নাগরিকপঞ্জি এবং তার আতঙ্কে মৃত্যুর ঘটনায় শিরোনামে রয়েছে আসামের নাম। সেই তালিকায় ফের এবার যোগ হলো ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধের মৃত্যু। আসামের নাগরিকপঞ্জির তালিকায় নাম না থাকায় ডিটেনশন ক্যাম্পেই রাখা হয়েছিল দুলাল পাল নামের ওই বৃদ্ধকে। যদিও পরিবারের দাবি ছিল, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। রবিবার রাতে দুলালবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে তাঁকে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, গুয়াহাটির সোনিতপুর জেলার আলিসিংহ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন দুলাল পাল। ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর থেকেই তেজপুর ডিটেনশন ক্যাম্পে ছিলেন এই বৃদ্ধ।
আরও পড়ুন: এখনও ‘চূড়ান্ত’ নয় নাগরিকপঞ্জির তালিকা, থাকছে নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কা
তবে কাকার এই মৃত্যু মেনে নিতে পারেন নি দুলাল পালের ভাইপো সাধন পাল। তিনি বলেন, "উনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন। ওঁর ভাই-বোন এবং পরিবারের সকলের নাম ছিল নাগরিকপঞ্জিতে। এমনকি ১৯৬০ সাল থেকে জমিজমা সংক্রান্ত সমস্ত নথিও আছে পরিবারের কাছে। তারপরও বৃদ্ধ মানুষটিকে পাঠানো হল ডিটেনশন ক্যাম্পে।" উল্লেখ্য, বর্তমানে আসামে ছ'টি ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে। তার সবকটি জেলা কারাগারের মধ্যেই। সেখানে একসঙ্গে প্রায় হাজারখানেক মানুষকে রাখা হয়। সম্প্রতি আরও একটি ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে গোয়ালপাড়া জেলায়।
আরও পড়ুন: নাগরিকপঞ্জি বাস্তবায়নে মোদী-শাহের সামনে বাধা হতে পারে বাংলাদেশ
সরকারী তথ্য অনুসারে, আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের দ্বারা ২৪ জন নাগরিককে 'অবৈধ বিদেশি' ঘোষণা করা হয়েছিল। ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক এই ২৪ জনই মারা গিয়েছেন গত তিন বছরে। জুলাই মাসে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের হয়ে আসামের সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি জানান, আসামের ছ'টি ডিটেনশন ক্যাম্পে এখনও পর্যন্ত মোট ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট সাতজন, ২০১৭ সালে ছ'জন, ২০১৬ সালে চারজন, এবং ২০১১ সালে একজন মারা যান। প্রতি ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ হিসেবে 'শারীরিক অবস্থার অবনতির' কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- নাগরিকপঞ্জি: হিন্দু না ওরা মুসলিম…
প্রসঙ্গত, বিধানসভায় যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়, সেই অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে মাত্র দু'জনের ঠিকানা বাংলাদেশে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি সকলের ঠিকানা ছিল আসাম। সে প্রসঙ্গে আসামের সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি বলেন, "অসুস্থতার কারণে সেই সকল ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে তাঁরা মারা যান। তবে মৃতদেহগুলিকে বাংলাদেশে প্রেরণ করা হয় নি।"
Read the full story in English