/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/25/atulprasad-sen-2025-08-25-19-16-31.jpg)
Atulprasad Sen: অতুলপ্রসাদ সেন।
Atulprasad Sen: বাংলা গানের ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও কাজী নজরুল ইসলামের পাশাপাশি অমর নাম হল অতুলপ্রসাদ সেন (১৮৭১–১৯৩৪)। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। তাঁর রচিত গানগুলি মূলত দেশাত্মবোধক, ভক্তিমূলক ও প্রেমভিত্তিক হলেও ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখকষ্ট তাঁর সৃষ্টিকে করেছে গভীর এবং আবেগময়।
বাংলা সংগীতের অগ্রদূত
১৮৭১ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন অতুলপ্রসাদ সেন। তাঁদের আদি নিবাস ছিল শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার মগর গ্রামে। অল্প বয়সেই তিনি পিতৃহারা হন এবং মাতামহ কালীনারায়ণ গুপ্তের কাছে বড় হন। কালীনারায়ণ ছিলেন ভক্তিমূলক গানের রচয়িতা এবং গায়ক। সেখান থেকেই অতুলপ্রসাদের সংগীত সাধনার শুরু হয়েছিল।
আরও পড়ুন- খাসির মাংসের দুর্দান্ত এই রান্না! একবার খেলে চিরকাল মনে থাকবে
১৮৯০ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। এরপর লন্ডনের মিডল টেম্পলে আইন পড়তে যান। বিলেতেই প্রথম গান লেখার প্রেরণা পান। বিদেশি সুর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি রচনা করেন তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান, 'উঠ গো ভারতলক্ষ্মী'। বিলেতে তিনি চিত্তরঞ্জন দাশ, অরবিন্দ ঘোষ, সরোজিনী নাইডুর মত বিশিষ্টদের কাছে অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
আরও পড়ুন- পূজার সময় হাঁচি শুভ নাকি অশুভ, হাঁচির ব্যাপারে শাস্ত্র কী বলছে?
১৮৯৪ সালে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বাংলায় ফেরেন এবং পরে লখনউতে আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি অউধ বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হন। জীবদ্দশাতেই লখনউ শহরে তাঁর বাসভবনের রাস্তার নামকরণ হয়েছিল তাঁর নামে। আইনজীবী হয়েও তাঁর আসল ভালোবাসা ছিল গান। প্রায় প্রতিদিনই তাঁর বাড়িতে সংগীতের আসর বসত। সেখানে খ্যাতনামা ওস্তাদরা যোগ দিতেন।
আরও পড়ুন- তুঙ্গে গণেশ চতুর্থীর উন্মাদনা! কম খরচে ঘর সাজান আকর্ষণীয়ভাবে
অতুলপ্রসাদ সেন বাংলা গানে ঠুংরি ধারার প্রবর্তক। তিনি প্রথম বাংলায় গজল রচনা করেন। তার গান তিনটি প্রধান ধারায় বিভক্ত ছিল, ১) দেশাত্মবোধক গান: 'উঠ গো ভারতলক্ষ্মী', 'হও ধরমেতে ধীর'। ২) ভক্তিগীতি: ভগবানের প্রতি নিবেদিত অসংখ্য গান। ৩) প্রেমের গান: করুণ আবেগময় সুর। তাঁর সুরের বৈশিষ্ট্যতে ছিল, হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রভাব। তিনি বাংলা গানে দাদরা, ঠুংরি, খেয়াল ইত্যাদির ধারা প্রয়োগ করেছিলেন। ফলে তাঁর গান একদিকে ছিল শাস্ত্রীয়, অন্যদিকে হৃদয়স্পর্শী।
আরও পড়ুন- ৫০০ বছর পর গণেশ চতুর্থীতে ৫ বিরল যোগ, খুলবে এই ৩ রাশির ভাগ্য
লন্ডনে পড়াশোনার সময় মামাতো বোন হেমকুসুমকে তিনি বিয়ে করেন। কিন্তু, দাম্পত্যজীবন সুখের হয়নি। স্ত্রী ও মায়ের দ্বন্দ্বে সংসার ভেঙে যায়। এই ব্যক্তিগত বেদনা তাঁর গানে করুণ রস যোগ করেছিল। তার গানের সংকলন 'গীতিপুঞ্জ' প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩১ সালে। জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পর তাঁর গান বিভিন্ন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর রচিত গানগুলির সংখ্যা প্রায় ২০৬টির মত। এর মধ্যে ৫০–৬০টি বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
বাংলা গানকে রাগপ্রধান ধারা, ঠুংরি এবং গজলের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার কৃতিত্ব তাঁর। কাজি নজরুল ইসলাম-সহ পরবর্তী প্রজন্মের গীতিকাররা তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর, 'মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা' গানটি বাংলার স্বাধীনতার সংগ্রামে প্রেরণা জুগিয়েছিল। ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট লখনউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর বাংলাদেশের গাজিপুর জেলার কাওরাইদ ব্রহ্ম মন্দির প্রাঙ্গণে তার অস্থির সমাধি হয়েছিল। আজও তিনি বাংলা গানের ইতিহাসে এক অগ্রদূত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন।