রবিবার রাতে টালিগঞ্জ থানায় ঢুকে পুলিশকে মারধরের ঘটনায় এবার ময়দানে নামলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই পুলিশকে একহাত নিয়ে দিলীপবাবু বললেন, "এবার থেকে তো পুলিশকে রক্ষা করতেও কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগবে।" সোমবার কলকাতায় বিজেপির সদর কার্যালয়ে এক সাংবাদিক বৈঠকে একথা বলেন দিলীপবাবু।
পুলিশের প্রতি কিঞ্চিৎ ব্যঙ্গাত্মক উক্তি অবশ্য এই প্রথম নয় দিলীপবাবুর। জুন মাসের শেষে ভাটপাড়া, গুড়াপ, পাত্রসায়র ইত্যাদি জায়গায় রাজনৈতিক হিংসার প্রেক্ষিতে পুলিশকে নিশানা করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। "দিন পাল্টে গিয়েছে, অভ্যাস পাল্টান," এ ভাষায় সেসময় পুলিশকে বার্তা দেন মেদিনীপুরের সাংসদ। বিজেপি কর্মীদের 'মিথ্যা মামলায়' জড়ানো হচ্ছে বলে এর আগে বহুবার পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দিলীপ ঘোষ এবং তাঁর দলীয় নেতারা। কেশপুরের এক সভায় দিলীপবাবু বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পুলিশের…লোকের কাছে মার খেতে হচ্ছে। আমার মনে হয় এবার বাড়িতে বউয়ের কাছেও মার খাবে পুলিশ।"
প্রসঙ্গত, রবিবার রাতে প্রকাশ্যে মদ্যপান করার অভিযোগে কিছু যুবককে আটক করে টালিগঞ্জ থানার পুলিশ, যার জেরে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। খবরে প্রকাশ, ধৃতরা চেতলার বাসিন্দা, এবং তাদের আটক হওয়ার খবর পেয়ে দফায় দফায় টালিগঞ্জ থানায় তাণ্ডব চালায় উত্তেজিত জনতা। থানায় ঢুকে পুলিশ কর্মীদের মারধর করা হয়, এমনকি থানা লক্ষ্য করে ইট-পাটকেলও ছোড়া হয়। ঘটনায় আহত হন অন্তত সাতজন পুরুষ ও মহিলা পুলিশকর্মী।
আরও পড়ুন: নগরপালের নয়া ভাবনায় নাগরিক-মনোরঞ্জনে এবার কলকাতা পুলিশ ব্যান্ড
সোমবার সকালে একাধিক দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ, এবং ঘটনার ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পার হওয়ার পর ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজের সাহায্যে অবশেষে গ্রেফতার করা হয় দীপক অধিকারি এবং ছোটকা দলুই নামে দুই ব্যক্তিকে, যদিও এরা মূল অভিযুক্ত নয়। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে আকাশ এবং গুল্লু নামে দুজনের খোঁজ করছে পুলিশ।
সূত্রের আরও খবর, গোটা ঘটনায় অত্যন্ত অসন্তুষ্ট নগরপাল অনুজ শর্মা। তার প্রধান কারণ, টালিগঞ্জ থানার ওসি অনুপ ঘোষ পুলিশকে নিগ্রহের ঘটনার বিন্দুবিসর্গ জানান নি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে, নিয়ম মেনে যা প্রথমেই করা উচিত ছিল তাঁর। যার ফলে সোমবার সকালে সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে খবর পান শীর্ষকর্তারা। এর জেরে শো কজ করা হয়েছে অনুপ ঘোষকে, এবং সংশ্লিষ্ট ডিসি (সাউথ) মিরাজ খালিদকে ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে এ ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়ে গিয়েছে। নাম জড়িয়েছে শহরের মেয়র ফিরহাদ 'ববি' হাকিমের কিছু ঘনিষ্ঠের। ওদিকে তৃণমূলের দাবি, দুষ্কৃতীরা বিজেপি সমর্থক। ফিরহাদ হাকিম অবশ্য জানিয়েছেন, "আইন আইনের পথে চলবে।"