১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারির পর ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, ফের গান্ধীজিকে হত্যা করা হল। ’৪৮-এর গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসে, আর উনিশের গান্ধী হত্যাকারী নাথুরামের ‘অনুগামী’ হিন্দু মহাসভা। জাতীর জনকের প্রয়াণ দিবসে তাঁরই কুশপুতুলে একবার নয়, তিন-তিনবার গুলি চালালেন হিন্দু মহাসভার সদস্যরা। তাও আবার যেমন তেমন সদস্য নন। রীতিমতো নাথুরাম গডসের কায়দায় গান্ধীজির কুশপুতুলে গুলি চালিয়ে বিতর্ক বাঁধিয়েছেন খোদ হিন্দু মহাসভার সাধারণ সম্পাদক পূজা শকুন পাণ্ডে। শুধু কী গুলি, গান্ধীজির কুশপুতুলে গুলি চালানোর পর ঝরে পড়ল রক্ত। দেখে মনে হবে, এ যেন জাতীর জনকের হত্যার ঘটনার ‘নাট্য রূপান্তর’। পরে গান্ধীজির কুশপুতুল পুড়িয়েও দেওয়া হল। আর শেষপাতে মিষ্টিমুখ করতে ভুলল না হিন্দু মহাসভা।
গান্ধীজির কুশপুতুলে গুলি চালানোর ঘটনায় ইতিমধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই এ ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্ত পূজা-সহ আরও ৭ জনের এখনও নাগাল পায়নি পুলিশ। এদিকে, গান্ধীজির কুশপুতুলে গুলি চালানোর প্রতিবাদে হিন্দু মহাসভার ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে কেরালা সাইবার ওয়ারিয়র্স।
আরও পড়ুন, গান্ধীজির কুশপুতুলে গুলি চালিয়ে ‘রক্ত’ ঝরালো হিন্দু মহাসভা
তবে পূজা একা নন, সেদিন গান্ধীজির কুশপুতুলে দ্বিতীয় বুলেটটি নিক্ষেপ করেছিলেন ৫৯ বছরের এক আইনজীবী গজেন্দ্র কুমার ভার্মা। যিনি অবশ্য আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্ত। গুলি চালিয়েছে এক নাবালকও। অন্যদিকে, এক অটোচালক ও ব্যবসায়ীর হাতে পুড়েছে গান্ধীজির কুশপুতুল। তবে এহেন উদ্যোগ আঁটঘাট বেঁধেই সেরেছে হিন্দু মহাসভা।
নৌরঙ্গাবাদে মহাসভার স্থানীয় অফিসে ঢুঁ মারলে দরজার সামনে দেখা যাবে স্বয়ং মহাদেবকে। সেইসঙ্গে একটি ব্যানারেরও দেখা মিলবে। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘‘নাথুরাম গডসে অমর রহে, বীর সাভারকর অমর রহে।’ এই অফিসটির উদ্বোধন হয়েছিল গত ২৯ জানুয়ারি। ওই এলাকাতেই রয়েছে পূজার বাড়ি।
src="https://www.youtube.com/embed/Z2wi17ZrNC8" width="100%" height="315" frameborder="0" allowfullscreen="allowfullscreen">
কেন এমন কাণ্ড ঘটানো হল? গজেন্দ্র ভার্মার সাফ জবাব, ‘‘কেন সবসময় গান্ধীজির আদর্শ বজায় রাখা হবে? আমরা বদলাতে চাই। সেকারণেই আমরা ওঁর হত্যাকাণ্ডের পুনর্নির্মাণ করি। দেশভাগের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে গান্ধীজির...।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গান্ধীজির প্রয়াণ দিবস এভাবে পালন করার জন্য এক সপ্তাহ আগে পরিকল্পনা করেছিলাম। কুশপুতুলের ভিতরে বেলুন রেখেছিলাম। বেলুনের মধ্যে লাল রং মেশানো জল রেখেছিলাম। স্থানীয় ও দেশের সংবাদমাধ্যমকে ডেকেছিলাম। যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে ওটা সংবাদমাধ্যমেরই।’’
আরও পড়ুন, গান্ধীজির কুশপুতুলে গুলি! প্রতিবাদে হিন্দু মহাসভার ওয়েবসাইট হ্যাক
এ ঘটনা প্রসঙ্গে আলিগড়ে এএসপি বলেছেন, ১৩ জনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে এফআইআরে নাম রয়েছে ১১ জনের। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ, ২৯৫এ, ১৪৭. ১৪৮, ১৪৯ ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি দুপুর ১২টা নাগাদ গান্ধীজির কুশপুতুলে আগুন লাগানো হয়েছিল বলে এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে। সাপ-ইন্সপেক্টর সঞ্জীব কুমার জানিয়েছেন, ‘‘দুই অভিযুক্তকে জেলে পাঠানো হয়েছে। আরও তিনজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। রাজীব নামে এক দোকানের মালিক, কাঠের ব্যবসায়ী হরিশংকর শর্মা ও এক স্থানীয় বাসিন্দা জয়বীর শর্মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
অন্যদিকে, এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত পূজা পাণ্ডে একসময় নয়ডার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অঙ্কের শিক্ষিকা ছিলেন। পূজা প্রসঙ্গে এএসপি বলেছেন, ‘‘বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ওঁকে নজরে রাখা হয়েছে। ধৃতরা দাবি করেছে, পূজার নির্দেশ মতোই তারা সব কাজ করে।’’ হিন্দু মহাসভার কনিষ্ঠতম সদস্য হল অভিষেক(১৮), যে আবার পূজার আত্মীয়। আম্বালার একটি ইনস্টিটিউটে বিবিএ নিয়ে পড়াশোনা করছে অভিষেক।
এ ঘটনায় নাম জড়িয়েছে মনোজ সাইনি নামে এক অটোচালকেরও। ওই অটোচালক ৮-১০ দিন আগে সংগঠনের সদস্যপদে যোগ দেন। উল্লেখ্য, গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সাইনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, আর ফেরেননি, এমনকি কোনও ফোনও করেননি বলে দাবি অটোচালকের স্ত্রীর।
২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের আলিগড় জেলায় ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রই দখল করে বিজেপি। বিজেপি নেতা বিবেক সারস্বত বলেছেন, পাণ্ডের কাণ্ডকারখানা নিয়ে দলের কিছু করার নেই।
Read the full story in English