নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভ্যাকসিন তৈরির লড়াই চলছে জোরকদমে। আর এরই মধ্যে এক নয়া সাফল্যের মুখ দেখল বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। আবিষ্কার হল করোনার শক্তি নাশক এক অ্যান্টিবডির। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে পরীক্ষাগারে প্রস্তুত করোনাভাইরাস বিশিষ্ট কোষের শক্তিক্ষয় করছে লামা প্রাণীর দেহের দুটি অ্যান্টিবডি।
দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায় লামা (llamas) নামের এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটিকে। এই প্রাণীর দেহেই মিলেছে সেই অ্যান্টিবডি। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এই আবিষ্কার যে নয়া সাফল্য আনতে চলেছে তা স্বীকার করে নিচ্ছে বিজ্ঞানীমহল। এই স্টাডিটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার স্ট্রাকচারাল অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি জার্নালে। সেখানে বলা হয়েছে, আবিষ্কৃত অ্যান্টিবডির 'ন্যানোবডি' করোনা ভাইরাসকে মানবদেহে সংক্রমণ (ইনফেকশন) ছড়াতে বাধা দিচ্ছে। এই অ্যান্টিবডিটি কোষের মধ্যে অবস্থিত অ্যাসিটাইলকোলিন ২ (ACE2) রিসেপটরের সঙ্গে সারস-কোভ-২ ভাইরাসের যোগাযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। যার ফলে কোষের মধ্যে ভাইরাসের প্রবেশ বন্ধ হয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন, করোনাভাইরাস বাতাসবাহিত, জানিয়ে দিল হু- এবার তাহলে কী হবে?
তবে এর আগে করোনা চিকিৎসায় 'পরোক্ষ রোগপ্রতিরোধী ব্যবস্থা' (passive immunisation) তৈরি করা হচ্ছিল। সেক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগীর দেহে ভাইরাস-নিউট্রিলাইজিং এজেন্ট অথবা ভাইরাসের শক্তিনাশক এক ধরণের উপাদান দেওয়া হচ্ছিল। যা আসলে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের দেহে তৈরি হওয়া করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি। অনেক ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা সফলও হয়েছিল। তবে অনেক অ্যান্টিবডি করোনার নয়া রূপ চিনতে না পেরে রোগীর দেহে কোনও কাজ করতে পারেনি।
কিন্তু নয়া এই আবিষ্কার সাফল্যে দেখেছে পরীক্ষাগারে। লামার দেহের অ্যান্টিবডি সফলভাবে রুখতে পারছে সারস-কোভ-২ ভাইরাসকে। কোষের প্রোটিনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে করোনা জীবাণু কোনওভাবেই কোষের মধ্যে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারছে না। যা আশা জাগাচ্ছে ওষুধ-ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে।
অন্যান্য অ্যান্টিবডির সঙ্গে এই আবিষ্কৃত অ্যান্টিবডির তফাৎ কোথায়?
গবেষকরা জানাচ্ছেন, মানুষের দেহে এবং স্তন্যপায়ীদের দেহে দু'ধরণের অ্যান্টিবডি থাকে। এটা ভারী (heavy) এবং একটি হালকা (light)। কিন্তু এই উট প্রজাতির প্রাণী লামার দেহে অতিরিক্ত সিঙ্গল হেভি চেইন অ্যান্টিবডির এক ধরণ পাওয়া গিয়েছে। যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'ন্যানোবডি'। এই ন্যানোবডি হল খুবই ছোট এবং সহজে প্রস্তুত করা যায় একধরণের বিকল্প অ্যান্টিবডি যার চিকিৎসাক্ষেত্রে গুরুত্ব অনেকটা। এই অ্যান্টিবডিগুলিকেই করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে নামিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। দ্য রোজিল্যান্ড ফ্র্যাঙ্কলিন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী জেমস নেইস্মিথ এবং রেমন্ড ওয়েন্স দেখেন যে দু ধরণের ন্যানোবডি কোভিড ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোষের অভ্যন্তরে সফলভাবে লড়াই করতে পারছে।
আরও পড়ুন, করোনার আয়ুর্বেদিক দাওয়াই, হাত মেলাল ভারত-আমেরিকা
তাই করোনা আক্রান্ত যেসব রোগীদের সঙ্কটকালীন অবস্থা তাঁদের দেহে অনেকসময় একাই কাজ করতে পারবে এই অ্যান্টিবডি। অনেক ক্ষেত্রে অন্য অ্যান্টিবডির সঙ্গে মিলে মানব শরীরে 'পরোক্ষ রোগপ্রতিরোধী ব্যবস্থা' তৈরি করতে পারবে। তবে গোটা বিষয়টি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। এই আবিষ্কারের সফল প্রয়োগের দিকেই তাকিয়ে এখন গোটা বিশ্ব।
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন