ফণীর পূর্বাভাস কানে এসেছে দু'দিন আগে থেকেই। কিন্তু বৃহস্পতিবার পুরীর সকাল দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে ঝড়ের অপেক্ষায় আছে সৈকত শহর পুরী। 'জগন্নাথ ধামে' অন্য় আর পাঁচটা দিনের মতোই সকালটা ছিল রীতিমতো রৌদ্রজ্জ্বল, তবে সঙ্গী ছিল গরম। কিন্তু বেলা একটু বাড়তেই আশঙ্কার মেঘ ঘণীভূত হতে থাকে। সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে আকাশ ঢাকতে থাকে মেঘে এবং এরপরই শুরু হয় হালকা বৃষ্টি। তবে একটানা বৃষ্টি তখনও হয়নি। বরং দুপুরের দিকে হাওয়ার গতি একটু বাড়ছিল। আর অন্যদিকে ক্রমশ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছিল সমুদ্র। এদিন পুরীতে একেবারে উত্তাল সমুদ্র...যা দেখলেই উদ্বেগ বাড়তে বাধ্য।
পুরীতে সমুদ্র সৈকতে কাউকেই নামতে দিচ্ছে না উপকূলরক্ষী ও পুলিশ। বিস্তীর্ণ সৈকত জুড়ে চলছে কড়া নজরদারি। প্রশাসনের তরফে সতর্কতার বার্তা বারে বারে ঘোষণা করা হচ্ছে মাইকে। সটান জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কেউ এলে ফিরে যেতে বলুন। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার পুরী থেকে ইতিমধ্যে মোট তিনটি ট্রেন ছেড়েছে বাংলা অভিমুখে। এছাড়া মেরিন ড্রাইভ রোডের ওপর থেকে ছেড়েছে এসি ভলভো বাস। দিনভর সেখানে দীর্ঘ লাইন ছিল পর্যটকদের। বেসরকারি ভলভো ছাড়াও কলকাতায় ফেরার জন্য় ওড়িশা সরকার প্রচুর বাসের ব্যবস্থা করেছে। পর্যটকদের চোখে-মুখে এদিন ফেরার তাড়া স্পষ্ট ছিল।
আরও পড়ুন- ফণী সতর্কতায় কলকাতা বিমানবন্দরে কাল থেকে বিমান ওঠানামা বন্ধ
স্থানীয় প্রশাসন একাধিকবার ঘোষণা করেছে সমস্ত লজ, হোটেল বা হলিডেহোম ফাঁকা করে দিতে হবে। আমাদের হলিডেহোমে এসে বলে গিয়েছে, নতুন করে কোনও বুকিং যেন না নেওয়া হয়। যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দিতে বলা হয়েছে। নবদ্বীপ, ব্যারাকপুর ও হাওড়া থেকে আমার এখানে আজ মোট পাঁচ জন এসেছেন। তাঁরা সবাই বেরিয়ে গিয়েছেন। যাঁরা আজ রওনা দেবেন না, তাঁদের ফেরত যাওয়া সত্যিই মুশকিল হয়ে যাবে। হাওড়া থেকে গাড়ি আসছে না। আগামী দু'দিন সব ট্রেনই বাতিল হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- ‘ফণী’র আগমন বার্তায় উড়ে গেল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ছোটো ধ্বজা
ঝড় শুরু হলেই সমস্যা শুরু হবে। আমার এখানে ইনভার্টার রয়েছে। তবে তাতে কোনও লাভ হবে না। ইলেকট্রিকের তার ওভারহেড। ঝড় শুরু হলেই বিদ্যুতের লাইন কেটে দেবে। কখন বিদ্যুৎ আসবে, কোনও ঠিক নেই। ইনভার্টারও সেভাবে কাজ করবে না। চার-পাঁচ ঘণ্টা চলার পরই বন্ধ হয়ে যাবে। তখন রাতগুলো রোজ অন্ধকারেই কাটবে। সে আর এক অশান্তি। দোকানপাঠ বন্ধ হয়ে যাবে। কিছুই কিনতে পারব না। খেতেও পারা যাবে না। বিদ্য়ুৎ না থাকায় আবার অ্য়াকোয়াগার্ডও বন্ধ হয়ে যাবে। পানীয় জলও মিলবে না। আমাদের এখানে জেনারেটর নেই, তাই পাম্পও চলবে না। জলের সমস্যা হবেই।
আরও পড়ুন- মাঝরাতে বাংলায় আছড়ে পড়ছে ফণী, বলছে গুগল ম্যাপ
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে সব দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। বিচের সব দোকান উঠে গিয়েছে। সৈকতের টপকে জল মেরিন ড্রাইভ রোডের গার্ড ওয়ালে ধাক্কা দিচ্ছে। মনে হয়, কালই রাস্তায় জল চলে আসবে। ফাইলিনের সময় রাস্তায় জল চলে এসেছিল। রাস্তার বালি পরিস্কার করতে সে সময় দু'দিন সময় লেগেছিল। বেলচা দিয়ে বালি পরিস্কার করে গাড়ি চলাচল শুরু করেছিল। এবারেও তেমনই আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে। তবে আমি তো অনেক দিন পুরীতে আছি। তাই জগন্নাথই ভরসা। আর আছে অভিজ্ঞতা। সংস্কার বলুন, ধর্ম বলুন, যাই বলুন না কেন একটা বিশ্বাস আছে, জগন্নাথদেব আছেন, আমাদের কিছুই হবে না। অনেকগুলো ঝড়ই তো দেখলাম- ফাইলিন, তিতলি, হুরহুর, নার্গিস। এবার ফণী। তবে পুরী ছাড়ছি না। জয় জগন্নাথ। (অনুলিখন: জয়প্রকাশ দাস)