নবদুর্গার দ্বিতীয় রূপ দেবী ব্রহ্মচারিণীর। ব্রহ্ম হল তপস্যার একটি স্তর। ব্রহ্মচারিণী সেই অর্থে তপস্যাকারী বা তপশ্চারিণী। ‘ব্রহ্মচারিণী’ নামের অর্থ ‘ব্রহ্মচর্য ব্রত অবলম্বনকারিণী’ বা পালনকারিণী। দেবীর রূপ বলতে, তিনি দ্বিভুজা কিন্তু, ত্রিনয়নী। তাঁর পরনে সাদা শাড়ি ও ফুলের অলঙ্কার। এক হাতে কমণ্ডলু। দেবীর অন্য হাতে জপমালা। তন্ত্রমতে দেবী ব্রহ্মচারিণী ব্রহ্মের প্রতিনিধি রূপে দেবতাদের দর্পও চূর্ণ করেছিলেন। দেবীর ভৈরবের নাম চন্দ্রমৌলীশ্বর। দেবীপুরাণ অনুযায়ী, তিনি সর্ববেদে বিচরণ করেন। আর, সেই কারণেই দেবী পার্বতীরই অপর নাম ‘ব্রহ্মচারিণী’।
আশ্বিন এবং চৈত্র নবরাত্রির শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে দেবী পার্বতীকে ব্রহ্মচারিণী রূপে পূজা করা হয় । দেবী ব্রহ্মচারিণী সাধককে ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন। তাঁর পূজা করলে সংযম ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, সাধক অনন্ত পুণ্যফলও লাভ করে থাকেন। সাধক সর্বদা সিদ্ধি এবং বিজয় লাভ করে থাকেন দেবী ব্রহ্মচারিণীর আরাধনা করলে। নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে সাধক নিজের মনকে স্বাধিষ্ঠান চক্রে স্থির করে দেবী ব্রহ্মচারিণীর পূজা করেন। দেবীর জ্যোতির্ময়ী রূপের কথা আরাধনার সময় সাধক মনে কল্পনা করে থাকেন।
দেবীর ধ্যানমন্ত্র হল- 'বন্দে বাঞ্ছিতলাভায় চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাম্। জপমালাকমণ্ডলুধরাং ব্রহ্মচারিণীং শুভাম্। গৌরবর্ণাং স্বাধিষ্ঠানস্থিতাং দ্বিতীয়দুর্গাং ত্রিনেত্রাম্। ধবলবর্ণাং ব্রহ্মরূপাং পুষ্পালঙ্কারভূষিতাম্। পদ্মবদনাং পল্লবাধরাং কান্তঙ্কপোলাং পীনপয়োধরাম্। কমনীয়াং লাবণ্যাং স্মেরমুখীং নিম্ননাভিং নিতম্বনীম্।।'
আরও পড়ুন- নবদুর্গার প্রথম রূপ শৈলপুত্রী, দেবীর এই রূপের আরাধনা করলে কী পাবেন ভক্তরা?
কাশী বা বারাণসীর দুর্গাঘাটের কাছে রয়েছে দেবী ব্রহ্মচারিণীর মন্দির। তাঁর মন্দিরটি বেশ ছোট আকারের। দেবীপ্রতিমার উচ্চতাও খুব একটা বেশি নয়, হাতখানেক মাত্র। পূর্বমুখী দেবী ব্রহ্মচারিণীর মূর্তির মুখে সোনার মুখোশ লাগানো থাকে। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রি উৎসবের দ্বিতীয় দিনে কাশীর এই মন্দিরে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়। কাশীতে তাঁকে ভক্তরা ‘ছোটি দুর্গাজি’ও বলে থাকেন।
দেবীকে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় চিনির তৈরি বস্তু। গুজরাটের দিকে কলার বরফি বা আটার হালুয়া ভোগ হিসেবে দেবীকে দেওয়া হয়। সাধকদের একাংশ আবার মনে করেন, দেবী ব্রহ্মচারিণী সাদা পোশাক ছাড়াও সবুজ রং বিশেষ পছন্দ করেন। তিনি সাফল্যেরও দেবী।