শ্রাবণ মাসে অমাবস্যার পর একাদশী। সেখানে থেকে রাখিপূর্ণিমা। এই পাঁচ দিন ধরে ঝুলনযাত্রা পালন করা হয়। হোলি এবং জন্মাষ্টমীর পাশাপাশি বৈষ্ণবদের অন্যতম পবিত্র অনুষ্ঠান এই ঝুলন। এর পূর্ণিমাকে শ্রাবণী পূর্ণিমাও বলে। বৃন্দাবনে রাধা-শ্রীকৃষ্ণের প্রেমলীলা ঘিরে দ্বাপরযুগে এই ঝুলন উৎসবের সূচনা হয়েছিল।
হিন্দু শাস্ত্রমতে, তারপর থেকে যুগ যুগ ধরে ঝুলন উৎসব চলে আসছে। হিন্দু শাস্ত্রমতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপরযুগে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। নন্দের বাড়িতে থাকাকালীন এবং বৃন্দাবনে তিনি নানা লীলা করেন। কিশোর কৃষ্ণ ও রাধারানির প্রেমের পরিপূর্ণ প্রকাশ বৃন্দাবনে ঘটেছিল। তারই অংশ ঝুলনযাত্রা।
বৈষ্ণব শাস্ত্রমতে একবার ব্রজের গোপীরা সেজেগুজে রাধাকুঞ্জের পাশে কুঞ্জবনে এসেছিলেন। সেখানে তাঁরা রাধাকৃষ্ণকে দোল খাওয়াবেন বলে জড় হয়েছিলেন। কৃষ্ণ তাঁর মনের মাধুরী দিয়ে রাধাকে সাজিয়েছিলেন একেবারে নিজের বেশে। রাধার হাতেও দিয়েছিলেন বাঁশি। গোপীরা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, তাঁরা একের বদলে সেখানে দু'জন কৃষ্ণকে দেখতে পাচ্ছিলেন। তাঁরা রাধাকে না-পেয়ে নানা পরীক্ষার পর কৃষ্ণকেই রাধা মনে করেন। তাঁকে নিয়েই দোলনার কাছে যান।
কৃষ্ণের মত পুরুষালি চেহারা কী করে তাঁর তৈরি হল, রাধা ভেবে কৃষ্ণকেই সে প্রশ্ন করেন। কথিত আছে কৃষ্ণ রাধার কণ্ঠে জবাব দিয়েছিলেন, তাঁর ওপর মন্ত্রপূত জল ফেলে কৃষ্ণ এরকম পুরুষালি চেহারা করে দিয়েছেন। তিনি আসলে রাধা। গোপীদের ছলনা করে কৃষ্ণ আরও জানিয়েছিলেন, তাঁর ওপর যখন মন্ত্রপূত জল দেওয়া হচ্ছিল, সেই সময় তিনি মুখ বন্ধ করে ছিলেন, তাই গলার স্বর বদলায়নি।
এরপর গোপীদের একে একে আড়ালে নিয়ে গিয়ে কৃষ্ণ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি রাধা নন। আবার যোগমায়াবলে গোপীদের সেসব কথা ভুলিয়েও দিয়েছিলেন কৃষ্ণ। এতে সব ভুলে গোপীরা কৃষ্ণরূপী রাধার কাছে অনুনয় করেছিলেন, তিনি যেন রাধারূপী কৃষ্ণকে রাধার চেহারা ফিরিয়ে দেন। রাধাই এরপর গোপীদের কৃষ্ণের ছলনা ধরিয়ে দেন। গোপীদের ভুল ভাঙে। দোলা তৈরিই ছিল। এরপর সখীরা রাধাকৃষ্ণকে সেই দোলায় বসিয়ে দোল খাইয়েছিলেন।
ঝুলনে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি ঝুলনায় রেখে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে দোল খাওয়ানো রীতি। বৈষ্ণব শাস্ত্রমতে, শ্রীকৃষ্ণ হলেন পুরুষ। আর, রাধা প্রকৃতি এবং পুরুষের পরম ভক্তস্বরূপিণী। সূর্য যেহুতু পৃথিবীর সমস্ত শক্তির উৎস, তাঁর পূর্ব দিকে উদয় ও পশ্চিম দিকে অস্ত হয়। তাই ঝুলনে রাধাকৃষ্ণকে দোলানোও হয় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে।
আরও পড়ুন- জাগ্রত মন্দির, পূরণ হয় মনস্কামনা, যার সঙ্গে জড়িয়ে রানি শিরোমণির ইতিহাস
বৈষ্ণবমতে, কৃষ্ণকে পেতে গেলে রাধার উপাসনা অবশ্য কর্তব্য। রাধার কৃপা থাকলে অতি সহজেই কৃষ্ণকে লাভ করা যায়। আবার রাধার শক্তিতে কৃষ্ণ বলবান। তাই তাঁরা এক ও অভিন্ন। পাঁচ দিন এই ঝুলনযাত্রা চলে। এবছর ০৮ ভাদ্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৬ আগস্ট ২০২৩ সাল, শনিবার ঝুলনযাত্রা শুরু। শেষ হবে ১২ ভাদ্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৩০ আগস্ট, ২০২৩ সাল, বুধবার।