'তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে। যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নবপ্রেমজালে...' সময়টা ১৯৩২, হিন্দুস্তান রেকর্ডে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের কণ্ঠে প্রথম তাঁর গান রেকর্ড করেন। জার্মানিতে সাউন্ড রেকর্ডিং নিয়ে পড়াশুনো শেষ করে কলকাতায় ফিরে আসেন চণ্ডীচরণ সাহা। প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম স্বদেশি রেকর্ড কোম্পানি হিন্দুস্তান রেকর্ড। রবি ঠাকুরের হাত ধরেই শুরু হয় প্রথম স্বদেশি রেকর্ড কোম্পানির যাত্রা। এর আগের যে গ্রামোফোন কোম্পানি, যা এখন সারেগামা নামে খ্যাত, তার ছিল ব্রিটিশ মালিকানা।
এই ঘর ছিল প্রথম রেকর্ডিং স্টুডিও। এখানেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর প্রথম গান রেকর্ড করেন। (Express photo: Shashi Ghosh)
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/05/hindustan-Record-companyhindustan-record-2-009.jpg)
রেকর্ডিং স্টুডিওর ব্যবহৃত পিয়ানো। সলিল চৌধুরী থেকে অতুল প্রসাদ এর মতন খ্যাতনামা শিল্পীরা রেকর্ডিংয়ের আগে এখানেই রেওয়াজ করতেন। সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের সময়ে যে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হত তার বেশিরভাগই জার্মানি থেকে নিয়ে এসেছিলেন চণ্ডীচরণ। খুবই ছোট জায়গা নিয়ে তৈরি করেন তাঁর রেকর্ডিং স্টুডিও।
প্রথম স্বদেশি রেকর্ড কোম্পানির স্থাপিত হওয়ার পর অত্যন্ত অনুপ্রাণিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ এখানেই রেকর্ড করেন তাঁর গাওয়া প্রথম গান। শুধু তাই নয়, সে সময়ে শান্তিনিকেতনে যারা সঙ্গীত নিয়ে পড়াশুনো করতেন তাঁদের সকলকে উৎসাহিত করতেন এখানে এসে তাঁদের গান রেকর্ড করতে। ১৯৩২ সাল থেকে আমৃত্যু নিজের অসংখ্য কবিতা গান রেকর্ড করে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ এই হিন্দুস্তান রেকর্ডেই। যার মধ্যে বেশিরভাগই এখন আর্কাইভে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
আরও ফটোস্টোরি দেখতে ক্লিক করুন: উত্তর কলকাতা সিরিজ: সাবেকি ঐতিহ্য বুকে নিয়ে আজ বিলুপ্তির পথে এই লাইব্রেরি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গাওয়া প্রথম গানের রেকর্ড। (Express photo: Shashi Ghosh)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের হাতে লেখা হিন্দুস্তান রেকর্ডের শংসাপত্র। (Express photo: Shashi Ghosh)
এরপর শচীন দেব বর্মণ, অতুল প্রসাদ, দেবব্রত বিশ্বাসের মত শিল্পীরা সকলেই এখান থেকে তাঁদের প্রথম গানের রেকর্ড বের করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত শচীন দেব বর্মণ তাঁর সমস্ত গানের রেকর্ড এখান থেকেই বের করেন। সে সময়ের বিখ্যাত শিল্পী কে এল সায়গলেরও সমস্ত গান এখান থেকে রেকর্ড করা হয়।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হিন্দুস্তান রেকর্ডের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সংস্থার বর্তমান কন্টেট হেড সঞ্জিব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ৭০ এর দশকে মহীনের ঘোড়াগুলি, ৯০ এর দশকে কবীর সুমন (তখন সুমন চট্টোপাধ্যায়), ইন্দ্রাণী সেন, সকলেই এখান থেকে তাঁদের প্রথম গান রেকর্ড করেন। বর্তমানে হিন্দুস্তান রেকর্ডের দুটি শাখা আছে, একটি কলকাতায়, অপরটি চেন্নাইয়ে। ৬০-৭০ দশকে দিল্লি ও মুম্বইয়ে যে শাখাগুলি ছিল তা পরে বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি।
তামিল নাড়ু সহ দক্ষিণ ভারতের একটি বড় অংশের মানুষ এখনও হিন্দুস্তান রেকর্ডের ভক্তিগীতি শুনতে পছন্দ করেন। সে জন্যই চেন্নাইয়ে রেকর্ডিংয়ের কাজ এখনও তাঁরা পুরোদমে চালিয়ে যেতে পারছেন বলে সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
আরও ফটোস্টোরি দেখতে ক্লিক করুন: ছবিতে দেখুন হগ মার্কেটের চালচিত্র
রেকর্ডিং স্টুডিওতে যাওয়ার সিঁড়িতে এখনও রয়েছে রবি ঠাকুরের ছবি। (Express photo: Shashi Ghosh)
হিন্দুস্তান রেকর্ডের বাড়ির নিচের তলায় এখনকার শোরুম। (Express photo: Shashi Ghosh)
আরও ফটোস্টোরি দেখতে ক্লিক করুন: কলকাতা ফুল বাজার: রঙের ক্যালাইডোস্কোপ
হিন্দুস্থান রেকর্ডের প্রতিষ্ঠাতা চণ্ডীচরণ সাহা সে সময়ে নিজেই রেকর্ডিংয়ের যন্ত্রপাতি কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে খুঁজে বের করতেন বিভিন্ন লোকসঙ্গীত। রেকর্ড করে আনতেন তার সুর। আজীবন রেকর্ডিংয়ের কাজ নিজেই করতে চাইতেন নিজের হাতে।
সিডির পাশাপাশি এখনও রয়ে গিয়েছে পুরনো সেই রেকর্ড। (Express photo: Shashi Ghosh)
আগে তিন ধরনের রেকর্ড তৈরি হত এখানে। রবীন্দ্রনাথ যে সময়ে রেকর্ড করেছিলেন সে সময় ছিল 78 RPM রেকর্ড। দুদিক মিলিয়ে মোট ৬ মিনিটের হত সেই রেকর্ড। এর পরে এলো 45 RPM। সব শেষে এল 33.33 RPM।
এরপর ক্যাসেট হয়ে সিডি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই চলেছে হিন্দুস্তান রেকর্ড। বদলাচ্ছে ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজিও। সোমলতা, সাহানা বাজপেয়ীর মত শিল্পীরা এখন এই সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন।