কে এই জগন্নাথ? কী বলছে শাস্ত্র, জেনে নিন

জগন্নাথদেবের পুরোহিতদের মধ্যে ব্রাহ্মণদের পাশাপাশি রয়েছেন অব্রাহ্মণ দৈতাপতিরা।

জগন্নাথদেবের পুরোহিতদের মধ্যে ব্রাহ্মণদের পাশাপাশি রয়েছেন অব্রাহ্মণ দৈতাপতিরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
rath tatra 2022 west bengal mahesh mahishadal guptipara mayapur coochbehar

জগন্নাথ শব্দের অর্থ জগতের নাথ। হিন্দুদের অসংখ্য দেব-দেবী। কিন্তু, তার মধ্যে প্রধান হিন্দু দেবতা হলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর। তার মধ্যে বিষ্ণু এবং মহেশ্বরকেই জগতের নাথ বলেন হিন্দুরা। আর, সেই কারণেই প্রশ্ন জাগে যে জগন্নাথ আসলে কে, তিনি বিষ্ণু না মহেশ্বর? হিন্দু শাস্ত্রের মধ্যে প্রথমেই নাম আসে বেদের। বেদে জগন্নাথের কোনও উল্লেখ নেই। রামায়ণ এবং মহাভারতেও উল্লেখ নেই জগন্নাথের। তিনি বিষ্ণুর দশাবতারেরও অংশ নন। যদিও কিছু ওড়িয়া বইয়ে দাবি করা হয়েছে, বুদ্ধ নন। বিষ্ণুর নবম অবতার হলেন জগন্নাথ।

Advertisment

আবার শাক্তরা দাবি করেন, জগন্নাথ নাকি ভৈরব বা শিব। তিনি দেবী বিমলার ভৈরব। জগন্নাথ মন্দিরের পূজারিরাও শাক্ত সম্প্রদায়ভুক্ত। জগন্নাথ মন্দির চত্বরে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রয়েছে দেবী বিমলার মন্দির। এখানে দেবী সতীর নাভি পড়েছিল বলে মনে করা হয়। সেই পীঠের দেবীর নাম বিমলা। এখানে জগন্নাথকে নিবেদন করা উচ্ছিষ্টই বিমলা দেবীকে নিবেদন করা হয়। তারপরই ভোগ পায় মহাপ্রসাদের মর্যাদা। বিমলা মন্দিরে আশ্বিন মাসে ১৫ দিন ধরে দুর্গাপুজো হয়। মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পুজো করা হয় দেবীকে।

আরও পড়ুন- কবে থেকে পুরীতে শুরু হল রথযাত্রা, জানেন সেই ইতিহাস?

বাকি হিন্দু দেবতার মত জগন্নাথ মাটির মূর্তি নন। দেখতেও অন্যান্য হিন্দু দেবতার সঙ্গে তাঁর মিল নেই। তিনি কাঠের মূর্তি। যা দেখে গবেষকদের একাংশের দাবি, জগন্নাথ আসলে আদিবাসী দেবতা। ওড়িশার আদিবাসী শবররা ছিল বৃক্ষ উপাসক। তারা নিজেদের দেবতাকে বলত জগনাত। যা থেকে উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত জগন্নাথ শব্দের। এই গবেষকদের বক্তব্য, জগন্নাথদেবের পুরোহিতদের মধ্যে ব্রাহ্মণদের পাশাপাশি রয়েছেন অব্রাহ্মণ দৈতাপতিরা। যাঁরা নিজেদের শবররাজ বিশ্ববসুর বংশধর বলে দাবি করেন। এই বিশ্ববসুই প্রথমে জগন্নাথের পুজো করতেন। যা থেকে প্রমাণিত হয় যে জগন্নাথ আসলে আদিবাসী দেবতা।

Advertisment

আবার জগন্নাথদেবের পুরোহিতরা প্রতিবছর ভাদ্র মাসে তাঁকে বিষ্ণুর বামন অবতারের বেশে পুজো করেন। বার্ষিক রথযাত্রার সময়ও তাঁকে বামন রূপে পুজো করা হয়। বলা হয় দধিবামন। যদিও দারুব্রহ্ম রূপে জগন্নাথকে নৃসিংহ স্ত্রোত্র পাঠ করে পুজো করা হয়। শ্রীচৈতন্যদেব আবার জগন্নাথের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণকে খুঁজে পেয়েছিলেন। সেই হিসেবে জগন্নাথ যে আসলে কী এবং কী নন, তা নিয়ে বিস্তর মতভেদ আছে। ভক্তরা সেই জন্য কোনও যুক্তি-তর্কের মধ্যে না-ঢুকে জগন্নাথকে সর্বশক্তির আধার হিসেবেই ভাবতে ভালোবাসেন।

Durgapuja Jagannath Temple Jagannath Dev