তাঁরা করোনা যোদ্ধা। গত সাত মাস ধরে দিন রাত এক করে করোনা রোগীর সেবায় নিয়োজিত। কিন্তু আসন্ন দুর্গোৎসবের কারণে তাঁদের মন এখন ঘরমুখী। কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজের চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি যাননি। একটানা সাত দিন ডিউটি, আবার পরের সাত দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। এহেন পরিস্থিতিতে শারদোৎসবের আনন্দ পেতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেই হবে দুর্গাপুজো! এমনই উদ্যোগ নিয়েছেন চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা। কোভিড হাসপাতালে দুর্গাপুজো! তাও আবার করোনা ওয়ার্ড থেকে কিছুটা দূরেই! যা শুনে চক্ষু ছানাবড়া অনেকের। প্রথমে অনুমতি না পেলেও প্রায় ১৫ দিন টানাপোড়েনের পর বয়েজ হস্টেলের সামনে পুজো করার অনুমতি মিলিছে। কিন্তু এই বিষয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
রীতিমতো মণ্ডপ বেঁধে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। পুজোর মধ্যেই চলে আসবে প্রতিমা। কিন্তু ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই যেখানে করোনা ওয়ার্ড, সেই জায়গায় কোভিড হাসপাতালে কীভাবে পুজো করা যায়, প্রশ্ন তুলছেন অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞই। দুর্গাপুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণ না হলে উৎসবের পরে কলকাতায় সংক্রমণ-সুনামি হতে পারে বলে যেখানে আশঙ্কা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন চিকিৎসকরা, সেখানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা কীভাবে এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করতে পারেন তা নিয়ে জোর বিতর্ক। উদ্যোক্তারা অবশ্য বলছেন, সাত মাস ধরে দিনরাত পরিশ্রম করে ক্লান্ত কোভিড যোদ্ধারা। দীর্ঘদিন অনেকেই বাড়ি যাননি। পুজোর সময় তাই মনটা তাঁদের বাড়িতেই পড়ে। তাই পুজোর চারদিন একটু উৎসবের আমেজ পেলে মন ভাল থাকবে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাই এমন আয়োজন।
আরও পড়ুন আমফান বিধ্বস্ত সুন্দরবনের গ্রামে পুজোর গন্ধ ফেরাল কলকাতার বারোয়ারি
এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় আয়োজকরা একটা পোস্টও করেন বিতর্কের জবাব দিতে। তাতে লেখা হয়েছে, "পুজোর সময়েও প্রত্যেক দিন ২৪x৭ খোলা থাকবে সরকারি হাসপাতালের সমস্ত পরিষেবা। মানে বুঝলেন? এই যে কোভিড যোদ্ধারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তারা পুজোর সময়েও তাদের যুদ্ধক্ষেত্রেই থাকবেন। এমন অনেকেই আছেন যারা প্যানডেমিক-এর শুরু থেকে বাড়ি যেতে পারেননি, বা খুব বেশি হলে একবার। কবে যেতে পারবেন তারও ঠিক নেই।" কোভিড হাসপাতালের বয়েজ হস্টেলের জায়গা বাছাই নিয়ে বলা হয়েছে, "জায়গা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে 'হাসপাতাল ক্যাম্পাস এর বাইরে', নিরাপদ দূরত্বে মেইন হস্টেল প্রাঙ্গন। ফলত, 'হাসপাতালে পুজো হাসপাতালে পুজো' বলে মিথ্যে চেঁচামেচি বন্ধ হোক।"
উদ্যোক্তাদের মূল বক্তব্য, এতে বিতর্কের কোনও কারণ নেই। এই উৎসবের কটা দিন কোভিড যোদ্ধাদের একটু প্রাণ ও মনের আরাম দিতেই এই উদ্যোগ। অতিমারীতে তাঁরাই যোদ্ধার মতো লড়াই করেছেন করোনার সঙ্গে। তাহলে তাঁরা উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন কেন?
আরও পড়ুন করোনাতঙ্কে দুর্গাপুজোয় ভিড় কন্ট্রোল করতে তৃতীয়া থেকেই রাস্তায় পুলিশ
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন