Sleeping Tips: আপনার ঘুমের ধরন বা ভঙ্গি, শুধুমাত্র আরামের জন্যই নয়, আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি পাশ ফিরে ঘুমান নাকি পিঠের ওপর ভর দিয়ে? এর ওপর কিন্তু আপনার শরীরের সুস্থতা নির্ভর করছে। মনে রাখবেন, এই ছোট অভ্যাস আপনার হজম, শ্বাসপ্রশ্বাস এমনকী হৃদযন্ত্রের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
পাশ ফিরে ঘুমানোর উপকারিতা
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পাশ ফিরে ঘুমানো (Side Sleeping) সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকরী ঘুমের পজিশন। দিল্লির ‘Wellness Home Clinic & Sleep Center’-এর পালমোনোলজিস্ট ডা. বিকাশ মিত্তল বলেন, 'পাশ ফিরে ঘুমানো নাক ডাকা কমাতে সাহায্য করে, মেরুদণ্ডকে সুস্থ রাখে। বিশেষ করে অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্তদের জন্য এটি খুবই উপকারী।'
আরও পড়ুন- মাত্র ৫ মিনিটে, ঘরে বসেই তৈরি করুন প্রাকৃতিক হেয়ার ডাই!
তিনি আরও জানিয়েছেন, সঠিক বালিশ ব্যবহার করলে শরীরের কোনও পজিশন দীর্ঘস্থায়ী আরাম দিতে পারে। তাছাড়া, গর্ভবতী নারীদের জন্য বাম পাশে ঘুমানো আরও ভালো বলেই তিনি জানিয়েছেন। কারণ, এতে ভ্রূণের দিকে রক্ত প্রবাহ বাড়ে।
আরও পড়ুন- চায়ের জলে পেতে পারেন উজ্জ্বল ত্বক, চুলের সৌন্দর্যও! কীভাবে? জানুন এখানে
পাশ ফিরে ঘুমানোর অসুবিধা:
-
দীর্ঘ সময় এইভাবে ঘুমালে কাঁধ ও নিতম্বে চাপ পড়তে পারে
-
মুখের একপাশে বলিরেখা বা চামড়া কুঁচকে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে
-
একপাশে ঘুমের অভ্যাস একপাক্ষিক ব্যথাও তৈরি করতে পারে
আরও পড়ুন- সাবধান! রান্নাঘরের এই পাত্রগুলোরও মেয়াদ আছে, জানুন কবে বদলানো উচিত
পিঠে ভর দিয়ে ঘুমানোর সুবিধা
পিঠে ভর দিয়ে ঘুমানো (Back Sleeping) ঘাড়, মাথা ও মেরুদণ্ডকে ভালো অবস্থানে রাখতে সাহায্য করে। যাঁরা জয়েন্ট বা ঘাড়ের ব্যথায় ভোগেন, তাঁরা এই পজিশনে ঘুমোলে উপকার পেতে পারেন। এই প্রসঙ্গে ডা. মিত্তল বলেন, 'চিৎ হয়ে ঘুমানো মুখের বলিরেখা রোধে সাহায্য করে এবং শরীরের ওজন সমানভাবে গোটা শরীরে ছড়িয়ে দেয়, ফলে হাড়ের ওপর চাপ কমে।'
আরও পড়ুন- আটা বা ময়দা মেখে ফ্রিজে রেখে দেন? এই ৩ সমস্যা পিছু ছাড়বে না
অসুবিধা:
-
চিৎ হয়ে ঘুমোলে অনেকের নাক ডাকা বা স্লিপ অ্যাপনিয়া বাড়াতে পারে
-
গর্ভবতী নারীদের জন্য চিৎ হয়ে ঘুমোনো ঝুঁকির ব্যাপার। কারণ এতে গর্ভস্থ ভ্রূণের দিকে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে
-
হজমজনিত সমস্যা বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সে ভোগা ব্যক্তিদের অবশ্য চিৎ হয়ে ঘুমোনো উচিত নয়।
কোন পাশে ঘুমানো ভালো – বাম না ডান?
ডা. মিত্তলের মতে, বাম পাশে ঘুমানো অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমাতে এবং হজম উন্নত করতে সাহায্য করে। মাধ্যাকর্ষণ অনুযায়ী, এই অবস্থায় বর্জ্য কোলনের মধ্য দিয়ে সহজে চলতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বাম দিকে ঘুমানো হৃদপিণ্ড এবং ভ্রূণে রক্তপ্রবাহ উন্নত করে। তবে, ডান দিকে ঘুমানো কখনও কখনও হৃদরোগীদের জন্য আরামদায়ক হতে পারে, যদিও এতে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়ার ঝুঁকি থাকে।
কারা কোন ঘুমের ভঙ্গি এড়িয়ে চলবেন?
-
স্লিপ অ্যাপনিয়া আক্রান্তরা: চিৎ হয়ে ঘুমানো এড়িয়ে চলাই ভালো
-
GERD রোগীরা: বাম পাশে ঘুমানো ভালো, চিৎ হয়ে নয়
-
গর্ভবতী নারীরা: বিশেষ করে তৃতীয় ত্রৈমাসিকে চিৎ হয়ে ঘুমানো এড়াতে হবে
-
কাঁধ/নিতম্ব ব্যথা: পাশে ঘুমানোর সময় উপযুক্ত সাপোর্ট ব্যবহার করা জরুরি
সঠিক গদি এবং বালিশের গুরুত্ব
ঘুমের ভঙ্গির পাশাপাশি, আপনার ব্যবহৃত গদি এবং বালিশের মানও গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো মানের গদি ও ঘাড়ের সহায়ক বালিশ ঘুমের গুণমান এবং দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে করে ঘাড়, কোমর বা মেরুদণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না।
একজনের জন্য যেটা ভালো, অন্যজনের জন্য সেটা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ঘুমের ভঙ্গি নির্বাচনের সময় ব্যক্তিগত আরাম, শারীরিক সমস্যা ও চিকিৎসকের পরামর্শ বিবেচনা করা উচিত। আপনি যদি সুস্থ থাকার জন্য ঘুমোতে চান, তাহলে শুধু সময় নয়, ঘুমের ভঙ্গির ব্যাপারেও এখন থেকেই সচেতন হোন।