ফি বছরই বর্ষাকালে কলকাতা পুরসভা এলাকায় বাড়ি ভেঙে দুর্ঘটনা-মৃত্যু-জখমের ঘটনা প্রায় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পরেই পুরসভার পক্ষ থেকে বেশ কিছু কড়াকড়ির কথা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শহর কলকাতার রাস্তায় হাঁটলে দিব্যি দেখা যাবে, ঘোষণা আছে কেবল কাগজপত্রেই। তাকে লাগু করা হয়নি। নাম কা ওয়াস্তে দু একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা পড়ে বটে, তবে তা নেহাৎই হাতে গোণা। এ ব্যাপারে পুরসভা যে খুবই তৎপর, তেমন কথা তাঁদের অতি বড় সমর্থকও বলতে লজ্জা পাবেন।
এ ব্যাপারে বিরোধীদের দাবি খুবই স্পষ্ট। তাঁরা চান, এ ধরনের বাড়ির আবাসিকদের বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা হোক। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভার সদিচ্ছা থাকলে এ পরিস্থিতি তৈরি হত না।
আরও পড়ুন, ভাগাড় কাণ্ডের শেষ এখনও দেখে নি কলকাতা, দাবি মন্ত্রীর
এ ধরনের বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙতে বাধা কোথায়? কোনও জবাব দেননি কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের কোনও কর্তা। এ বিষয়ে রা কাড়েননি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্য়ায়ও। এককথায় বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরসভার এক আধিকারিকের বক্তব্য়, ‘‘বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে প্রচুর আইনি জটিলতা রয়েছে। প্রয়োজন পড়লেই বিপজ্জনক বা অতিবিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা সম্ভব নয়।’’
মানিকতলার একটি বিপজ্জনক বাড়ি। (ফোটো- শশী ঘোষ)
উত্তর কলকাতায় বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্য়া দক্ষিণের তুলনায় অনেক বেশি। বিপজ্জনক বাড়ি বলে বোর্ড রয়েছে কলকাতা পুরসভার। তবু ওই সব বাড়িতে বহাল তবিয়তে পরিবারসহ রয়েছেন অনেকে। কিছু বিপজ্জনক বাড়িতে শোরুম থেকে দোকান সবই আছে। অনেক ক্ষেত্রে শহরজুড়ে সাইন বোর্ড লাগানো হয়েছে। বিপদের সম্ভাবনার কথা ফলাও করে বলা রয়েছে। এভাবেই দায় সারছে পুরসভা, অভিযোগ বিরোধীদের।
পুরসভার হিসাব অনুযায়ী শহরে বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা ৩ হাজার, অতি বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা ৫০০। পুরসভার ভাঙার কথা এই অতি বিপজ্জনক বাড়িগুলি। তার মধ্যে ৩০ টি বাড়িকে চিহ্নিতও করা হয়েছে। তবে সেই তিরিশটি বাড়ির তালিকা গোপন রাখতে মরিয়া পুরসভা। প্রশ্ন উঠেছে কিসের ভিত্তিতে ওই তালিকা তৈরি হয়েছে।
বর্ষা শুরুর ঠিক আগে আগেই রানি রাসমনির বাড়ির একাংশ ভাঙা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিরোধীদের অভিযোগ, নামকাওয়াস্তে দুএকটি বাড়ি ভেঙে ব্য়র্থতায় প্রলেপ দিচ্ছে পুরসভা। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
আর্মহাষ্ট স্ট্রিটের একটি বিপজ্জনক বাড়ি। (ফোটো- শশী ঘোষ)
কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্য়ায়ের বক্তব্য়, ‘‘মেয়রের হাতে এ ব্যাপারে সমস্ত ক্ষমতা রয়েছে। প্রয়োজনে বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে।’’ বাড়ি ভেঙে কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে তার জন্য মেয়রই দায়ী হবেন বলে মন্তব্য করেছেন ওই কংগ্রেস কাউন্সিলর। তাঁর দাবি, ‘‘যেসব বাড়ি ভাঙা হবে, সেই বাড়ির বাসিন্দাদের বিকল্প বাসস্থানের বন্দোবস্ত করতে হবে পুরসভাকেই।’’
আরও পড়ুন, গর্ভবতীকে ভুল রক্ত, অভিযুক্ত কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতাল
২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর বিজয় ওঝা জানিয়েছেন, তাঁর ওয়ার্ডেও অনেকগুলি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। ‘‘বিপজ্জনক বাড়ির তালিকা পুরসভাকে দিয়েছি। কিছু ক্ষেত্রে মালিক-ভাড়াটিয়াকে একসঙ্গে আলোচনায় বসিয়ে মেরামতির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’ বাড়ি ভেঙে মৃত্য়ু হলে তার দায় কার, সে কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁর জবাব, ‘‘মেয়রকে জিজ্ঞেস করুন। উনি বলতে পারবেন।’’ মেয়রের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।