/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/12/PM-scholarship-2-1.jpg)
রাষ্ট্রদ্রোহিতায় অভিযুক্ত ছাত্রের জীবনের মূল স্রোতে ফেরার মরিয়া চেষ্টা।
ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামাকাণ্ড। যা নিয়ে ফেসবুকে তরকাতরকি। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে প্রায় সাতমাস জেলবন্দি দশা কাটাতে হয়েছে। বদলে গিয়েছে নার্সিংয়ের কাশ্মীরি ছাত্র হরিশ মাঞ্জুরের জীবন। কথায় কথায় এখন আর প্রতিবাদী নয় সে। বরং অনেক বেশি সহনশীল বছর কুড়ির যুবকটি। এখন দিনে পাঁচবার প্রার্থনা করে সে। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখে না।
অতীতের দুর্বিসহ অভিজ্ঞতা ভুলতে চায় মাঞ্জুর। কলেজে ফিরে পড়াশুনো এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন তার একমাত্রা লক্ষ্য। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মত অপরাধ রয়েছে তার কাশ্মীরি ছাত্রের বিরুদ্ধে। ফলে বেঙ্গালুরুর স্ফুর্তি নার্সিং কলেজ তার নাম কেটে দিয়েছে। মেলে না প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বৃত্তি। তাই জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়েও হতাশ হরিশ মাঞ্জুর। ইতিমধ্যেই কলেজ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ক্লাস করার জন্য আবেদন করেছে সে। আর্জি জানানো হয়েছে বৃত্তির অর্থ ফের চালু করার জন্যও। এই পরিস্থিতি দ্রুত কাটবে, হতাশা ভুলে আত্মবিশ্বাসী হরিশ ও একই অভিযোগে দুষ্ট তার দুই বন্ধু গওহর মুস্তাক ও জাকির মকবুল।
কী কারণে এই পরিণতি হরিশ মাঞ্জুর, গওহর মুস্তাক ও জাকির মকবুলের?
গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি পলওয়ামা হামলা হয়। স্ফুর্তি কলেজেরর তৃতীয় বর্ষের বেশ কয়েকজন পড়ুয়া ফেসবুকে হামলার কড়া নিন্দা করে প্রতিশোধ নেওয়ার দাবি জানিয়ে পোস্ট করে। এরপরই সোশাল মিডিয়ায় পাল্টা পোস্ট করে মাঞ্জুর, মুস্তাক ও মকবুল। ১৬ তারিখ কলেজে পড়ুয়ারা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। ফলে কলেজ অধ্যক্ষের ঘরে ডেকে পাঠানো হয় মঞ্জুরদের। তখনও বিষয়টিকে নেহাতই ছাত্র বচসা বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু অধ্যক্ষ পুলিশ ডাকতেই মোড় ঘুরে যায়। ফেসবুক পোস্ট খতিয়ে দেখা হয়। গ্রেফতার করা হয় তিন ছাত্রকে। জীবন তখন এলোমেলো পথে বয়ে চলেছে। বন্দি অবস্থার প্রথম কয়েক দিন কেঁদেই ভাসিয়েছে মাঞ্জুর। সে কথা মনে করলে এখনও চোখে মুখে তার আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা যায়।
আরও পড়ুন: এনইউকাণ্ড ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ নয়, দিল্লি পুলিশের আর্জি খারিজ করে জানাল কেজরি সরকার
বিষয়টি অন্য খাতে মোড় নেবে বুঝতে পারেননি অধ্যক্ষও। তবে সাফাই হিসাবে বাবু ধর্মরাজা বলেন, 'সেদিন বেশ কিছু মানুষ আমাদের কলেজের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। আমাদের কলেজের ১৫-১৮ জন কাশ্মীরি পড়ুয়া রয়েছে। তাদের সুরক্ষিত রাখতে আমাকে পুলিশ ডাকতেই হয়েছিল। কিন্তু, ভাবতেই পারিনি এমন কিছু হতে পারে।'
বেঙ্গালুরুতে আইনজীবীর দফতরে বলে মাঞ্জুর বলছিল, 'অসনীয় অভিজ্ঞতা। ইউনিফর্ম পড়া অবস্থায় আমাকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেদিনের অভিজ্ঞতা মনে পড়লে ভয় লাগে। প্রথম দিকে বেশ ক'দিন আমরা জানতেও পারিনি আমাদের অপরাধ। তারপর দাদা জেলে দেখা করতে এলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়।' কথায় বলে জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা। মাঞ্জুরের কথায়, 'জেল কর্তৃপক্ষ ও অন্যসব বন্দিরা আমাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছিল। কোরান পড়তে দিয়েছিল। যা পড়ে আমি অনেক সহনশীল হয়েছি। নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরে এসেছে। আশা করছি এই কালো দিন দূর হবে।'
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে মন্তব্য, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আটক আসামের বুদ্ধিজীবীরা
ইতিমধ্যেই কলেজের কাছে ক্লাস করতে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে মাঞ্জুররা। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি ওই পড়ুয়াদের রেজাল্ট ও ব্যবহার বেশ ভাল। কোর্টও তাদের জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জামিন দিয়েছে। ছাত্রদের আবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠান হয়েছে। তারা সবজ সঙ্কেত দিলেই মাঞ্জুরদের ক্লাস করতে কোনও বাধা নেই। তবে, কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে মাঞ্জুরা মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলার জন্য কেউ দায়ী নয়।
সাত মাস জেলবন্দি অবস্থা কাটানোর পর গত ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পায় হরিশ মাঞ্জুর, গওহর মুস্তাক ও জাকির মকবুলরা। কোর্টের নির্দেশ নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই তাদের থাকতে হবে। প্রতি মাসে থানায় হাজিরা দিতে হবে। শুনানি থাকলে কোর্টে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। আদালতের নির্দেশ মেনে চলছে তিন জনই। ঘরবন্দি অবস্থাতেই কাটাচ্ছেন তারা। লক্ষ্য একটাই, রাষ্ট্রদ্রোহিতার গ্লানিমুক্ত হয়ে জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়া, স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা।
Read the full story in English