Obesity trend Health Care: ভারতের চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (ICMR) সম্প্রতি জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা (NFHS-5, ২০১৯–২১)–এর ওপর ভিত্তি করে বিশাল এক গবেষণা চালিয়েছে। সেখানে ৫২,৭৩৭ বিবাহিত দম্পতির তথ্য বিশ্লেষণ করে উঠে এসেছে চমকে দেওয়ার মতো এক সত্য। তা হল, প্রতি চারজন বিবাহিত দম্পতির মধ্যে একজন দম্পতি (২৭.৪%) স্বামী–স্ত্রী উভয়ই মোটা (overweight বা obese), অর্থাৎ শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।
এই ‘shared obesity’ বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এতে বোঝা যাচ্ছে—দম্পতিরা শুধুই ভালোবাসা নয়, ওজনও যেন একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন- ঘুমোনোর কায়দাই শরীরের ১২টা বাজাচ্ছে না তো? জানুন, কীভাবে ঘুমোবেন
শহরের আলোতেই অন্ধকার
যত উন্নত জীবনযাত্রা, তত যেন ঝুঁকি বেশি। শহরের দম্পতিদের মধ্যে ৩৮.৪%–এর উভয়ের ওজনই বেশি, যেখানে গ্রামে এই হার মাত্র ২২.১%। ধনী দম্পতিদের মধ্যে এই প্রবণতা আরও ভয়াবহ—প্রায় ৪৭.৬%, যেখানে দরিদ্র দম্পতিদের মধ্যে এই হার মাত্র ১০.২%।
মানে, শহুরে ও বিত্তবানেরা নিজেদের লাইফস্টাইলের কারণে চারগুণ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
আরও পড়ুন- ঘরে বসে মাত্র ৫ মিনিটেই বানান হেয়ার ডাই! বদলে দিন চুলের রং
রাজ্যভিত্তিক ছবিটা আরও ভয়াবহ
বিভিন্ন রাজ্যের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—
-
কেরালা: ৫১.৩% দম্পতি
-
জম্মু ও কাশ্মীর: ৪৮.৫%
-
মণিপুর: ৪৭.৯%
-
দিল্লি: ৪৭.১%
-
গোয়া: ৪৫%
-
তামিলনাড়ু: ৪২.৭%
-
পাঞ্জাব: ৪২.৫%
এ সব রাজ্যে স্থূলতা যেন এক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন- চায়ের জলে পেতে পারেন উজ্জ্বল ত্বক, চুলের সৌন্দর্যও! কীভাবে? জানুন এখানে
তরুণ দম্পতিরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে
সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে—৩০ বছরের কমবয়সি নবদম্পতির মধ্যেই ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। যেমন:
-
কেরালা: ৪২.৮%
-
গোয়া: ৩৭%
-
জম্মু ও কাশ্মীর: ৩১.৬%
-
তামিলনাড়ু: ২৯.৬%
মানে, বিয়ের পর শরীরের যত্ন না নেওয়ার কারণে তরুণদের মধ্যেই স্থূলতা ছড়িয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন- সাবধান! রান্নাঘরের এই পাত্রগুলোরও মেয়াদ আছে, জানুন কবে বদলানো উচিত
কেন স্বামী–স্ত্রী একসঙ্গে মোটা হন?
গবেষণায় উঠে এসেছে এক মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা—“মিরর ইফেক্ট”।
যেমন:
-
একজনে ফাস্টফুড খেলে, অন্যজনও খান
-
একজনে ব্যায়াম বন্ধ করলে, সঙ্গীও ব্যায়াম করেন না
-
একসঙ্গে টিভি দেখা বা রাতে একসঙ্গে অতিরিক্ত খাওয়ার মত অভ্যাস এই দম্পতিদের রয়েছে
দু'জনের অভ্যাস ধীরে ধীরে মিলতে থাকে, আর সেই অভ্যাসই ওজন বাড়ানোর কারণ হয়ে ওঠে।
জীবনধারার পিছনের কারণ কী?
ICMR গবেষণায় উঠে এসেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, সেগুলো হল:
-
খাবার অ্যাপের কারণে ফাস্টফুডের প্রবণতা বাড়ছে
-
রাত জেগে সিরিজ দেখা ও বিভিন্ন কারণে রাতজাগার অভ্যাস (late-night snacking) বাড়ছে
-
একঘেয়ে, বসে থাকা জীবনধারা (৩২.৮% দম্পতি দিনে কয়েক ঘণ্টা টিভি দেখেন)
-
পারিবারিক কাঠামোর পরিবর্তন বা নিউক্লিয়ার পরিবার (nuclear family)-এর কারণে ওজন বাড়ছে
-
একই শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ড হলে ওজনের মিল বেশি (৩১.৪% দম্পতি) দেখা গেছে
গবেষকদের পরামর্শ: যুগলভিত্তিক সচেতনতা
ড. শালিনী সিং ও তাঁর ICMR-এর গবেষক দলের মতে—'এই অবস্থা একটি সামাজিকভাবে সংক্রামিত সমস্যা।' শুধু ব্যক্তি নয়, দম্পতি হিসেবে জীবনযাপনের ধরন বদলানোটাও এখন জরুরি।
তাঁদের মতে, বর্তমানে প্রয়োজন—
-
যুগলভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি
-
নিয়মিত একসঙ্গে হাঁটা, ব্যায়াম করা
-
একসঙ্গে স্বাস্থ্যকর রান্নার অভ্যাস গড়া
-
শিশুদের মধ্যে খাদ্য সংক্রান্ত সচেতনতা তৈরি করা
এবার কি একটু সচেতন হব?
এই গবেষণা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—স্থূলতা কেবল খাবারের সমস্যা নয়, এটি আমাদের সম্পর্ক, অভ্যাস, জীবনধারারও প্রতিফলন। বিয়ের পর যেমন জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়, তেমনই স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রেও একে অপরকে সচেতন করে তোলার সময় এসেছে। তাই ভালোবাসার চেয়েও এখন গুরুত্বপূর্ণ, একসঙ্গে থাকা, সুস্থ থাকা।