হাপুর পুলিশকে খবর দিই। তার ৩০ মিনিটের মধ্যে তাঁকে আটক করা হয়।
মঙ্গলবারই রিম্পুর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে মেঘালয়ের আদালত। গত শনিবার মেঘালয় পুলিশের বিশেষ অভিযান চলে নেতার ফার্মহাউসে। আগে জঙ্গি ছিলেন রিম্পু। বর্তমানে রাজ্য বিজেপির পদাধিকারী। আর তাঁর খামারবাড়ি-ই কি না মধুচক্রের আসর! ২২ জুলাই পুলিশ পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার সদর দফতর তুরার উপকণ্ঠে ইডেনবাড়িতে অবস্থিত খামারবাড়ি থেকে ৪০০ বোতল মদ এবং ৫০০ প্যাকেট অব্যবহৃত কনডম এবং গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। সেই সঙ্গে খামারবাড়ি থেকে পাঁচ নাবালককেও উদ্ধার করা হয় এবং ৭৩ জন নারী-পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: <ফের কুপিয়ে খুন কর্ণাটকে, প্রশ্নের মুখে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা>
জেলার পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ সিং রাঠোর জানিয়েছেন, জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিটের একটি দল এবং পুলিশ উদ্ধারকৃত শিশুদের জামাকাপড় এবং বই সংগ্রহ করতে খামারবাড়িতে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে তিনি বলেন বিজেপি ওই নেতার বিরুদ্ধে এবার বেআইনি বিস্ফোরক রাখার অভিযোগে মামলা রুজু করা হবে।
অভিযানের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে টিএমসি। রাজ্য টিএমসি নেতা জর্জ বি লিংডোহ অভিযোগ করেন, ২০১৯ সাল থকেই বেআইনি কার্যকলাপ চালানো হত খামার বাড়িতে। পুলিশের ব্যবস্থা নিতে ৩ বছর সময় কেন লাগল সেই প্রশ্ন ও তিনি তোলেন।
বর্তমানে গারো আদিবাসী স্বশাসিত জেলা পরিষদের সদস্য রিম্পু আগে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন গারো ইনসার্জেন্ট গোষ্ঠী অচিক ন্যাশনালিস্ট ভলান্টিয়ার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। পৃথক গারো রাজ্যের জন্য তাঁরা লড়াই করতেন। তার পর অস্ত্র ফেলে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসেন। যুক্ত হন বিজেপির সঙ্গে। তাঁর দাবি, এই ফার্মহাউসে কোনও অনৈতিক কাজ হয় না। কিন্তু পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে মানবপাচারের মামলা রুজু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, রিম্পুর বিরুদ্ধে অন্তত ২৫টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। জঙ্গি গোষ্ঠী ভেঙে দেওয়ার পরও অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত রিম্পু। তার মধ্যে তুরা মার্কেটে তোলাবাজি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অস্ত্র কারবার, পতিতাপল্লি চালানো, বেআইনি মদ বিক্রি, অবৈধ লটারি টিকিট বিক্রি, জবরদখল, জমি মাফিয়া সবই রয়েছে।
আরও পড়ুন: <রানওয়ে থেকে ছিটকে গেল বিমান, আতঙ্কের মাঝে প্রাণে বাঁচলেন কলাকাতাগামী ৯৮ যাত্রী>
এদিকে., বিজেপি রিম্পুর পাশে রয়েছে। তারা বলেছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার রিম্পু। তাঁকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। কারণ গারো পাহাড়ে তাঁর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি আর্নেস্ট মাওরি বলেছেন, “তাঁর ফার্মহাউসে সম্মানীয় মানুষজন, পরিবার থাকতে আসে। সেটাকে পতিতালয় বলা বরদাস্ত করা হবে না। এই রিসর্ট তিন বছর ধরে চলছে। এতদিন কোনও অভিযোগ ওঠেনি কেন!” এই প্রসঙ্গে শাসকদল এনপিপি নীরব। আগামী বছরই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই শাসকশিবিরে ফাটল ধরেছে। বৃহস্পতিবার পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বার্নার্ড এন মারাকের খামারবাড়ি থেকে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক সামগ্রী এবং ট্রাডিশ্যানাল কিছু অস্ত্র খুঁজে পাওয়া গিয়েছে” এব্যাপারে পৃথক একটি মামলা দায়ের করা হবে”।