জন্মদিনে তার জন্য এসেছিল ৬২ কেজির কেক। উদযাপনে শামিল ছিলেন হাজার দশেক মানুষ, ২০১২ সালের কথা। সে এক এলাহি আয়োজন। আর হবে নাই বা কেন? এ তো আর যে সে দিন নয়। ২০০ বছরের জন্মদিন বলে কথা। বলছি আসামের এক বট গাছের কথা। যার ছায়াতে বেড়ে ওঠা, তার জন্মদিনে তাকেই কিছুটা ভালো লাগা ফিরিয়ে দিতে উদযাপন করেন বরপেটার জালিখেতির গ্রামবাসীরা।
আরও সাত বছর পার করে এখন সে ২০৭। গাছের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ভাস্কর কলিতা বললেন, "আমাদের কাছে ওই বুড়ো গাছ খুব স্পেশাল। অনেকেই ভাবতে পারে, কেন একটা গাছকে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি? কিন্তু আমাদের কাছে এটা শুধু গাছ তো নয়। আর স্পেশাল না হলে জাপান কোরিয়া থেকে জ্ঞানীগুণীরা এই গাছ দেখতে আসতেন?"
আরও পড়ুন, ভয়াবহ! নিজের অজান্তেই প্রতি সপ্তাহে আপনি গিলছেন আস্ত একটা এটিএম কার্ড
বটগাছ দু'দশকে তার অসংখ্য শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে দিয়েছে গোটা গ্রাম জুড়ে। সেরকমই এক শাখা হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেল বছর খানেক আগে। কলিতা প্রথমটায় ভেবেছিলেন হয়তো ছত্রাকের জন্য। কিন্তু গ্রামের অভিজ্ঞরা ক্রমশ লক্ষ্য করেন, কালাদিয়া নদীর পাড়ের মাটি একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছে। নদী গ্রাস করে নিচ্ছে জালিখেতি গ্রাম। বটগাছের থেকে মাত্র ২০ মিটার ব্যবধানে এখন বইছে কালাদিয়া। এরকম চলতে থাকলে...। ভয়াবহতা বুঝে তাড়াতাড়ি প্রশাসনের কানেও তুলে দেওয়া হল খবর। কিন্তু যে দেশে গাছ কেটে গগনচুম্বী শপিং মল বানানোর নামই উন্নয়ন, সেখানে এক ২০০ বছরের বুড়ো বটগাছ বাঁচাতে প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে, এমন বিশ্বাস রাখতেও দুঃসাহস লাগে মনে।
অতএব জালিখেতির মানুষরাই এগিয়ে এলেন। ২০১২ সালের ৫ জুন (বিশ্ব পরিবেশ দিবস) ধুমধাম করে পালিত হল সে গাছের জন্মদিন। সংবাদমাধ্যম মাতামাতিও করল তা নিয়ে। কিন্তু ওই একটাই দিন। তারপর ভুলে গেছে সবাই। শুধু জালিখেতির মানুষ প্রতি বছর ৫ জুন নিজেদের মধ্যেই উদযাপন করে বুড়ো বটের আরও বুড়ো হওয়া।
আরও পড়ুন, খলনায়ক সেই বায়ু দূষণ, ভারতীয়দের গড় আয়ু কমছে ২.৬ বছর
স্থানীয়দের অনেকের বিশ্বাস, এই গাছের মধ্যেই দেবতার বাস, যিনি বাঁচিয়ে রেখেছেন গোটা জালিখেতি গ্রামটাকে। কিন্তু শুধু সেই বিশ্বাস থেকেও নয়, গ্রামের মানুষের মনের অনেকটা জুড়ে রয়েছে এই গাছ। পথ ভুলে গেলে আজীবন পথ দেখিয়েছে এই গাছ, কত সুখদুঃখের সঙ্গী হয়েছে, কত জীবনের পাঠ পেয়েছে এই বটের ছায়াতেই। কত রকম, কত পাখির ঘর হয়েছে এই গাছ। তার অস্তিত্ব সংকটে পাশে দাঁড়াবেন না জালিখেতির মানুষ? জীবন দিয়ে আগলে রাখবেন না তাঁদের শতাব্দী প্রাচীন অভিভাবককে?
বিশ্ব উষ্ণায়নের এই সময়ে বিশ্ববাসীকে একটু পরিবেশ সচেতন করে তোলার জন্য এক দল মানুষের আর্তি, অনুরোধ যখন হাহাকারে পরিণত হয়, তখন স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে, গোটা পৃথিবীটা যেন জালিখেতি হয়ে ওঠে খুব শিগগির।
Read the full story in English