'দেশদ্রোহিতার' অভিযোগে সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারী শারজিল ইমামের বিরুদ্ধেই একের পর এক অভিযোগ থানায় জমা পড়ছে । শনিবারই আসাম ও উত্তরপ্রদেশে জেএনইউ-য়ের এই পিএইচডি স্কলারের বিরুদ্ধে 'দেশদ্রোহিতার' অভিযোগে মামলা রুজু হয়। এবার, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর ও দিল্লিতেও একই অভিযোগে শারজিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হল।
দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত শারজিল ইমামকে খোঁজার কাজ শুরু করে দিয়েছে। আলিগড়ের এসএসপি আকাশ কুলহারির কথায়, 'পুলিশের দুটি দল রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে ইমামকে খোঁজার কাজ করছে। এক্ষেত্রে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে। দ্রুত তার সন্ধান মিলবে।'
দিল্লিতে না থাকলে বিহারে থাকতে পারে শারজিল। এই অনুমান করে সেই রাজ্যে দল পাঠিয়েছে দিল্লি পুলিশ। জাহানাবাদের পুলিশ সুপার মণীশ জানিয়েছেন, 'রবিবার সকালে দিল্লি পুলিশের দল শারজিলের সন্ধানে তার গ্রামের বাড়ি কাকোতে গিয়েছিল। তাদের সহায়তা করতে সঙ্গে ছিল স্থানীয় পুলিশ কর্মীরা।' শারজিলের তিন অত্মীয়কে প্রায় ঘন্টা চারেক আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: শাহীনবাগ যোগ, জেএনইউ-য়ের স্কলারের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা
দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (ক্রাইম) রাজেশ দাও বলেন, 'অভিযুক্ত শারজিলের বিহারেরস্থায়ী ঠিকানায় নোটিস পাঠানো হয়েছে। জেএনইউয়ের এই পড়ুয়া সিএএ-এনআরসির বিরোধিতায় খুবই উস্কানিমূলক ও উত্তেজক ভাষণ দিয়েছিল। নয়া আইনের প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর প্রথমে জামিয়াতে, পরে সোশাল মিডিয়াতে আরও উত্তেজক বক্তব্য পেশ করেছে সে। তার এই বক্তব্য দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও অখণ্ডতা নষ্ট করতে পারে।' দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের বিশেষ তদন্তকারী দলের তরফে শারজিলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪, ১৫৩-এ, ৫০৫ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়ো-র ভিত্তিতে শারজিল ইমামের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করার অভিযোগ এনে মামলা করে আসাম সরকার। ভাইরাল হওয়া এক ভিডিয়োতে শারজিলকে বলতে দেখা যাচ্ছে, 'আসামকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত। আসামে মুসলমান ও বাঙালিদের হত্যা করা হচ্ছে। কয়েক মাসের মধ্যে সব বাংলাভাষীকে মারা শেষ হয়ে যাবে। নির্বিচারে তাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে। তাই রেললাইন বিচ্ছিন্ন করে ভারত থেকে অসমকে আলাদা করতে হবে। অন্তত কয়েক দিনের জন্যে হলেও এই কাজ করতেই হবে।' এই মন্তব্যকে উস্কানিমূলক মনে করে শারজিলের বিরুদ্ধে 'দেশদ্রোহিতার' অভিযোগে মামলা রুজু করে সর্বানন্দ সোনয়াল সরকার।
আরও পড়ুন: ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে সিএএ বিরোধী প্রস্তাব, ‘ভয়ঙ্কর-বিভেদকামী’ বলে তুলোধনা মোদী সরকারকে
শাহীনবাদ আন্দোলনের শুরুতেও জড়িত ছিলেন শারজিল। সেই প্রসঙ্গে তুলে তার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র দাবি করেন , 'শাহীনবাগে ভারতের স্বাধীনতা শেষ করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল'। অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমা খাণ্ড টুইটে লেখেন, 'আসাম ও উত্তর পূর্বের রাজ্য়গুলিকে দেশ থেকে পৃথক করার কথা বলা হচ্ছে। যা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সার্বভোমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে বিপন্ন করতে পারে। এচা বরদাস্ত করা যায় না। ক্রাইম ব্রাঞ্চ ইটানগর এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।' মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এম এন বীরেন সিংও একই অভিয়োগ করেন। জানান মণিপুর পুলিশের তরফেও ইমামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শারজিল ইমাম বর্তমানে জেএনইউ থেকে আধুনিক ইতিহাসে পিএইচডি করছেন। বম্বে আইআইটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক তিনি। প্রথম থেকেই শাহিনবাগ আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। দেশদ্রোহিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে শষনিবার শারজিল ইমাম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, ‘আমি শান্তিপূর্ণ পথে প্রতিবাদ, সড়ক অবরোধের কথা বলেছিলাম। আসলে চাক্কা জ্যামের কথা বলেছিলাম।’ তাঁর যে ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে তা সম্পাদিত অংশ বলে অভিযোগ করেন জেএনইউয়ের স্কলার। তাঁর কথায়, ‘সম্পাদিত ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ওটা থেকে আমার বিরুদ্ধে পুলিশ কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না।’
Read the full story in English