রাজীব কুমারকে হাতে পেতে রীতিমতো যখন ঘুঁটি সাজাচ্ছে সিবিআই, তখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে প্রতিহত করতে কার্যত উঠেপড়ে লেগল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের গ্রেফতারির রক্ষাকবচ সরতেই নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে পার্ক স্ট্রিটে রাজীবের সরকারি কোয়ার্টার। আর এবার সিবিআইকে নজরবন্দি রাখার কাজও শুরু করে দিল পুলিশ। সোমবার সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরের বাইরে রীতিমতো টহল দিতে দেখা যাচ্ছে বিধাননগর পুলিশকে। সূত্রের খবর, ক্যামেরা লাগানো গাড়ি নিয়ে সারাদিন চক্কর কাটছে পুলিশ। আরেকটি সূত্রের দাবি, এদিন দুপুর ৩টে নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তব। এরপর থেকেই বেলা যত বেড়েছে সিজিও-র বাইরে ততই বেড়েছে পুলিশের সংখ্যা। তাহলে কি সিবিআই আধিকারিকদের গতিবিধির উপর নজর রাখছে পুলিশ?
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার লাউডন স্ট্রিটে কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীবের বাড়িতে সিবিআই হানা ঘিরে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। রাজীবের নাগাল পেতে পুলিশ-সিবিআই ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছিল। এমনকি, কলকাতা পুলিশের হাতে আটক হতেও হয়েছিল হানাদার সিবিআই আধিকারিকদের। সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয়, তাই এবার রীতিমতো আঁটঘাট বাঁধছে সিবিআই। অন্যদিকে, সিবিআই-কে রুখতে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশও। পার্ক স্ট্রিটে বর্তমান এডিজি সিআইডি রাজীবের কোয়ার্টারের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু সিজিও-তে এদিন যেভাবে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেল, তা বাড়তি গুরুত্ব দিয়েই দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আরও পড়ুন: বারাসত আদালতে রাজীব কুমার, সুপ্রিম কোর্টে সিবিআইয়ের ক্যাভিয়েট
অন্যদিকে, রাজীব কুমারের সন্ধান পেতে নবান্নে গিয়ে রবিবার ডিজিকে জোড়া চিঠি দিয়েছিল সিবিআই। সেই চিঠির উত্তর সিবিআইকে এদিন ডিজি পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে খবর। যদিও সিবিআইয়ের দাবি, তারা এখনও কোনও জবাব পাননি। ডিজিকে লেখা চিঠিতে রাজীব কুমারকে সোমবার দুপুরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু শনিবারের মতো এদিনও হাজিরা এড়িয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন নগরপাল। ডিজির পাশাপাশি রবিবার মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকেও চিঠি দেওয়ার জন্য নবান্নে গিয়েছিলেন সিবিআই আধিকারিকরা। কিন্তু সিবিআই-এর সেই চিঠি গ্রহণ করা হয়নি। সেই চিঠি আজ ফের নবান্নে গিয়ে জমা দেয় সিবিআই।
এদিকে, বারাসত আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন কলকাতার প্রাক্তন নগরপাল রাজীব কুমার। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হবে বলে জানা যাচ্ছে। এর পাল্টা সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েটও দাখিল করেছে সিবিআই। পাশাপাশি সিবিআই সূত্রে খবর, রাজীবের বিরুদ্ধে আদালতে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হতে পারে। অন্যদিকে, বারাসত আদালতে রাজীবের মামলা নথিভুক্তই করা হয়নি বলে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন সরকারি আইনজীবী (পাবলিক প্রসিকিউটর) শান্তময় বসু। তিনি দাবি করেন, ‘‘শনি ও রবিবার আদালত বন্ধ ছিল। আজও বন্ধ রয়েছে। বার কাউন্সিলের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান সনাতন মুখোপাধ্যায় মারা গিয়েছেন, তাই আজ বন্ধ রয়েছে আদালত। ফলে আজ কোনও মামলা ফাইল করা হবে না। সম্ভবত কোনও মামলা ফাইল করা হয়নি। ফাইল হলে মামলাটি আমার নজরে আসত’’।