Advertisment

সৌদি আরবের টাকায় 'ভুয়ো সংখ্যালঘু' পড়ুয়া তৈরি দেশে, রাজ্যে রাজ্যে কেলেঙ্কারির চিত্র

এমনকি সংখ্যালঘু হিসাবে দেখানোর জন্য শিক্ষার্থীদের ধর্মও পরিবর্তন করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ওই পড়ুয়ার প্রাপ্ত বৃত্তি থেকে নিজেদের জন্য একটি অংশ বরাদ্দ রাখছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
reopening of schools, স্কুল খুলছে

প্রতীকী ছবি।

অন্যের বাড়ির দেওয়াল গেঁথে জীবন যাপন করেন রাঁচির বেহরাতলি এলাকার রাজমিস্ত্রি রশিদ আনসারি এবং স্ত্রী সালমা খাতুন। যখন জানতে পারলেন নিজেদের অজান্তেই দেশজুড়ে চলা 'ভুয়ো সংখ্যালঘু' কেলেঙ্কারির অংশ হয়েছেন তাঁরাও তখন সংসারযাপনের ভিত টলমল। জাতীয় বৃত্তি প্রকল্প (national scholarship scheme) পাওয়ার জন্য ভুয়ো সংখ্যালঘু বানিয়ে 'সৌদি আরব থেকে আসা অর্থ-এর ১০ হাজার ৭০০ টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টে পাঠান হয়েছে অবৈধভাবে', রশিদ-সালমা তখন বাকরুদ্ধ।

Advertisment

কেবল রশিদই নয়, কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের আওতাধীন প্রাক-মাধ্যমিক বৃত্তির উদ্যোগ থেকে অর্থ গ্রহণের জন্য বেশ কিছু মধ্যস্থতাকারী, ব্যাঙ্ক কর্মচারী, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের একটি জোট রয়েছে যারা জালিয়াতির মাধ্যমে এই কাজ করে চলেছেন। যদিও তাঁদের এখনও চিহ্নিত করা যায়নি।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তে দেখা গিয়েছে এই প্রতারণার কাজটি শুরু হচ্ছে স্কুল থেকেই এবং অবশ্যই সেই তথ্য তাঁরা সরিয়ে ফেলছে। এমনকি সংখ্যালঘু হিসাবে দেখানোর জন্য শিক্ষার্থীদের ধর্মও পরিবর্তন করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ওই পড়ুয়ার প্রাপ্ত বৃত্তি থেকে নিজেদের জন্য একটি অংশ বরাদ্দ রাখছে। এমন কিছু ঘটনা রয়েছে যেখানে মা-বাবাদের মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে মারাত্মক চুক্তি করতে বাধ্য করা হয়েচ্ছে। বৃত্তির একটি বড় অংশের বিনিময়ে তাদের বকেয়া অংশের একটি বড় অংশ ত্যাগ করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন, “আত্মমর্যাদা থাকলে ধর্ষণের পর মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের মেরে ফেলবে”

শুধু তাই নয়, যেসব পড়ুয়ারা এই বৃত্তির জন্য আবেদন করেনি তাঁদের আই কার্ড, পাসওয়ার্ড চুরি করে সেই টাকা নিচ্ছে ব্যাঙ্ক, এজেন্ট, স্কুল স্টাফেরা। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তে উঠে এল এমনই একজনের নাম যিনি এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। দীনেশ সাহু, রাঁচির একটি স্কুলের শিক্ষক এবং স্কুলের মালিকও তিনি। এই সমস্ত কিছুই, জেলা, রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নাকের নীচে দিয়েই হয়ে যাচ্ছে। যে সব শিক্ষার্থীর পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ টাকার নীচে তাঁদের বৃত্তি দেওয়ার আগে আবেদনগুলি যাচাই করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উপরিউক্ত কর্তৃপক্ষদের। কিন্তু থাকছে সেখানেই। ঝাড়খণ্ডের যার জেলায় এই জালিয়াতি চলছে এমনটাই দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তে উঠে আসে।

রশিদ আনসারি বলেন, "আমাকে বলা হয়েছিল যে টাকাটি সৌদি সরকারের। আমি মধ্যস্থতাকারীকে আমার আধার নম্বর এবং অ্যাকাউন্টের বিশদ দিয়েছি। আমার স্ত্রী এবং আমি প্রত্যেকেই ১০ হাজার ৭০০ টাকা পেয়েছি। মধ্যস্থতাকারী অর্ধেক টাকা দিয়েছি।" কিন্তু কেন এই টাকা নিলেন, প্রতিবেদকের প্রশ্নে ৩৯ বছরের রশিদ জানান, "আমি এই অর্থ নিয়েছিলাম কারণ আমরা আটজনের পরিবার। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রচণ্ড অর্থকষ্টে রয়েছি।"

আরও পড়ুন, অল্পবয়সীদের দেহে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরিকল্পনা জনসন অ্যান্ড জনসনের

রেকর্ডে দেখান হয়েছে যে আনসারিকে এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য এক হাজার টাকা বরাদ্দ। হস্টেলে যারা থাকেন তাঁদের জন্য ১০ হাজার ৭০০ টাকা। ২০১৯-২০ তে ঝাড়খণ্ড এই প্রকল্পের জন্য ৬১ কোটি টাকা পেয়েছে। আরও জানা গিয়েছে রশিদের মতো অনেককেই ভুয়ো শিক্ষার্থী হিসেবে দেখান হয়েছে। যেমন ২১ বছরের সরজুন খাতুনকে ম্যাকক্লস্কিগঞ্জের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী হিসেবে দেখান হয়েছে। এদিকে সরজুন জানান, তিনি এই স্কুলের নামও জীবনে শোনেননি কিন্তু ২ হাজার ২০০ টাকা এজেন্টের থেকে পেয়েছেন।

এই কেলেঙ্কারি চিত্রে নাম রয়েছে সাহেবগঞ্জের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের নামও। যদিও সেখানকার প্রিন্সিপাল ড্যানিয়েল তিরকি বলেন, "“এই বৃত্তি প্রকল্প সম্পর্কে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই। আমাদের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের কোনও হোস্টেল নেই, এবং আমরা কোনও আবেদন ফর্ম পূরণ করিনি।"

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Education saudi arabia
Advertisment