Advertisment

ভারতের হামলার পর পাকিস্তানের সামনে কী কী পথ খোলা?

পাকিস্তানকে হয় এর পর বলে যেতে হবে যে ভারতীয় বিমানবাহিনীর পদক্ষেপের ফলে তেমন কিছু ঘটেনি, অথবা ভারতের ওপর পাল্টা হামলা চালাতে হবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
what are the options pakistan have explained

গতকালই পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক হয় সে দেশের বিমানবাহিনীর প্রধানের

পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি বিশেষ বৈঠকের পর এক বিবৃতি জারি করেছে। তারা জানিয়েছে, "বালাকোটের কাছে তথাকথিত জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির যে দাবি ভারত করছে তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে।"

Advertisment

কিন্তু তারা অভিযোগ করেছে, ভারতের এই পদক্ষেপ সে দেশের নির্বাচনী আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে ঘটানো হয়েছে এবং এ ঘটনা আঞ্চলিক শান্তি ও সুস্থিতির পরিবেশকে প্রবল ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা নয়া দিল্লিকে "অযাচিতভাবে ভারত আগ্রাসন প্রদর্শনের" অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে এবং জানিয়ে দিয়েছে "পাকিস্তান সুযোগ বুঝে এবং জায়গা মতো এর জবাব দেবে"।

এর ফলে পাকিস্তান স্বীকার করে নিল যে ভারতের যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের আকাশপথে প্রবেশ করেছে এবং পদক্ষেপ নেওয়ার পর তারা নিরাপদে ফিরেও এসেছে।

তবে ভারতীয় বিমান যে কোনও জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে অথবা তাদের নিশ্চিহ্ন করেছে তা অস্বীকার করেছে তারা। ভারতের পক্ষ থেকে সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে ব্যাপক পরিমাণ জঙ্গি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।



মঙ্গলবার সকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র টুইটারে যে দাবি করেছিলেন, এই বিবৃতি তার থেকে আলাদা কিছু নয়। পরপর টুইটে ওই মুখপাত্র বলেছিলেন যে ভারতীয় বিমান মুজফফরাবাদের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ৩-৪ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছিল। এ নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় তখন বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল যে ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটে হামলা করেছে নাকি নিয়ন্ত্রণরেখার ঠিক ও পাশে পুুঁচ বরাবর বালাকোট গ্রামে হামলা চালিয়েছে।

আরও পড়ুন, সার্জিকাল স্ট্রাইক ২: আগাম অসামরিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ বলতে কী বোঝায়?

এখন স্পষ্ট যে ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের অনেক অভ্যন্তরের বালাকোটে হামলা চালিয়েছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নয়। এই এলাকাটি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পূর্ব দিকে মানসেহরা জেলার অন্তর্ভুক্ত। ইসলামাবাদ থেকে সড়ক পথে গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকায় যেতে প্রায় চার ঘণ্টা সময় লাগে।

পাকিস্তানি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে ভারতীয় বিমানের এই অনধিকার প্রবেশের জবাব তারা দেবে। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান কী কী করতে পারে?

প্রথমত, ভারতীয় বিমানবাহিনীর এই অপারেশন পাকিস্তানের পক্ষে যথেষ্ট বিড়ম্বনার, সে তারা সরকারিভাবে যাই বলুক না কেন। গত আট বছরের কম সময়ে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার পাকিস্তানি আকাশপথে বিদেশি বিমান ঢুকে পড়ল, এর আগের এ ঘটনা ঘটেছিল ২০১১ সালে, যখন বিশেষ মার্কিন বাহিনীর বিমান ওসামা বিন লাদেনের খোঁজে অ্যাবোটাবাদে ঢুকে পড়ে। প্রসঙ্গত, অ্যাবোটাবাদ বালাকোট থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এরকম একটা কথা চালু আছে যে আইএসআই নেভি সিলকে পাকিস্তানে ঢুকতে দিয়েছিল, তবে সে ঘটনায় ভারত জড়িত ছিল কিনা, তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ নেই।



কয়েকদিন আগেই পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক টেলিভিশন বার্তায় ভারতের উদ্দেশে বলেছিলেন, "যদি আপনারা ভেবে থাকেন যে পাকিস্তানে হামলা চালাবেন আর আমরা উত্তর দেব না, পাকিস্তান কিন্তু জবাব দেবে। পাকিস্তানের কাছে জবাব দেওয়া ছাড়া আর অন্য রাস্তা নেই।"

এবং মাত্র গতকালই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া ও বিমানবাহিনীর প্রধান মুজাহিদ আনওয়ার খানের বৈঠক হয়। দুই সেনাপ্রধান জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ভারতের কোনও রকম আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

আরও পড়ুন: ভারত-পাক দু পক্ষকেই সংযত হতে বলল চিন

পাকিস্তানের অনেকেই এখন ভাবছেন সে সময় এসে গেছে।

সরকার যতই বলুক না কেন যে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, এবং সেনা মুখপাত্র আসিফ গফুর যতই টুইট করুন না কেন যে "ভারতীয় বিমান তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময়ে কিছু পে লোড ফেলে গেছে", এবং তাতে "কোনও পরিকাঠামোয় আঘাত লাগেনি, কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি"- সরকার এবং সেনা দু'পক্ষই রাজনৈতিক বিরোধী এবং অন্তত একটা অংশের সংবাদমাধ্যমের আক্রমণের মুখে পড়বে।

পাকিস্তানকে হয় এর পর বলে যেতে হবে যে ভারতীয় বিমানবাহিনীর পদক্ষেপের ফলে তেমন কিছু ঘটেনি, অথবা ভারতের ওপর পাল্টা হামলা চালাতে হবে। যদি তারা প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে জনসাধারণের মধ্যে নৈতিকভাবে তার প্রভাব পড়বে। যদি তারা দ্বিতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে যে পরিস্থিতির সূচনা হবে তার ভার তারা গ্রহণ করার মত অবস্থায় নেই, সে রসদের দিক থেকেই হোক বা আর্থিক দিক থেকে।

ভারতের বিমান হামলার খবরের ১২ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরে আন্তর্জাতিক মহলের এ ঘটনায় মৌনতা অবলম্বনের ফলে স্পষ্ট যে পাকিস্তান যদি কোনও পাল্টা পদক্ষেপ নিতে যায়ও, তার আগে তাদের কূটনৈতিক স্তরে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কোনও রকম আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া তাদের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে, এমনকী তাদের সদা উপকারী চিনের পক্ষেও তেমন ঘটনা সমর্থন করা কষ্টকর হবে।

পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, তাতে এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সামনে খুব বেশি রাস্তা খোলা নেই।

Read the Full Story in English

Surgical Strike Explained
Advertisment