Advertisment

ফিল্মি সংলাপে বাজিমাৎ হাওড়া স্টেশনে স্বচ্ছতা অভিযানের

"স্বচ্ছতা অভিযানেরই একটা অংশ হিসেবে এটা করা হয়। যাত্রী সাধারণের মধ্যে স্বচ্ছতা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আকর্ষণীয়ভাবে প্রচার করা। ভাল সাড়া মিলেছে। আগের থেকে এখন হাওড়া স্টেশন অনেক পরিষ্কার।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
howrah station, হাওড়া স্টেশন

হাওড়া স্টেশনে সেই পোস্টার।

"মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে" নয়, 'এমএলএ ফাটাকেষ্ট'-র বেশে মিঠুন চক্রবর্তী পিস্তল হাতে বলছেন, "ময়লা ফেলব সেখানে, ডাস্টবিন যেখানে", কিংবা প্রেমের সেই "জাতীয় ছবি" 'দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে'-র  ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যে রাশভারী গলায় অমরীশ পুরী "যা সিমরণ যা, জি লে অপনি জিন্দেগি"-র বদলে বলছেন, "যা সিমরণ যা, প্ল্যাটফর্ম ভি সাফ রখতে হুয়ে যা।" মিঠুন-অমরীশ পুরীর মতো সংলাপ বদলে ফেলেছেন শশী কাপুরও। 'দিওয়ার' ছবিতে "তুমহারে পাস ক্যায়া হ্যায়?"-এর জবাবে নায়ক বলছেন, "মেরে মুহ মে পান হ্যায়। পর মত থুকনা।"

Advertisment

এমন মজার সব সংলাপের প্যারোডিই চোখে পড়বে হাওড়া স্টেশনের চতুর্দিকে। উদ্দেশ্য একটাই, স্বচ্ছতা অভিযান, স্টেশন চত্বর পরিষ্কার রাখতে যাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করা।

প্রায় এক বছর হল রেলের স্বচ্ছতা অভিযানে জায়গা করে নিয়েছে সেলুলয়েড। কখনও মিঠুন চক্রবর্তী, তো কখনও শশী কাপুর, আবার কখনও বাংলার উত্তম-সুচিত্রা জুটি। টলি-বলি তারকাদের হিট সংলাপে ভর করে স্বচ্ছতা অভিযানে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে হাওড়া ডিভিশন। ফিল্মস্টারদের ছবি সাঁটানো পোস্টার দিয়েই গত এক বছরে হাওড়া স্টেশন চত্বর অনেকটাই সাফ হয়েছে বলে দাবি রেল আধিকারিকদের।

এ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, "স্বচ্ছতা অভিযানেরই একটা অংশ হিসেবে এটা করা হয়েছে। যাত্রী সাধারণের মধ্যে স্বচ্ছতা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেই আকর্ষণীয়ভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রধান উদ্দেশ্য হল, স্বচ্ছতা নিয়ে মানুষকে আরও সচেতন করা। এ ধরনের প্রচারে অনেকটা সাফল্য মিলেছে। ভাল সাড়া মিলেছে। আগের থেকে এখন হাওড়া স্টেশন অনেক পরিষ্কার।"

Advertisment

howrah station, হাওড়া স্টেশন রেলের স্বচ্ছতা অভিযানে উত্তম-সুচিত্রার সেই সুপারহিট ছবি ‘সবার উপরে’-র পোস্টার

আরও পড়ুন: শুধু হাওড়াতেই নয়, ছোটো স্টেশনেও ঘুরবে জায়েন্ট ফ্যান!

ফিল্মি প্রচারে হাওড়া স্টেশনে ‘এত্তা জঞ্জাল’ অনেকটাই সাফ হয়েছে বলে মনে করেন পূর্ব রেলের প্রাক্তন মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রও। তিনিও বললেন, "এ ধরনের প্রচার করায় খুব ভাল সাড়া মিলেছে। হাওড়া স্টেশন এখন স্বচ্ছ স্টেশন।" তবে এত প্রচার সত্ত্বেও যে পুরোপুরি জঞ্জাল হঠানো সম্ভব হয়নি তা মেনেছেন রবিবাবু। তাঁর কথায়, "পুরোপুরি তো স্বচ্ছ হয়নি। কোনও যাত্রী এখনও পানের পিক ফেলছেন। তবে এসব আগের থেকে অনেকটা কমেছে। পুরোপুরি বন্ধ করতে আমরা এ ধরনের প্রচার চালিয়ে যাব।"

ফিল্মি সংলাপকে কাজে লাগিয়ে স্বচ্ছতার প্রচার! কীভাবে এল এমন আইডিয়া? জবাবে রবিবাবু জানালেন, "স্বচ্ছতা অভিযান হিসেবে মণীষীদের বাণী ব্যবহার করেই প্রচার চালানো হত। কিন্তু আমরা দেখলাম, এধরনের প্রচার বয়স্কদের নজর কাড়লেও, আজকের তরুণ প্রজন্মের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রচারের তেমন প্রভাব লক্ষ্য করলাম না। ফলে তরুণ প্রজন্মকে টানতে ফিল্ম পোস্টারের কথা ভাবি এবং তাতে সাফল্যও পাই।"

howrah station, হাওড়া স্টেশন ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপও স্বচ্ছতা অভিযানে

কোন ছবির পোস্টার বাছা হবে, কোন সংলাপ রেলের স্বচ্ছতা অভিযানে ব্যবহার করা হবে, সে নিয়েও ভাবনাচিন্তা করেছিলেন রবিবাবুরা। তিনি বললেন, "আমরা চেয়েছিলাম সব শ্রেণির মানুষের কাছে বার্তা যাক। সেকারণে আমরা 'শোলে' ছবির সংলাপও ব্যবহার করেছি। কারণ ‘শোলে’ বা ‘দিওয়ার’ ছবির সময়কার দর্শকদের বয়স এখন ৪৫-৫০। এই বয়সের মানুষদেরও নজর কাড়বে এই প্রচার।"

আরও পড়ুন: পাঁচ মিনিটেই জল ভর্তি হবে ২৪ কোচের ট্রেনের ট্যাঙ্ক, নয়া প্রযুক্তি ভারতীয় রেলের

এরপর রেলের ওই আধিকারিক বললেন, "প্রায় এক বছর আগে এই প্রচার শুরু হয়। সেসময় হাওড়ার ডিআরএম ছিলেন বদ্রীনারায়ণ। ওঁর সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা এই উদ্যোগ নিই। নিজেরাই সব সংলাপ ঠিক করি। ফিল্মি সংলাপগুলো একটু বদলে প্রচারের কাজে লাগাই। গোটা কাজটাই আমরা নিজেরা করেছি।"

রবিবাবুর মতে, স্বচ্ছতার প্রচারে বিনোদনের রসদ থাকায় সহজেই যাত্রী সাধারণকে আকৃষ্ট করেছে এই ক্যাম্পেন। তাইতো ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনে হাঁটতে হাঁটতে হাতে মোবাইল থাকলেও রংবাহারি ফিল্মি পোস্টার মিস করছেন না কোনও যাত্রীই। কেউবা আবার এমন ফিল্মি সংলাপ দেখে মুচকি হাসছেন। আর এখানেই জিতে গেছে রেলের প্রয়াস।

indian railway
Advertisment