Chinmoy Krishna Das: বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবার হুঁশিয়ারি দিল ইসকন।
শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের পর থেকে বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে। এদিকে ইসকনের প্রধান পুরোহিতকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছে ইসকন বাংলাদেশ। গ্রেফতারির পর প্রিজন ভ্যান থেকে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে জোরালো ভাষণ দেন চিন্ময় প্রভু।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার একদিন পর, হিন্দু সন্নাসী ও ইসকনের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ঢাকার একটি আদালতের বাইরে একটি প্রিজন ভ্যান থেকে শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন। তিনি তাঁর বার্তায় বলেছেন, "আমরা একটি অখন্ড বাংলাদেশ চাই,"। আদালতের বাইরে তার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায়ের শ'য়ে শ'য়ে মানুষ জড়ো হন। তাদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে এমনকী ছোঁড়া হয় কাঁদানে গ্যাসের সেলও।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে টার্গেট করা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার নিয়ে যদিও এর আগেই ভারত তার উদ্বেগের কথা বাংলাদেশকে জানিয়েছে। এর মাঝেই ইসকনের অন্যতম প্রধান সন্নাসীকে শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে তাঁর গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ইসকন। পাশাপাশি দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার এবং সংখ্যালঘুদের উপর নির্মম অত্যাচার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসকন । বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে অত্যাচার চলছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ইসকন কর্তৃক একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।
'উঙ্গলি ক্যায়সা হ্যায়?', সংসদে কল্যাণকে দেখেই প্রশ্ন মোদীর
ইসকনের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে “চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারি আধিকারিকদের কাছে আমাদের দাবি সনাতন ধর্মের মানুষকে শান্তিতে বসবাস করতে দেওয়া হোক। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বরাবরই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলে আসছেন। তাদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সামিল থেকেছেন তার গ্রেফতারি সংখ্যালঘুদের বাকস্বাধীনতার উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।
ইসকন বলেছে যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এবং সনাতন ধর্মের মানুষের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘুদের প্রতি কোনো বৈষম্য সহ্য করা হবে না।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে সোমবার (২৫ নভেম্বর) ISKCON-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য চিন্ময় কৃষ্ণদাসকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গ্রেফতারের প্রতিবাদে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ রাজপথে নেমেছে। অভিযোগ উঠেছে যে বিএনপি ও জামাতের কর্মীরা হিন্দুদের ওপর হামলা চালিয়েছে, যার ফলে প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। গভীর রাতে হাজার হাজার হিন্দু জয় শ্রী রাম এবং হর হর মহাদেব স্লোগান দিয়ে মৌলভী বাজারে একটি বিশাল মশাল মিছিল বের করে।
আহত বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, হিংসার ঘটনার সময় প্রশাসন ও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শাহবাগ হামলার সময় পুলিশ ও প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে হামলার সময়ের ছবি।
ISKCON-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীর গ্রেফতারির কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস। তিনি বলেন, যা হয়েছে অত্যন্ত খারাপ। পাকিস্তান যেমন হিন্দুদের সঙ্গে ব্যবহার করে থাকে, বাংলাদেশও তেমনটাই করছে। বাংলাদেশে যারা হিন্দুদের সমর্থন করছে তাদেরকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমাদের সরকারের উচিত অবিলম্বে এই বিষয়টিতে নজর দেওয়া। এখনও সরকার যদি কিছু না বলে তাহলে হিন্দুদের উপর যে অন্যায় অত্যাচার হচ্ছে তা আরও বাড়বে।
কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রতারণা, ফের রাজ্যে চিটফান্ড প্রতারণা মামলায় বড়সড় গ্রেফতারি!
ভারত মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে। বিদেশমন্ত্রক চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে বাংলাদেশে চরমপন্থী কিছু সংগঠন হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত, এসব ঘটনার দোষীরা এখনও পলাতক। চিন্ময় দাসকে জেলে পাঠানো নিয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করলেও আপাতত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো সম্ভাবনা নেই ভারতের তরফে।
শীর্ষ পর্যায়ের সরকারী সূত্র জানিয়েছে যে ভারত বিশ্বাস করে এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তাই এই বিষয়ে অবিলম্বে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। যাইহোক, বাংলাদেশ ভিত্তিক সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং ইসকনের পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার ও জামিন নাকচ করায় বিদেশ মন্ত্রক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ISKCON-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী। তিনি সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রও। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি 'চিন্ময় প্রভু' নামে পরিচিত। বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের পাশাপাশি, পুণ্ডরীক্ষ ধামের অধ্যক্ষও তিনি।
তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি
বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনার নিন্দা করেছেন এবং চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারিকে অন্যায্য বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার এবং অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। সুকান্ত মজুমদার এক্স (আগের টুইটারে) লিখেছেন যে চিন্ময় প্রভু বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের অধিকারের জন্য ক্রমাগত লড়াই করছেন। তাকে গ্রেফতারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কড়া সমালোচনা করেন তিনি।
চিন্ময় প্রভু বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সর্বদা আওয়াজ তুলেছেন। তার শক্তিশালী উপস্থিতি বাংলাদেশের সনাতন সম্প্রদায়কে ঐক্য ও সাহস জুগিয়েছে। চিন্ময় প্রভু ইসকনের মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশে ইসকনের ৭৭টিরও বেশি মন্দির রয়েছে এবং ৫০,০০০ এরও বেশি সদস্য এই সংগঠনের সাথে যুক্ত। তিনি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে সনাতন ধর্ম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।