Health Care Study: বয়স বাড়া মানেই কি স্বাস্থ্যের অবনতি? আধুনিক বিজ্ঞানে একটি বহুল আলোচিত শব্দ হলো 'Inflammaging' – যার মানে হল বার্ধক্যের সঙ্গে যুক্ত শরীরের নিম্নাঙ্গের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ। গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রদাহকে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ডিমেনশিয়ার মত রোগের অন্যতম কারণ বলে বিবেচনা করে আসছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা সেই ধারণাকে ধাক্কা দিয়েছে।
গবেষণার মূল বক্তব্য কী?
নেচার এজিং-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বার্ধক্যজনিত প্রদাহ আসলে সর্বজনীন নয়। এই গবেষণায় বিশ্বের চারটি ভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রদাহকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সেগুলো হল- ১) ইতালির প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক, ২) সিঙ্গাপুরের বয়স্ক জনগোষ্ঠী, ৩) বলিভিয়ার সিমানে উপজাতি, ৪) মালয়েশিয়ার ওরাং আসলি সম্প্রদায়।
আরও পড়ুন- মুলতানি মাটি কোন ত্বকে কেমনভাবে ব্যবহার করবেন? চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জানালেন সঠিক কায়দা
কী পাওয়া গেছে গবেষণায়?
ইতালি ও সিঙ্গাপুরের মানুষের মধ্যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রদাহজনিত অণুর বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছে। যেমন C-reactive protein (CRP) এবং Tumor Necrosis Factor (TNF) বেড়েছে। এগুলিকে দীর্ঘস্থায়ী রোগের অন্যতম সূচক হিসেবে ধরা হয়। অন্যদিকে, সিমানে ও ওরাং আসলি গোষ্ঠীর মধ্যে দেখা গিয়েছে, তাঁদের বয়স বাড়লেও প্রদাহ একই মাত্রায় বাড়েনি। বরং রোগের হার ছিল অনেক কম। যদিও তাঁদের সংক্রমণের হার বেশি, তবুও হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা ডিমেনশিয়ার মত রোগের পরিমাণ এই সব জনগোষ্ঠীতে অত্যন্ত কম।
আরও পড়ুন- এই তেলে আমলকি গরম করে লাগালেই চুল ঝরা বন্ধ, বলছেন চিকিৎসক
জীবনধারা কতটা প্রভাব ফেলে?
এই গবেষণাটি প্রমাণ করেছে যে প্রদাহের হার শুধুমাত্র বয়সের সঙ্গে নয়, বরং জীবনযাত্রার ধরন ও পরিবেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শহুরে জীবনধারায় কম শারীরিক পরিশ্রম, উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকায় প্রদাহ দীর্ঘমেয়াদে বেড়ে যায়। অন্যদিকে, সক্রিয় জীবন, প্রাকৃতিক খাদ্য ও পরিবেশের সংস্পর্শ প্রদাহকে প্রাকৃতিকভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন- ক্যালোরি চর্বি হবে না পেশী? নির্ভর করে এই ১টি ভিটামিনের ওপর!
চিকিৎসা এবং প্রতিক্রিয়া
এই নতুন তথ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বর্তমানে ইউরোপ ও এশিয়ান গবেষণার ওপর ভিত্তি করে যেসব বায়োমার্কার নির্ধারণ করা হয়েছে তা হয়তো প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে খাটে না। একেক জীবনধারার মানুষের জন্য প্রদাহ নির্ণয় ও চিকিৎসার পদ্ধতিও আলাদা হতে পারে।
আরও পড়ুন- জলের নীচে দুর্দান্ত সাঁতারু এই ৭ পাখি, দেখলে অবাক হবেন!
এই গবেষণা আমাদের শেখায় যে বার্ধক্য ও তার সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যসমস্যাগুলি শুধুমাত্র জৈবিক নয়, বরং জীবনযাত্রার প্রতিফলন। ভবিষ্যতের চিকিৎসাব্যবস্থা এবং গবেষণা কেবল ধনী, নগর সমাজে সীমাবদ্ধ না রেখে আরও বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো দরকার। আমাদের উচিত পরিবেশ ও জীবনযাপনকে মাথায় রেখে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ নির্ধারণ করা এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।