তখন সন্ধে ৭টা ২৩। টুইটারে নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সুষমা লিখেছেন, “এই দিনটি জীবদ্দশায় দেখতে পাওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদীজিকে ধন্যবাদ।” জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল প্রসঙ্গে সুষমার এই টুইটই ছিল শেষ টুইট। তারপরই হৃদরোগে আক্রান্ত হন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী। যিনি টুইটারে বরাবরই খুব ‘অ্যাক্টিভ’। মঙ্গলবার রাতে সুষমার আচমকা মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান বিজেপি শিবির। না, শুধু বিজেপি নেতৃত্বই নয়, জাতীয় রাজনৈতিক মহলও শোকার্ত।
সুষমা স্বরাজের প্রয়াণে গভীরভাবে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যাঁকেই শেষ টুইট করে গেলেন সুষমা। মোদী লিখেছেন, ‘‘আমার কাছে এটা ব্যক্তিগত ক্ষতি’’। মোদীর পাশাপাশি রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরোধীরাও সুষমার প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন।
src="https://www.youtube.com/embed/A5_bSvbWs-E" width="100%" height="415" frameborder="0" allowfullscreen="allowfullscreen">
আরও পড়ুন: Sushma Swaraj Death Live News Updates: প্রয়াত সুষমা স্বরাজ, আজ শেষকৃত্য
আজ দিল্লিতে সুষমা স্বরাজের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। সকাল ১১টা পর্যন্ত নিজের বাসভবনে সুষমা স্বরাজের মরদেহ রাখা থাকবে। যেখানে শ্রদ্ধা জানানো যাবে। এরপর দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হবে মরদেহ। লোধি শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রীর।
মৃত্যুকালে সুষমা রেখে গেলেন স্বামী স্বরাজ কৌশল এবং একমাত্র কন্যাকে। বর্ণময় রাজনৈতিক জীবন ছিল সুষমার। ১৯৫২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে হরিয়ানা মন্ত্রিসভায় জায়গা পান কণিষ্ঠতমা সদস্যা হিসেবে। এরপর শুধুই উত্থানের কাহিনি। সাতবার লাগাতার নির্বাচিত হয়েছিলেন লোকসভার সাংসদ হিসেবে। বিগত লোকসভা নির্বাচনে নিজেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাননি। ২০১৪-১৯, মোদী-জমানার প্রথম পর্বে সুষমা ছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। ইন্দিরা গান্ধীর পর তিনিই দ্বিতীয় মহিলা, যিনি দেশের বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। প্রথম মোদী সরকারে বিদেশমন্ত্রী হিসেবে প্রশ্নাতীত জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছিলেন সুষমা। বাজপেয়ী জমানাতেও মন্ত্রীত্ব সামলেছিলেন এই বিজেপি নেত্রী। উল্লেখ্য, শারীরিক অসুস্থতার জন্য দ্বিতীয় মোদী সরকারে মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি নেন সুষমা। এবার লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া রাজনৈতিক মহলে।
আরও পড়ুন: সুষমা স্বরাজের প্রয়াণ, শোকপ্রকাশ বাংলার তারকাদের
জনতা পার্টির হাত ধরে রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সুষমা স্বরাজ। ১৯৭৭ সালে হরিয়ানায় নির্বাচিত হন সুষমা। মাত্র ২৫ বছর বয়সে রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৭ সালে ফের নির্বাচিত হয়েছিলেন স্বরাজ। লোকসভায় তাঁর সুদক্ষ ভাষণের জন্য সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন সুষমা। ১৯৯৬ সালে আস্থা ভোটের সময় সুষমার জাতীয় রাজনীতিতে উপস্থিতি নজর কেড়েছিল। ১৯৯৬ সালে ১৩ দিনের বাজপেয়ী সরকারের অন্যতম সদস্য ছিলেন সুষমা। মহিলা রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি আইকনে পরিণত হয়েছিলেন। শেষমেশ দীর্ঘ রাজনৈতিক ইনিংসের পর দ্বিতীয় মোদী সরকারে মন্ত্রীত্ব থেকে অব্যাহতি নেন সুষমা। উনিশের নির্বাচনেও লড়েননি তিনি।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরিদের প্রতি দায়বদ্ধ: যতদূর প্রয়োজন ততদূর যাবে পাক সেনা
বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা নেতা লালকৃষ্ণ আডবানির হাত ধরে রাজনীতির কৌশল রপ্ত করেছিলেন সুষমা। বাজপেয়ী জমানায় বিজেপি শিবিরে অন্যতম ভরসা ছিলেন সুষমা। স্বাস্থ্য এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছিলেন সুষমা স্বরাজ। ২০০৪ সালে ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধীকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছিলেন, যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল জাতীয় রাজনীতি। সুষমা বলেছিলেন, সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হলে, তিনি মাথা কামিয়ে দেবেন। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপির পরাজয়ের পর লোকসভায় বিরোধী নেত্রীর ভূমিকা পালন করেছিলেন সুষমা। ২০১৪ সালে মোদী সরকারের হাত ধরে বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সুষমা। সুষমাই হলেন দেশের প্রথম পূর্ণ সময়ের মহিলা বিদেশমন্ত্রী। বিদেশমন্ত্রী হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছিলেন সুষমা। যে কারও সমস্যায় মুশকিল আসান ছিলেন সুষমা স্বরাজ। সেই ‘প্রিয় বিদেশমন্ত্রী’কেই হারিয়ে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ।
Read the full story in English