/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/18/firingi-kali-mandir-2025-10-18-16-40-16.jpg)
Firingi Kali Mandir: কলকাতার ফিরিঙ্গি কালী মন্দির।
Firingi Kali Mandir: কলকাতার বৌবাজারের ফিরিঙ্গি কালী মন্দির আজও ভক্তদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় তীর্থস্থান। একসময় মন্দিরের শিবলিঙ্গের পাশের ছোট্ট চালাঘরে দেবী কালিকা প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। মন্দিরটি শ্মশানকালী নামে পরিচিত, তবে দেবীর নাম সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা। মন্দিরের ফলকে লেখা আছে, 'ওঁ শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানী, স্থাপিত ৯০৫ সাল।'
পর্তুগিজ নাগরিক হ্যান্সম্যান অ্যান্টনি
প্রাচীনকালে গঙ্গা এখনকার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ দিয়ে বয়ে যেত। গঙ্গার পাশের গভীর অরণ্যে রাতের অন্ধকারে মানুষ ভয়ে যেতে পারত না। সেই সময় এক মহাশ্মশান এবং ছোট্ট চালাঘরেই দেবী কালিকার আরাধনা হত। স্থানীয় লোককথায় জানা যায়, ১৯শ শতকের শুরুতে পর্তুগিজ নাগরিক হ্যান্সম্যান অ্যান্টনি কলকাতায় বসতি স্থাপন করেন। তিনি বাংলার কবিগানের সঙ্গে পরিচিত হন এবং নিজেই গান লিখে গাইতে শুরু করেন। মানবতার এবং প্রেমের গান গাইতে তিনি পরিচিতি পান অ্যান্টনি কবিয়াল বা ফিরিঙ্গি নামে।
আরও পড়ুন- জাগ্রত দেবী! মন্দির নির্মাণে জড়িয়ে এই বেদনাময় কাহিনি
পরবর্তীতে তিনি সৌদামিনী নামে এক ব্রাহ্মণ কন্যাকে সতীদাহ থেকে বাঁচিয়ে বিয়ে করেন এবং এখানেই স্থায়ীভাবে থাকেন। প্রায়ই তিনি এই শ্মশানের চালাঘরে আসতেন এবং মা শ্যামাকে তাঁর গান শোনাতেন। ধীরে ধীরে মন্দিরটি লোকমুখে পরিচিত হয়ে ওঠে ফিরিঙ্গি কালী মন্দির নামে। ১৮২০ থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত মন্দিরের পূজারি ছিলেন শ্রীমন্ত পণ্ডিত। তিনি নিঃসন্তান হওয়ায় ১৮৮০ সালে শশিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৬০ টাকায় দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে মন্দিরটি বিক্রি করেন। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এখনও মন্দিরের সেবায়ত। কালীমন্দির ও দেবীমূর্তি প্রথমে কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা জানা যায় না।
আরও পড়ুন- হইচই হচ্ছে, কিন্তু এগুলো জানলে ধনতেরাস সম্পর্কে নতুন করে ভাববেন!
তবে ছেচল্লিশের দাঙ্গায় পুরোনো মূর্তিটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে নতুন মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে মন্দিরে সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার মা কালী মূর্তি রয়েছে, যা ত্রিনয়নী এবং সুদর্শনা। মন্দির সংলগ্ন শিব মন্দিরটি আটচালা। কালী মূর্তি ছাড়াও এখানে শীতলা, মনসা, দুর্গা, শিব এবং নারায়ণের মূর্তি আছে। প্রতি অমাবস্যায় কালীপূজা এবং প্রতি পূর্ণিমায় এখানে সত্যনারায়ণ পূজা হয়।
আরও পড়ুন- ধনতেরাসে এর মধ্যে কোনও ১টা উপহার দিন, আত্মীয়-বন্ধুরা চিরকাল সুনাম করবে!
ফিরিঙ্গি কালী মন্দির কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। এটি শুধুমাত্র পূজা ও ধর্মীয় উৎসবের কেন্দ্র নয়, বরং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ভক্তদের মিলনের স্থল। ধনতেরাসের সময় এই মন্দির বিশেষভাবে আলোয় সাজানো হয়। রাতে প্রদীপ জ্বালিয়ে মা কালীকে আহবান করা হয়। ভক্তরা পায়েস, চাটনি, মিষ্টি এবং নৈবেদ্য দিয়ে দেবীর আরাধনা করেন।
আরও পড়ুন- ধনতেরাসের কোন মুহূর্ত সেরা, কেনাকাটা করলে হয় ধনবৃষ্টি?
মন্দিরটি জনপ্রিয়তার দিক থেকে কালিঘাটের পরেই আসে। প্রতিদিন অসংখ্য ভক্ত মা কালীকে দেখতে এখানে ভিড় জমান। বিশেষ করে ধনতেরাস ও কালীপুজোর সময় এখানে ভক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মন্দিরে আসা প্রতিটি ভক্ত মা কালী ও সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতার করুণা, সমৃদ্ধি এবং সুখ কামনা করেন।
আরও পড়ুন- শহর কলকাতার মন্দির, যাকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল জনপ্রিয় সিনেমা
ফিরিঙ্গি কালী মন্দির কেবল ধর্মীয় উৎসবের কেন্দ্র নয়। বরং কলকাতার সাংস্কৃতিক ইতিহাস এবং পৌরাণিক ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। এর ইতিহাস, কিংবদন্তি এবং প্রতিদিনের পূজা মিলিয়ে মন্দিরটি স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকদের কাছে এক অনন্য সম্পদ। এই মন্দিরে ভক্তরা শুধু পূজা নয়, একে কেন্দ্র করে সামাজিক মিলন এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করে। এটি কলকাতার বৌবাজারের এক অমূল্য রত্ন। যেখানে দেবীর আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য প্রতিদিন ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে।