/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/15/vishwakarma-puja-1-2025-09-15-19-24-37.jpg)
Vishwakarma Puja: বাঙালি এবং অবাঙালি বিশ্বকর্মার আলাদা রূপ কেন?
Vishwakarma Puja: বাংলার উৎসব-পঞ্জিকায় ভাদ্র মাসের ৩১ তারিখে একটি আলাদা মাত্রা যোগ করেছে বিশ্বকর্মা পূজা। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা শুধু পুরাণকথার চরিত্র নন, তিনি আধুনিক শিল্পসংস্কৃতিরও দেবতা। তবে তাঁর রূপ নিয়ে বিতর্ক বহু পুরোনো। তিনি কি প্রবীণ সাদা দাড়িওয়ালা দেবশিল্পী, নাকি নবীন সুদর্শন তরুণ?
ঋগ্বেদে বিশ্বকর্মার উল্লেখ রয়েছে
ঋগ্বেদে বিশ্বকর্মার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে তিনি সৃষ্টিকর্তা, অনেকটা ব্রহ্মার মতোই। বৈদিক যুগে কোনও মূর্তি বা মন্দির না থাকলেও, পরবর্তীকালে তাঁর নানা রূপ গড়ে ওঠে। কোথাও বিশ্বকর্মা চার মুখের প্রবীণ দেবতা, কোথাও আবার দাড়ি-গোঁফওয়ালা গুরুগম্ভীর কারিগর। তাঁর বাহন ছিল রাজহাঁস, যা ব্রহ্মারও প্রতীক।
আরও পড়ুন- বিশ্বকর্মার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ হয়েছিল বেহুলার? জানুন সে কাহিনি
পৌরাণিক কাহিনিতে বিশ্বকর্মা স্বর্গলোক, লঙ্কা, দ্বারকা এবং ইন্দ্রপ্রস্থ নির্মাণ করেছেন। পুরীর জগন্নাথ মন্দির এবং দেবমূর্তির সঙ্গেও তাঁর নাম জড়িয়ে আছে। অর্থাৎ তিনি কেবল স্থপতি নন, দেবতাদের শিল্পী। ঊনবিংশ শতাব্দীর পর বাংলায় শিল্প বিপ্লব ও কারখানা স্থাপনের সঙ্গে এক নতুন চাহিদা তৈরি হয়। মেশিন, যন্ত্রপাতি এবং শিল্পশ্রমিকদের জন্য দরকার ছিল এক 'আধুনিক দেবতা'র। তখনই বাংলায় জনপ্রিয় হতে শুরু করে নবীন সুদর্শন বিশ্বকর্মা, যিনি চার হাতে যন্ত্রপাতি নিয়ে হাতির ওপর বসে আছেন। এ রূপটি আজকের কলকাতা, হাওড়া, দুর্গাপুর বা খড়গপুরের কারখানা অঞ্চলে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
আরও পড়ুন- পিরিয়ডসের ব্যথায় কাতর? কমাতে মানুন এই ৮ ঘরোয়া প্রতিকার
বিশ্বকর্মার প্রবীণ রূপ বলতে, সাদা দাড়ি-গোঁফওয়ালা, রাজহাঁস বাহন, গুরুগম্ভীর দেবতা। উত্তর ভারত, হিমাচল প্রদেশ এবং পশ্চিম ভারতে এই রূপই প্রচলিত। নবীন রূপে তিনি সুদর্শন তরুণ, কুঠার ও যন্ত্রপাতি হাতে, হাতির ওপর বসে আছেন। বাংলায় এই রূপেই দেবশিল্পীর পূজা হয়। এই দ্বন্দ্ব ইতিহাসবিদদেরও ভাবিয়েছে। তাঁদের ধারণা, স্থানীয় সংস্কৃতি ও সময়ের চাহিদা মিলিয়েই বিশ্বকর্মার রূপান্তর ঘটেছে।
আরও পড়ুন- ঘরেই দুর্দান্ত রান্না, সহজেই বানিয়ে ফেলুন হায়দরাবাদি গ্রিন চিকেন!
ব্রিটিশ পর্যবেক্ষক এম. এম. আন্ডারহিল উল্লেখ করেছিলেন যে একসময় বিশ্বকর্মার কোনও মূর্তি ছিল না। কেবল একটি কলসিকে প্রতীক রূপে পূজা করা হত। পরে বাংলায় যখন পূজা জমজমাট হয়ে ওঠে, তখন দেবশিল্পীর নবীন রূপ তৈরি হয়। আমেরিকান ইতিহাসবিদ জে গর্ডন মেল্টন ও ব্রিটিশ গবেষক আর্থার ম্যাকডোনেলের লেখাতেও বিশ্বকর্মার বিভিন্ন রূপের উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুন- দুর্গাষ্টমীর সন্ধি পূজা, এর আচার-ভোগে থাকে বিশেষত্ব, মেলে বিরাট সুফল
বিশ্বকর্মা পূজা শুধু দেবতার পূজা নয়। এ হল, শ্রমজীবী মানুষের উৎসব। চালক, মেকানিক, মিস্ত্রি, কারিগর, তাঁতি, শিল্পশ্রমিক—সবাই একত্রে এই পূজা করেন। একইসঙ্গে এই দিনে বহু ঘরে আরন্ধন বা রান্না পূজা পালন করা হয়, যেখানে রান্না বন্ধ রেখে মহিলারা বিশ্রাম পান। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম মহাকাব্য মনসামঙ্গল-এও বিশ্বকর্মার ভূমিকা আছে। দেবী মনসার চাপে তিনি বেহুলা-লখিন্দরের লোহার প্রাসাদে একটি ছিদ্র রাখেন, সেখান দিয়ে কালনাগিনী প্রবেশ করে লখিন্দরকে দংশন করেছিল। এখানেও দেবশিল্পী মানুষের ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
আজকের দিনে বাংলায় বিশ্বকর্মা পূজা শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—আসল বিশ্বকর্মার রূপ কোনটা? প্রবীণ সাদা দাড়িওয়ালা রাজহাঁস-বাহন, নাকি নবীন সুদর্শন হাতিবাহন দেবতা?
উত্তর হয়তো মানুষের বিশ্বাসেই লুকিয়ে আছে। সময় ও সমাজ যেমন চাইবে, দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা সেই রূপেই ধরা দেবেন তাঁর ভক্তদের সামনে।