আবারও বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারিয়েছেন বছর ৫৯ এর সজল বন্দোপাধ্যায়। আমতলার বাসিন্দা সজল বাবু আর ফিরলেন না দুই বাসের রেষারেষিতে। বাড়িতে ছেলের জন্মদিন উদযাপনে সবাই ব্যস্ত তখন, তার মধ্যেই এই ভয়ঙ্কর ঘটনা। ছেলে সাগরময় বন্দোপাধ্যায় কলকাতার বিখ্যাত বাস গ্রুপ 'বাস ও পিডিয়ার' ফাউন্ডার। একজন আদ্যোপান্ত বাস প্রেমিকের পরিবারেই ঘটে গেছে এহেন মর্মান্তিক ঘটনা।
রবীন্দ্র সদনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সজল বাবু। ২২৭ এবং ২৩৫ রুটের বাসের রেষারেষি প্রাণ কেড়ে নিল তাঁর। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তিনি অপেক্ষা করছিলেন এজিসি বোস রোডের বাস স্ট্যান্ডে। দুর থেকেই দেখতে পান আমতলা-গামী ২৩৫ নম্বর রুটের বাস। তাকেই টেক্কা দেওয়ার জোরদার চেষ্টা চালাচ্ছিল ২২৭। পুলিশি সূত্রে খবর, ২৩৫ বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ালে তিনি সেই বাসে উঠতে যান। কিন্তু বাঁদিক থেকে ২২৭ ঢুকে পড়ে যাত্রী তোলার জন্য। দুই বাসের মধ্যে এতটুকু জায়গা না পেয়ে আটকে যান সজলবাবু, অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
ঘটনা প্রসঙ্গে ভেঙে পড়েছেন কলকাতা বাস ও পিডিয়ার সকলেই। গ্রুপের জেনারেল সেক্রেটারি অনিকেত বন্দোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানান, আমরা ভীষণ মর্মাহত। ছেলের জন্মদিনের দিনই বাবা এভাবে বাসের রেষারেষিতে চলে যাবেন যেন ভাবনাতীত। সজল বাবুকে সেই মুহূর্তে নিয়ে যাওয়া হয় sskm হাসপাতালে। অনিকেতের সূত্রে খবর, তার কোনরকম রক্তপাত হয়নি। ইন্টারনাল হ্যামারেজের কারণে মৃত্যু বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন < পুজোর আগেই চালু টালা ব্রিজ? উদ্বোধনের প্রস্তুতি ঘুরে দেখল ieBangla >
কলকাতা শহরের বাস পরিষেবা এবং পরিবহন নিয়েও আশাহত অনিকেত। বললেন, "যে হারে বাসের মাত্রা রাত হতে কমেছে, ভীষণ মাত্রায় এই ধরনের বিপদ বেড়েছে। রাতে আমতলা যাওয়ার ২৩৫ নম্বর ছাড়া আর কোনও বাস নেই। সেই জন্যই ওই বাসের দেখা পেলে লোকজন ছুটতে থাকে। তার সঙ্গে রেষারেষি তো আছেই। বিশেষ করে মিনি বাস, প্রাইভেট বাসের মধ্যে এধরনের ঘটনা বেশি দেখা যায়। রবীন্দ্র সদনে আশেপাশে এত গুলো রাস্তা, ইউটার্ন যেকোনও মুহূর্তে বিপদ হতে পারে"। অনিকেত চিহ্নিত করলেন আরও কিছু বিষয়কে।
বিগত দুইবছরে শহর কলকাতার পরিবহন যে জায়গায় গিয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হওয়াই স্বাভাবিক বলে দাবি করেছেন অনিকেত। রাত্রি হলেই বাসের দেখা নেই। এমনকি সরকারি বাসগুলোও অনেক সময় না দাড়িয়ে ডানদিক দিয়ে চলে যায়। তার সঙ্গে রাত্রি ৮টা বাজলে বাসের স্পিড নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে বাস ও পিডিয়ার এই সদস্য। বললেন, "বাসের চাকা ছোট হয়ে গেছে। ব্রেক মারলেও থামতে সময় নেয়। রাত ৮টার পর যে গতিতে বাস ছুটতে থাকে, ভীষন ভয়ঙ্কর। তারসঙ্গে রাস্তাঘাটে ছোট গাড়ির মাত্রা যে হারে বেড়েছে, বাসের পক্ষে খুবই অসুবিধা হয় দাড়িয়েছে। এদিক ওদিক থেকে গাড়ি মাঝখানে ঢুকে পড়ে। তার থেকেও বড় বিষয়, এখন অনেকেই লাইসেন্স পেয়ে যায়, কিন্তু আদৌ তারা বাস চালাতে পারে কিনা সেই নিয়ে খুব সন্দেহ। এদিক ওদিক থেকে চেপে দিচ্ছে, মানুষ তাল সামলাতে পারছে না"।
আরও পড়ুন < সপ্তমী থেকে নবমী ভোর ৫টা পর্যন্ত পরিষেবা, জেনে নিন পুজো স্পেশ্যাল মেট্রোর সময়সূচি >
শহর কলকাতায় এহেন বিপদ আজ নতুন নয়। বিশেষ কিছু রুটের বাসে রেষারেষি কিংবা অত্যন্ত স্পিডে চালানোর ফলে দুর্ঘটনা আগেও শোনা গিয়েছে। তবে সজল বাবুর এই ঘটনার জেরে বা স্টপ বদলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। অনিকেত জানান, ভেঙে পড়েছেন সাগরময় এবং তার পরিবার। বাস পরিষেবা নিয়ে সবসময় সক্রিয় যে ব্যক্তি, তার পরিবারেই এমন ঘটনা ঘটবে এক্কেবারেই ভাবা যায় না। তবে এই নিয়ে কলকাতা পুলিশকে ব্যাক্তিগত ভাবে তাঁরা কিছুই জানান নি। সূত্রের খবর, গ্রেফতার করা হয়েছে সেই বাস ড্রাইভারকে।