/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/18/dhantteras-2025-2025-10-18-13-18-34.jpg)
Dhanteras 2025: ধনত্রয়োদশী ২০২৫।
Dhanteras 2025: বাঙালি সবকিছুকেই আপন করে নেয়। ধনতেরাসকেও নিয়েছে। খুব বেশি বছর হয়নি, বাঙালি ধনতেরাস নিয়ে ব্যাপক হইচই শুরু করেছে। কিন্তু, এর সব ব্যাপারগুলো ৯০ শতাংশ বাঙালিই জানেন না!
ধনতেরাস, বা ধনত্রয়োদশী, হিন্দু সংস্কৃতিতে দীপাবলির প্রথম দিন হিসেবে উদযাপিত হয়। এই দিনটি হিন্দু ক্যালেন্ডারের আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীতে পড়ে এবং সমৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও সুখ কামনার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ধনতেরাসের শব্দটি দুটি অংশে বিভক্ত, 'ধন' অর্থ সম্পদ এবং 'তেরাস' অর্থ ত্রয়োদশী। এই দিনটিতে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চর্চার পাশাপাশি, নতুন ধন-সম্পদ কেনা একটি প্রচলিত রীতি। তবে, বাঙালির লাফিয়ে পড়ার আগে ধনতেরাস নিয়ে এই হইচই মূলত সীমাবদ্ধ ছিল অবাঙালি হিন্দুস্তানিদের মধ্যে।
আরও পড়ুন- চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচায় পড়ে গেলেন মহিলা, তারপর যা ঘটল তা শিউরে ওঠার মত!
ঐতিহাসিক এবং পৌরাণিক পটভূমি
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, ধনতেরাস সমুদ্র মন্থনের ঘটনার স্মরণে পালিত হয়। সমুদ্র মন্থনের সময় দেবী লক্ষ্মী সোনার পাত্র নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে উঠে এসেছিলেন আয়ুর্বেদ ও সুস্থতার দেবতা ভগবান ধন্বন্তরী। তাঁর একহাতে ছিল অমৃতের পাত্র। অন্য হাতে আয়ুর্বেদ সম্পর্কিত গ্রন্থ। যা জীবের সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ুর সঙ্গে সম্পর্কিত।
আরও পড়ুন- ধনতেরাসে এর মধ্যে কোনও ১টা উপহার দিন, আত্মীয়-বন্ধুরা চিরকাল সুনাম করবে!
এক কিংবদন্তি রাজপুত্রের জীবন রক্ষা করার গল্পও ধনতেরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। রাজপুত্রকে সাপের কামড় থেকে রক্ষা করতে তাঁর নববধূ সোনার মুদ্রা ও রূপার অলঙ্কার দিয়ে ঘর সাজিয়ে এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে যমরাজকে বিভ্রান্ত করেছিলেন। এই কারণেই ধনতেরাসকে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবেও ধরা হয়।
আরও পড়ুন- ধনতেরাসের কোন মুহূর্ত সেরা, কেনাকাটা করলে হয় ধনবৃষ্টি?
ধনতেরাসে ঘর পরিষ্কার করে সাজানো হয় এবং রঙিন আলপনা দেওয়া হয়। অন্ধকারের ওপর আলোর বিজয়ের প্রতীক হিসেবে প্রদীপ জ্বালানো হয়। হিন্দুরা এই দিনটি নতুন কেনাকাটার জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করে। বিশেষত সোনা, রূপা ও নতুন বাসনপত্র কেনাকে শুভ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এদিন কেনা জিনিসগুলি ঘরে সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্য নিয়ে আসে।
আরও পড়ুন- ধনতেরাসে ধনবৃদ্ধির এই হল সেরা ৭টি সহজ উপায়, পূজার শুভ সময় কখন?
দক্ষিণ ভারতে, ব্রাহ্মণ নারীরা এই তিথি উপলক্ষে 'মারুন্ডু' তৈরি করে তা নরক চতুর্দশীর আগে স্বাস্থ্যসেবার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে। গুজরাতি পরিবারগুলি নতুন বছরের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষ খাবার যেমন ডাল বাথ এবং মালপুয়া বানায়।
আরও পড়ুন- ১৮ না ১৯ অক্টোবর ধনতেরাস কবে? কী কিনলে ফিরবে কপাল, জানুন ৫ গুরুত্বপূর্ণ টিপস
প্রাচীনকালে ধন্বন্তরীর পূজা ছিল মূলত স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা লাভের প্রতীক। সমৃদ্ধির পাশাপাশি, সুস্থতা মানুষকে সত্যিকারের সম্পদ দেয়। এই কারণেই এই দিনে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জনক ধন্বন্তরীর আরাধনা করা হয়। এই দিনকে ‘জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস’ হিসেবে পালন করাও হয়। সুতরাং, ধনতেরাস শুধু ধন-সম্পদের উৎসব নয়, বরং স্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু আর সমৃদ্ধিরও দিন।
এই তিথি পালন করতে লক্ষ্মী, ধন্বন্তরী এবং কুবেরের পূজা করা হয়। সোনা, রূপা, বাসনপত্র এবং কখনও বড় যন্ত্রপাতি কেনা হয়। ঘর ও প্রবেশদ্বার আলোকসজ্জা ও আলপনা দিয়ে সাজানো হয়। পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে উপহার, খাবার ভাগ করে নেন এবং পরস্পরকে শুভ কামনা জানান।
বর্তমান কালে ধনতেরাসে বাজার ও শপিং মলে মানুষের খুব ভিড় দেখা যায়। সোনা-রূপা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র কেনার প্রচলন এখন অনেক বেশি। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স, গৃহসজ্জা, পোশাক ও অন্যান্য ব্যবহারিক সামগ্রীও কেনা হয় এই বিশেষ তিথিতে। ব্যবসায়ীরা এদিন বিশেষ অফার এবং ডিসকাউন্ট দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, ধনতেরাস বা ধনত্রয়োদশী হিন্দু সংস্কৃতিতে শুধুমাত্র ধন-সম্পদের উৎসব নয়। এটি সুস্থতা, দীর্ঘায়ু এবং পারিবারিক ঐক্যের প্রতীক। পৌরাণিক কাহিনী, প্রদীপ জ্বালানো, আলপনার নকশা এবং নতুন কেনাকাটার রীতি এই দিনটিকে বিশেষ করে তোলে মাত্র। তাই ধনতেরাসের আসল শিক্ষা হল পার্থিব সম্পদ নয়, বরং সুস্থ এবং সমৃদ্ধ জীবন লাভের প্রতীক।