তিন মাসেরও বেশি কারাবাসের পর জামিনে মুক্তি পেতে চলেছেন পি চিদাম্বরম। আইএনএক্স মিডিয়া দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির করা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বুধবার বিচার বিভাগীয় হেফাজতে থাকা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর জামিন মঞ্জুর করল। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতির ভানুমতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ২ লক্ষ টাকার বেল বন্ডে এই জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে আইএনএক্স মিডিয়া দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআইয়ের দায়ের করা মামলায় জামিন পেয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম।
এর আগে গত ১৫ই নভেম্বর দিল্লি হাইকোর্ট পি চিদাম্বরমের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন কংগ্রেসের এই বর্ষীয়ান নেতা। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই এদিন চিদাম্বরমের জামিন মঞ্জুর করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ১০০ দিনেরও বেশি সময় তিহার জেলে বন্দি থাকতে হয়েছে পি চিদাম্বরম। তবে সুপ্রিম রায়ের পর আপাতত মুক্ত হতে চলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: সিবিআই মামলা থেকে রেহাই পেলেও ইডি হেফাজতে পি চিদাম্বরম
এদিন শুনানিতে ইডির তরফে প্রভাবশালী তত্ত্বে চিদাম্বরমের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করা হয়। কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা আদলতকে বলেন, 'অর্থ তছরুপের মত মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই পদাধিকারীর বিরুদ্ধে। তাঁর কৃত কর্মের জন্য দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত। মানুষের বিশ্বাস টলে গিয়েছে।' মেহেতার দাবির বিরোধিতা করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দুই কৌঁসুলি তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিবাল ও সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি। তাঁরা বলেন, 'এখনও চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে কোনও প্রত্য বা পরোক্ষ তছরুপের প্রামাণ তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। এমনকী কোনও প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগও তাঁর বিরুদ্ধে নেই। তাই চিদাম্বরমের জামিন মঞ্জুর করা হোক।'
দীর্ঘ আইনি জটিলতা ও রাজনৈতিক নাটকের পর আইএনএক্স মিডিয়া দুর্নীতিকাণ্ডে গত ২১ অগাস্ট গ্রেফতার করা হয় পি চিদাম্বরমকে। ২২ অক্টোবর সিবিআইয়ের করা মামলায় জামিন মঞ্জুর হয় দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর। কিন্তু, একই দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির দায়ের করা মামলায় ১৬ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় চিদাম্বরমকে। ফলে সিবিআয়ের মামলায় জামিন পেলেও বন্দি দশাই কাটাচ্ছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত অগাস্টে মিডিয়া দুর্নীতিকাণ্ডে দিল্লি হাইকোর্ট পি চিদাম্বরমের আগাম জামিনের আবেদন নাকচ করে দেয়। ফলে গ্রেফতারির আশঙ্কা তৈরি হতেই বেশ কয়েক ঘন্টা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে। পরে কংগ্রেস সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। চিদাম্বরম প্রকাশ্যে আসার পরেই তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যান সিবিআই ও ইডি অফিসাররা। সেখানেও আরেক প্রস্থ নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। দরজা না খোলায়, পাঁচিল টপকেই চিদম্বরমের বাড়িতে ঢোকেন সিবিআই অফিসাররা। শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে দশটা নাগাদ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
২০১৭ সালের ১৫ মে পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৭ সালে আইএনএক্স মিডিয়াকে বেআইনিভাবে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন বোর্ডের ক্লিয়ারেন্স পাইয়ে দিয়েছিলেন তত্কালীন অর্থমন্ত্রী, তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনে সিবিআই। পরে ২০১৭ সালে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে ইডি টাকা তছরুপের মামলা করে। আইএনএক্স মিডিয়া দুর্নীতি মামলায় তার আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পুত্র কার্তি চিদম্বরমকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
Read the full story in English